বাংলাদেশ বিমানের কেবিন ক্রু খাদিজা সুলতানা শিমুর (বিমান পিন: ৫৩৪২৯) বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন, ‘হানি ট্র্যাপ’ ও ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে প্রায় ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলাটি উত্তরা পশ্চিম থানায় দায়ের করা হয়েছে (মামলা নম্বর: সিআর-১২১২/২৫) এবং ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বিষয়টি তদন্তের জন্য থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
ঘটনার সূত্রপাত
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালে ফেসবুকে এয়ারক্রাফট মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার এক ব্যক্তি শিমুর সঙ্গে পরিচয় হয়। পরিচয়ের পর তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় এবং উত্তরার একটি রেস্টুরেন্টে তারা প্রথমবার দেখা করেন। শিমু বাদীর পরিবারের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে নিজেকে ভবিষ্যতের পুত্রবধূ হিসেবে পরিচয় করান। উভয় পরিবারের মধ্যে সম্পর্কটি তখন প্রকাশিত ছিল।
বিয়ের আশ্বাসে অর্থ আত্মসাৎ
সম্পর্ক গভীর হওয়ার পর শিমু বাদীকে বিয়ের আশ্বাস দেন। এ বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে তিনি বিভিন্ন সময়ে নগদ টাকা, ব্যাংক ট্রান্সফার, মোবাইল ব্যাংকিং, ঘর সাজানোর ফার্নিচার, ফ্ল্যাগশিপ মোবাইল, কসমেটিকস এবং শপিংয়ের বিল পরিশোধের মাধ্যমে ধাপে ধাপে অর্থ হাতিয়ে নেন। অভিযোগ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর নিজের জন্মদিনে শিমু ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার একটি হীরার আংটিও গ্রহণ করেন এবং একই দিনে বিয়ের প্রতিশ্রুতি পুনরায় দেন।
পরবর্তীতে শিমু প্রস্তাব দেন, বিয়ের সম্পূর্ণ খরচ বাদীকে বহন করতে হবে এবং তা অনুষ্ঠানের আগেই পরিশোধ করতে হবে। এই অনুযায়ী বাদী ১৬ লাখ ২৪ হাজার ৫১১ টাকা প্রদান করেন। এ ছাড়া আরও ৪ লাখ টাকার নগদ গ্রহণ করা হয়। হীরার আংটিসহ মোট আত্মসাৎকৃত অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ২১ লাখ ৭৪ হাজার ৫১১ টাকা।
প্রতারণা, ব্ল্যাকমেইল ও হুমকি
অর্থ গ্রহণের পর শিমুর আচরণে পরিবর্তন আসে। বাদীর পরিবার বিয়ের দিন নির্ধারণের প্রস্তাব দিলে শিমু বিভিন্ন অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করেন। একপর্যায়ে সরাসরি বিয়ে করতে অস্বীকার করেন। এসময় শিমু ও তার মা অতিরিক্ত ১০ ভরি স্বর্ণালংকার ও আরও অর্থ দাবি করেন।
বাদী আরও অভিযোগ করেছেন, শিমু হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জারে আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও চাইতেন এবং পরে তা ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করেন। মামলার এজাহারে উল্লেখ আছে, শিমু আধুনিক ‘হানি ট্র্যাপ’ ও ‘থার্স্ট ট্র্যাপ’ কৌশল ব্যবহার করে বাদীকে বিয়ের ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায় করেছেন।
আইনি প্রক্রিয়া ও তদন্ত
প্রতারণার শিকার হওয়া বাদী প্রথমে পারিবারিকভাবে বিষয়টি সমাধান করতে চেষ্টা করেন, কিন্তু ব্যর্থ হন। এরপর ব্যাংক স্টেটমেন্ট, অর্থ লেনদেনের রসিদ এবং সাক্ষীর প্রমাণসহ আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত অভিযোগ ও প্রমাণপত্র পর্যালোচনা করে দণ্ডবিধির ৪২০ (প্রতারণা), ৪০৬ (বিশ্বাসভঙ্গ) এবং ৫০৬ (ফৌজদারি ভীতি প্রদর্শন) ধারায় মামলা গ্রহণ করে উত্তরা পশ্চিম থানাকে তদন্তের নির্দেশ দেন।
অভিযুক্তের প্রতিক্রিয়া
বিমানবালা খাদিজা সুলতানা শিমুর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো উত্তর দেননি। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।