রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসের মতো রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজেও নতুন মাত্রায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে ছাত্র সংগঠনগুলো। তবে এবার তাদের কার্যক্রমে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন এক ধারা। শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যা সমাধান ও ক্যাম্পাসবান্ধব উদ্যোগে মাঠে নেমেছে ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরসহ অন্যান্য সংগঠন।
গরমে ক্যান্টিনে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রিমু হোসেন নিজ উদ্যোগে ক্যান্টিনে তিনটি ফ্যান স্থাপন করেন। কলেজের প্রধান ফটকে পানির ফিল্টার বসান যুগ্ম আহ্বায়ক জিহাদ হাওলাদার। ক্যান্টিন ও অপরাজিতা ছাত্রীনিবাসে শিক্ষার্থীদের জন্য পানির ফিল্টার স্থাপন করেন ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জলিল আদিক।
এ ছাড়া অপরাজিতা ছাত্রীনিবাসের লিফটে ফ্যানের অভাবে দীর্ঘদিন কষ্টে থাকা আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য ফ্যান স্থাপন করেন ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নোবেল ইসলাম সূর্য। পাশাপাশি অর্থাভাবে ফরম পূরণে অক্ষম দুই শিক্ষার্থীকে আর্থিক সহায়তাও দেন তিনি।
ছেলেদের শহীদ মামুন ছাত্রাবাসের দুটি লিফটে ফ্যান স্থাপন করেন কলেজ ছাত্রদলের আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজ। ক্যাম্পাসে পাখিদের সুরক্ষায় গাছে গাছে মাটির হাঁড়ি ঝুলিয়ে দেন যুগ্ম আহ্বায়ক টিপু সুলতান।
এদিকে, ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প আয়োজন করা হয়, যেখানে শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। এ ছাড়া ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। কিছু অসহায় শিক্ষার্থীর বিনামূল্যে আবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করে সংগঠনটি। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও ক্যারিয়ার গাইডলাইন সম্পর্কিত সভা আয়োজনও তাদের কর্মসূচির অংশ।
সম্প্রতি শুরু হওয়া ২৩-২৪ সেশনের চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য পরীক্ষার্থীদের মাঝে ফাইল, কলম, পেন্সিল, স্কেলসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ বিতরণ করেন ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান রফিক, হাসান উল্লাহ মির্জা, মিরাজ আল ওয়াসি ও আহ্বায়ক সদস্য আলিম আল রেজওয়ানসহ অন্যান্য নেতারা।
এ ছাড়াও ক্যাম্পাসে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টসহ বিভিন্ন সংগঠন নিয়মিত শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ক্যাম্পাসে এখন রাজনৈতিক সংঘাতের বদলে কল্যাণমূলক কার্যক্রমের প্রতিযোগিতা চলছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ক্যাম্পাসে ইতিবাচক ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হবে।
এ বিষয়ে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান রিফাত বলেন, বর্তমানে ক্যাম্পাসে সংঘাত নয় বরং শিক্ষার্থীদের জন্য ইতিবাচক কিছু করার প্রতিযোগিতা চলছে। ফ্যান, ফিল্টার কিংবা মেডিকেল ক্যাম্প এসব উদ্যোগে আমরা সরাসরি উপকৃত হচ্ছি। যদি এ ধারা বজায় থাকে, তাহলে তিতুমীর কলেজ সত্যিই শিক্ষার্থীবান্ধব একটি ক্যাম্পাসে পরিণত হবে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিকুল ইসলাম ইমন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা দেখেছি ছাত্র সংগঠন মানেই মারামারি বা দখলদারি রাজনীতি। কিন্তু এখন তারা শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াচ্ছে, সমস্যার সমাধান করছে। এতে সাধারণ ছাত্ররা নতুন করে আশা দেখছে। আমরা চাই এই প্রতিযোগিতা শুধু সাময়িক না হয়ে দীর্ঘমেয়াদি হোক।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন