বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রাক্তন শিক্ষার্থী প্রকৌশলী রোকনুজ্জামান রোকনকে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে ও প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলনের তিন দফা দাবিতে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ সমাবেশ ও ‘ব্লকেড কর্মসূচি’ পালন করেছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) বিকেল ৫টার দিকে শহরের লাল দীঘির মাঠ এলাকায় জেলা প্রশাসক অফিসের সামনে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
জানা যায়, গত ২৫ আগস্ট বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত স্মারকলিপি প্রদানের পর বেরোবির শিক্ষার্থীরা চলে গেলে ফেরদৌস অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম হোসেন (প্রকৌশল ডিপ্লোমাধারী) তার কক্ষে প্রকৌশলী রোকনুজ্জামান রোকনকে ডেকে নেন। সেখানে উপস্থিত ২০-২৫ জন প্রকৌশল ডিপ্লোমাধারী কর্মচারী-কর্মকর্তা, যাদের মধ্যে সহকারী প্রকৌশলী মাজেদুল, সহকারী প্রকৌশলী সারোয়ার জামান সাইদ, উপ-সহকারী প্রকৌশলী লিয়াকত, সাদ্দাম ও গোলাম কিবরিয়া সোহান ছিলেন—তারা রোকনকে ঘিরে ধরে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে এবং হত্যার হুমকি দেন।
এমন ঘটনার প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভের পাশাপাশি হুমকিদাতাদের শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে আজ চট্টগ্রামে জেলা প্রশাসক অফিসের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ পালন করেন চুয়েটের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে প্রায় ৯টি বাসে করে হাজারখানেক শিক্ষার্থী এতে অংশগ্রহণ করেন।
এ সময় তারা কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘২৪-এর বাংলায়, ডিপ্লোমা কোটার ঠাঁই নাই’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, প্রকৌশল সমাজ জেগেছে’, ‘১,২,৩, ৪ ডিপ্লোমা তুই কোটা ছাড়’ শীর্ষক স্লোগান দেন।
এ সময় আন্দোলনরত পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রবিউল আউয়াল রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ডিপ্লোমা সিন্ডিকেটের প্রভাবে দেশের প্রকৌশল খাত আজ ধুঁকছে। আমরা এর শেষ দেখতে চাই। গত ছয় মাস ধরে আমরা আন্দোলন করছি, এখনো সুরাহা না মেলায় আমরা হতবাক। এবার মাঠে নেমেছি ক্লাস-ল্যাব বর্জন করে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত মাঠেই থাকব।
কম্পিউটার ও বিজ্ঞান কৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আদিল রায়হান বলেন, “দেশের শ্রমজীবী- রিকশাওয়ালাদের টাকায় আমরা পড়াশোনা করি। আমরা বিশ্বাস করি ‘২৪-পরবর্তী বাংলাদেশে কোনো কোটা থাকতে পারে না। হাসিনা পরবর্তী এই সরকার এসেছে শহীদদের রক্তের বিনিময়ে। যদি এ সরকারও কোটা প্রশ্রয় দিয়ে থাকে, আমরা আমাদের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমরা আজ ৪০ কিলোমিটার দূর থেকে আন্দোলনে এসেছি। দরকার হলে ২০০-৩০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ঢাকায়ও যেতে পারব। তবু কোনোভাবে অন্যায়কে প্রশ্রয় দিব না।’
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ইফতেখার মাহমুদ বলেন, ‘দশম গ্রেডকে ডিপ্লোমা সিন্ডিকেট কুক্ষিগত করে রেখেছে। আমার সবাই দশম গ্রেডে পরীক্ষা দিতে চাই। আজ তারা এ দেশের মেধাবীদের হুমকি দেয়। আমতা এর শেষ দেখে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এই ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদস্বরূপ আমরা আজ বিভাগীয় কমিশনাররের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছি। তারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। সবাইকে বলতে চাই, রোকন ভাইকে যারা জীবননাশের হুমকি দিয়েছে, তাদের ব্যাপারে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকব।’
উল্লেখ্য, গত বেশ কয়েক মাস ধরেই চাকরিক্ষেত্রে প্রকৌশলীদের বৈষম্যের প্রতিবাদে ৩ দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন চুয়েটসহ সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবিগুলো হলো: নবম গ্রেডে নূন্যতম যোগ্যতা বিএসসি রেখে পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ, দশম গ্রেডকে কোটামুক্ত করে বিএসসিদের জন্য সুযোগ করে দেওয়া এবং বিএসসি ছাড়া যেন কেউ প্রকৌশলী পদবি ব্যবহার না করতে পারে তা নিশ্চিত করা।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন