ঢাকা রবিবার, ০৩ আগস্ট, ২০২৫

৩৫ বছর পর রাকসু নির্বাচন, ছাত্রদল সরব-শিবির এখনো সিদ্ধান্তহীন

রাবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২৫, ০১:০৫ পিএম
ছবি- সংগৃহীত

দীর্ঘ ৩৫ বছরের অচলাবস্থার অবসান ঘটিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে বহুল প্রত্যাশিত এ নির্বাচন। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই ক্যাম্পাসে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে ভোটের আমেজ। ছাত্রসংগঠনগুলো ব্যস্ত সময় পার করছে সাংগঠনিক প্রস্তুতি ও কর্মপরিকল্পনা তৈরিতে। শিক্ষার্থীরাও যোগ্য নেতৃত্ব বাছাইয়ে নানা সমীকরণ মিলিয়ে দেখছেন।

এবারের রাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল একক প্যানেল নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবে বলে জানিয়েছে। তবে ছাত্রশিবির এখনো একক না সম্মিলিতভাবে নির্বাচন করবে, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়করা এক ছাতার নিচে আসার চেষ্টা করলেও তা এখনো সফল হয়নি। তবে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে সম্মিলিতভাবে নির্বাচন করার পরিকল্পনা করছে।

নির্বাচন নিয়ে ছাত্রশিবির ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করা হলেও ছাত্রদল ও গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে।

ছাত্রদলের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি নির্দিষ্ট দলের হয়ে কাজ করছে, ফলে সব দলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত হচ্ছে না।

গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট বলছে, রাকসুর ভোটকেন্দ্র আবাসিক হলে স্থাপন করায় নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

তারা দাবি জানিয়েছে, ভোটকেন্দ্র একাডেমিক ভবনে স্থানান্তর করা হোক, যাতে সব শিক্ষার্থী নিরাপদে ও নিরপেক্ষভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৫৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ১৯৫৬-৫৭ মেয়াদে প্রথম রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তখন এর নাম ছিল রাজশাহী ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (রাসু)। আইয়ুব খানের শাসনামলে এর কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও ১৯৬২ সালে ‘রাকসু’ নামে পুনরায় যাত্রা শুরু করে। এরপর মোট ১৪ বার রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৮৯-৯০ মেয়াদে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী, রাকসু শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তৃতা, লিখন, বিতর্কসহ বিভিন্ন বিষয়ে আগ্রহ সৃষ্টি এবং দক্ষ, দায়িত্বশীল নাগরিক ও নেতৃত্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করবে। এছাড়াও মানবিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ড আয়োজনে ভূমিকা রাখবে।

শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। এ অবস্থায় কীভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব? আমরা চাই, প্রশাসন সকল ছাত্রসংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করুক।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের যে পরিমাণ নেতাকর্মী রয়েছে, তা দিয়ে একাধিক প্যানেল দেওয়া সম্ভব। তবে আমরা একটি একক প্যানেল দিচ্ছি। রাকসু হলো শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি। এটি জাতীয় নেতৃত্ব তৈরির একটি প্ল্যাটফর্ম এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।’

শাখা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর রাকসুর তফসিল ঘোষণায় আমরা আনন্দিত। ছাত্রশিবির অবশ্যই নির্বাচনে অংশ নেবে। একক না সম্মিলিত প্যানেল হবে, তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। সময় হলে জানানো হবে।’

গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের অবস্থান জানতে চাইলে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল বলেন, ‘আমরা রাকসুতে অংশ নিচ্ছি। তবে কিছু আপত্তি রয়েছে। ভোটকেন্দ্র আবাসিক হলে নির্ধারণ করায় নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বর্তমানে ক্যাম্পাসে দখলদারিত্বের প্রবণতা বাড়ছে। তাই আমরা চাই ভোটকেন্দ্র একাডেমিক ভবনে সরিয়ে নেওয়া হোক।’

তিনি আরও জানান, ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে মিলে একটি নতুন ব্যানারে সম্মিলিত প্যানেল দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।’

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন, ‘৩৫ বছর পর রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, এটি নিঃসন্দেহে আশাজাগানিয়া। আমরা সমন্বয়করা একটি প্ল্যাটফর্ম গঠনের চেষ্টা করছি। সেটি সফল না হলে অন্য শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্যানেল দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’