ঢাকা শুক্রবার, ১৬ মে, ২০২৫

অশ্লীলতা ছড়ানোর অভিযোগে শিক্ষিকার পদত্যাগ দাবি

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: মে ১৫, ২০২৫, ০৪:৫১ পিএম
ছবি-সংগৃহীত

মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউটের সংগীত শিক্ষিকা বিপাশা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের ছবি নগ্ন করে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য লিখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া অভিযোগ উঠেছে।

একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, শিক্ষার পরিবেশ নষ্টসহ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলার অভিযোগে ওই শিক্ষিকার পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা প্রধান শিক্ষক জিনাত ফারহানাকে অবরোধ করে আন্দোলন করেন। 

বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিপাশা ইয়াসমিনের পদত্যাগসহ চলমান সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান চেয়ে প্রধান শিক্ষককে অবরুদ্ধ করে রাখেন।

পরবর্তী সময়ে মিরপুরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিবেশ শান্ত করেন। তারা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির সঙ্গে কথা বলা শেষে দ্রুতই বিপাশা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে শিক্ষার্থীদের জানান।  

এ বিষয়ে অভিভাবকরা বলেন, ‘চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন পার করছি। জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কিছু শিক্ষক অসদুপায় ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে শিক্ষার পরিবেশ চরমভাবে বিঘ্নিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে সংগীত শিক্ষিকা বিপাশা ইয়াসমিনের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানের ভেতরে-বাইরে বিশৃঙ্খলাসহ সহিংসতা সৃষ্টি করছেন।’

তারা আরও বলেন, ‘বিভিন্ন সময় তাদের সন্তানদের তার (বিপাশা) পক্ষে আন্দোলনসহ কাজ করার জন্য হুমকি দিয়ে আসছেন। মেয়েদের ছবি অশ্লীল করে খারাপ ক্যাপশন ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে।’ 

তারা বলেন, ‘বর্তমানে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং অবিভাবকদের সম্মান হুমকির মুখে ফেলছেন এ শিক্ষিকা। অনেক ক্ষেত্রে নারী শিক্ষার্থীদের ওপর শারীরিক নিপীড়নের ঘটনাও ঘটিয়েছেন তিনি। যার প্রমাণ থাকার পরও বিভিন্ন সময় আমরা ও শিক্ষার্থীরা অভিযোগ দিলেও কোনো সুষ্ঠু সমাধান হচ্ছে না। যা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও দুঃখজনক।’

এক অভিভাবক অভিযোগ করেন, ২৪-এর ৫ সেপ্টেম্বর বিপাশা ইয়াসমিন ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানে সহিংসতা চালান। প্রধান শিক্ষককে শারীরিকভাবে আক্রমণের চেষ্টা করেন। সে সময় বিপাশার সহযোগী সাজেদা খাতুন এক অভিভাবককে মারধর করে মাটিতে ফেলে দেন। ঘটনার ভিডিও ধারণ করলে বিপাশা মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে সেই অভিভাবককে বেধড়ক মারধর করেন। সেই অভিভাবক উকিল নোটিশ পাঠালে বিপাশা তাকে হত্যার হুমকি দিতে থাকেন।

শিক্ষকরা দাবি করেন, বিপাশা ইয়াসমিন অভিভাবকদের অজ্ঞাতসারে শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানের বাইরে নিয়ে গিয়ে থানায় হাজির করেন এবং নিরীহ পুরুষ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মিথ্যা অভিযোগ এনে মামলা করান। এর ফলে শুধু প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তিই নয়, নির্দোষ শিক্ষকদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনও চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, বিপাশা জুলাই অভ্যুত্থানের আগে ছিল আওয়ামী লীগ নেতা ইলিয়াস মোল্লার কাছের লোক। বর্তমানে বিএনপির নেত্রী বনে গেছেন। তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীর জন্য বিপজ্জনক। যেসব ছাত্রী তার কাছে নাচ-গান শেখে, তাদের কুপরামর্শ দিয়ে থাকেন। যার ফলে চারিত্রিকভাবে বিপথগামী হয়ে পড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে। একই সঙ্গে যারা তার কাছে নাচ-গান শিখতে রাজি হন না, তাদের নানাভাবে ভীতি প্রদর্শন ও হেনস্তা করেন।   

শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমাদের বন্ধু ইংরেজি ভার্সনের ছাত্রী। তার ছবি ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অশ্লীলভাবে ছড়িয়ে দেন বিপাশা ম্যাডাম। যার ফলে আমাদের ওই বন্ধু অনেকবার আত্মহত্যার চেষ্টাও করে। যে কাজ করছেন তিনি তার শাস্তি দাবি করছি আমরা। একই সঙ্গে তাঁকে আমরা আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দেখতে চাই না, যদি তিনি প্রতিষ্ঠানে ঢোকেন, সে ক্ষেত্রে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করব।’ 

প্রধান শিক্ষক জিনাত ফারহানা বলেন, যে ক্রিয়া-কলাপ শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়, অবশ্যই আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের কমিটির জরুরি মিটিং আয়োজন করে খুব দ্রুতই ব্যবস্থা গ্রহণ করব। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে সচেতন রয়েছি আমরা। একই সঙ্গে বিষয়টি মিরপুরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতারা অবগত রয়েছে। তারাও আমাদের জানিয়েছেন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং পড়ার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সর্বাত্মক সাহায্য করবে।’