সংকটে পড়া দেশের পাঁচটি বেসরকারি ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। রিটে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থসচিবসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) সাধারণ বিনিয়োগকারী শহিদুল ইসলামের পক্ষে ব্যারিস্টার মাহসিব হোসাইন এ রিট আবেদন দায়ের করেন।
এর আগে গত ৯ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক—এই পাঁচ সংকটে পড়া বেসরকারি ব্যাংককে একীভূত করার প্রস্তাব অনুমোদন করে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই পাঁচ ব্যাংককে নিয়ে একটি নতুন শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক গঠন করা হবে। নতুন ব্যাংকের জন্য ‘ইউনাইটেড ইসলামিক ব্যাংক’ ও ‘সম্মিলিত ইসলামিক ব্যাংক’—এই দুটি নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। ব্যাংকটি বাণিজ্যিকভাবে ও পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে পরিচালিত হবে।
তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠক শেষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, ব্যাংকগুলো একীভূত করার ফলে কেউ চাকরি হারাবেন না এবং কোনো আমানতকারী তার আমানত হারাবেন না।
নতুন ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন হবে ৪০ হাজার কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন থাকবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। পাঁচ ব্যাংকের সব দায় ও সম্পত্তি গ্রহণ করেই নতুন ব্যাংক তার কার্যক্রম পরিচালনা করবে। পরিশোধিত মূলধনের মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা সরকার দেবে—এর মধ্যে ১০ হাজার কোটি টাকা নগদে এবং বাকি ১০ হাজার কোটি টাকা সুকুক বন্ড ছাড়ার মাধ্যমে সংগ্রহ করা হবে। সুকুক হলো শরিয়াহভিত্তিক ইসলামী বন্ড, যা সুদযুক্ত বন্ডের বিকল্প; আরবি শব্দটির অর্থ আইনি দলিল বা চুক্তিপত্র।
এ ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের শেয়ার দিয়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা মূলধনে রূপান্তর করা হবে বেইল-ইন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। রেজল্যুশন পরিকল্পনা অনুযায়ী পরে সে অর্থ আমানতকারীদের ফেরত দেওয়া হবে। বেইল-ইন এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে আমানতকারী ও অন্যান্য পাওনাদারের ঋণের একটি অংশ বাতিল হয়ে শেয়ারে রূপান্তরিত হয়।
নতুন ব্যাংকটি প্রাথমিকভাবে রাষ্ট্রমালিকানাধীন থাকবে। পরে ধাপে ধাপে এর মালিকানা বেসরকারি খাতে হস্তান্তর করা হবে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, পাঁচ বছরের মধ্যে ব্যাংকটি পুরোপুরি বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে, নতুন ব্যাংকটি সরকারি মালিকানায় যাওয়ায় গ্রাহকদের আতঙ্ক কমে আসবে এবং ক্ষুদ্র আমানতকারীদের দাবি দ্রুত পরিশোধ করে তাদের আস্থা পুনরুদ্ধার করা যাবে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন