বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে রিকশা ও ইজিবাইকের জন্য ভাড়া নির্ধারণ করা হলেও তা মেনে চলছেন না অধিকাংশ চালক।
সম্প্রতি ভাড়া নিয়ে শিক্ষার্থী ও রিকশাচালকদের মধ্যে বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটতেও দেখা গেছে।
জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ৫ ফেব্রুয়ারি রিকশা ও অটোরিকশার ভাড়া নির্ধারণ করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু রিকশাচালকদের স্বেচ্ছাচারিতায় ভাড়া নিয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কেআর মার্কেট থেকে প্রশাসনিক ভবন, টিএসসি, হেলথ কেয়ার সেন্টার, করিম ভবন, ঈশা খাঁ হল, শহীদ জামাল হোসেন হল, শেষ মোড়, শহীদ নাজমুল আহসান হল, আশরাফুল হক হল, শহীদ শামসুল হক হল, কৃষি সম্প্রসারণ ভবন পর্যন্ত রিকশা ভাড়া ১০ টাকা এবং অটোরিকশার ভাড়া ৫ টাকা নির্ধারণ করে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ওই নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা টানিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু নির্ধারিত ভাড়া মেনে চলছেন না চালকরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রশাসনের পর্যাপ্ত নজরদারির অভাবেই ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
কয়েক দিন ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, শিক্ষার্থী ও রিকশাচালকদের মধ্যে প্রায়ই ভাড়াকে কেন্দ্র করে কথা-কাটাকাটি ও বাকবিতণ্ডা হয়। রিকশাচালকদের বড় একটি অংশ নির্ধারিত ভাড়া মানতে নারাজ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. মুরসালিন বলেন, ময়মনসিংহ শহরের সঙ্গে মিলিয়ে ক্যাম্পাসে অনেক রিকশাচালক ভাড়া দাবি করেন। কিন্তু ময়মনসিংহ শহরে চলাচলে প্রচুর যানজট মোকাবিলা করতে হয়। এক জায়গাতেই অনেকক্ষণ বসে থাকতে হয়। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে কোনো যানজট নেই।
তিনি বলেন, প্রশাসন নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা অবশ্যই দূরত্ব পরিমাপ করেই দিয়েছে। তাই রিকশাচালকদের শহরের সঙ্গে তুলনা করে ভাড়া চাওয়া উচিত নয়।
শিক্ষার্থী সোহান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেআর মার্কেট হতে শেষ মোড় পর্যন্ত রিকশা ভাড়া ১০ টাকা নির্ধারিত হলেও আমার কাছে দ্বিগুণ ভাড়া দাবি করেন রিকশাচালক। কিন্তু এটুকু পথ মোটেও ২০ টাকার ভাড়া নয়।
তিনি বলেন, প্রশাসন যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে চলাচলের জন্য নির্দিষ্ট রিকশার ব্যবস্থা করে, তাহলে আমরা এই ভোগান্তি থেকে সহজেই মুক্তি পাব।
রিকশাচালক মো. কমল বলেন, প্রশাসন একটা ভাড়া ঠিক করে দিয়েছে, কিন্তু সেটা আমাদের খরচ অনুযায়ী যথেষ্ট না। এই বাজারে ভাড়া ১০ টাকায় চলে না। চারপাশে জিনিসপত্রের যে দাম তাতে প্রশাসনের ঠিক করা ভাড়ায় চলা খুবই কঠিন। ময়মনসিংহ শহরে ২০ টাকার নিচে রিকশা ভাড়া নেই।
বাকৃবির সহযোগী ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করেই বর্তমান প্রশাসন ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে রিকশা ও অটোরিকশা ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে। ক্যাম্পাসের বাইরে থেকেও অনেক রিকশা ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রবেশ করে এবং ভাড়া নিয়ে ঝামেলা করে।
তিনি আরও বলেন, ক্যাম্পাসের মধ্যেই যারা নিয়মিত রিকশা চালায় তাদের আরও মোটিভেট করার চেষ্টা করব। তবে অনেক সময় বৃষ্টি বা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় রিকশা ভাড়া বেশি চাওয়া হয়, শিক্ষার্থীদেরও সেই সময় মানবিক হতে হবে।
সাইফুল্লাহ বলেন, যেহেতু বিষয়টি শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক, তাই আমরা রিকশাচালকদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। শীঘ্রই বিষয়টি সমাধান করব।