চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যা ও সহিংসতার ঘটনায় দায়ের করা পাঁচটি মামলায় ইসকনের বহিষ্কৃত সাবেক সংগঠক চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার (৩ জুন) দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আবু বক্কর সিদ্দিক শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
পাঁচটি মামলা হলো- আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা মামলা এবং গত বছরের ২৬ নভেম্বরের ঘটনায় ভাঙচুর-হামলা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে পুলিশের করা তিনটি এবং আলিফের ভাই খানে আলমের করা আরেকটি মামলা।
চট্টগ্রাম আদালতের নির্দেশে চিন্ময়কে এসব মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। প্রতিটি মামলায় জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতিও নিয়েছে পুলিশ।
এ বিষয়ে চিন্ময়ের আইনজীবী অপূর্ব কুমার সাংবাদিকদের বলেন, ‘যেসব ঘটনার অভিযোগে এসব মামলা দায়ের করা হয়েছে, সে সময় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস এরই মধ্যে কারাবন্দি ছিলেন। তাই তিনি সরাসরি ওই ঘটনায় জড়িত ছিলেন না। তা ছাড়া তিনি লিভার সিরোসিসসহ জটিল অসুস্থতায় আক্রান্ত এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য জামিন প্রয়োজন ছিল।’
এর আগে গত বছরের ২৫ নভেম্বর রাতে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। পরদিন (২৬ নভেম্বর) তাকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
কিন্তু সেই নির্দেশ ঘিরেই চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় তার অনুসারীরা তাণ্ডব চালায়। তারা প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে প্রিজনভ্যান অবরুদ্ধ রাখে। একপর্যায়ে পুলিশ ও বিজিবি লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ওই সময় থেকেই সংঘর্ষ শুরু হয়, যা পরে ছড়িয়ে পড়ে চট্টগ্রাম শহরের লালদিঘীরপাড় থেকে কোতোয়ালি থানা এলাকায়।
এ সময় ইট-পাটকেল ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় বিক্ষোভকারীরা। সহিংসতার মধ্যে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
এ হত্যাকাণ্ড সারা দেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। পরে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে চিন্ময়সহ একাধিক জনকে অভিযুক্ত করে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়।
চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) মো. রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী বলেন, ‘ঢাকা থেকে আসা আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করলে আমরা আদালতে এই মামলাগুলোর গুরুত্ব ও প্রমাণাদি তুলে ধরি। আদালত শুনানি শেষে পাঁচটি মামলাতেই জামিন নামঞ্জুর করেন।’
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস আগে হিন্দু ধর্মীয় সংগঠন ইসকনের একজন সংগঠক ছিলেন। ইসকন তাকে বহিষ্কার করার পর তিনি ‘সনাতনী জাগরণ জোট’ নামে একটি সংগঠনের মুখপাত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।
তার অনুসারীদের আচরণ ও সহিংসতার ধরন নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রশ্ন তুলেছে- এটি শুধুই ধর্মীয় আদর্শবাদ না কি সংগঠিত চরমপন্থি অপতৎপরতা?
চিন্ময়ের বিরুদ্ধে দায়ের মামলাগুলোর তদন্ত এখনো চলমান। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই মামলাগুলো শুধু একজন ব্যক্তির নয়, একটি সম্ভাব্য উগ্র গোষ্ঠীর কার্যকলাপ উদ্ঘাটনের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :