রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৫, ১২:১৬ পিএম

বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের দুর্নীতি উন্মোচন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৫, ১২:১৬ পিএম

দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে এই চারজনের বিরুদ্ধে।

দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে এই চারজনের বিরুদ্ধে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেখানে হওয়ার কথা জ্ঞান চর্চার কেন্দ্র, সেখানে বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ পরিণত হয়েছে দুর্নীতি আর লুটপাটের আখড়ায়। মোহাম্মদ এ জামান চার্টার্ড অ্যাকাউন্‌ট্যান্টসের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে কলেজের আয়-ব্যয়ের হিসাবে অসামঞ্জস্য, অতিরিক্ত মাত্রায় নগদ লেনদেন, খরচের ক্ষেত্রে সাপোর্টিং ডকুমেন্ট ও বিল ভাউচার না থাকা, শিক্ষকদের পদোন্নতি ও স্থায়ীকরণ, প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্রাচুইটি খাতে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য পাওয়া গেছে। সম্পদ ক্রয়-বিক্রয়, নিয়োগ ও পদোন্নতি প্রক্রিয়া এবং স্থানীয় সম্পত্তি ব্যবস্থাপনায় একাধিক ক্ষেত্রে নীতিমালা লঙ্ঘন, রেকর্ড সংরক্ষণের ত্রুটি, কলেজে আর্থিক ব্যবস্থাপনা, প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতার অভাব ও অনিয়ম বিদ্যমান। ফলে কলেজের শাখায় শাখায়, স্তরে স্তরে যেন অনিয়ম-দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে।

অবিশ্বাস্য কেনাকাটার কেলেঙ্কারি

রিপোর্টে দেখা যায়, ২০১৬ সালে কলেজে মাত্র ১৮০০ টাকার বৈদ্যুতিক পাখা কেনা হয়েছে ৫০০০ টাকায়। ২০০ টাকার সকেট কেনা হয়েছে ১২০০ টাকায়। পিয়ানো সুইচ ৭০০ টাকা এবং সুইচবোর্ড কেনা হয়েছে প্রায় চারগুন দামে অথচ বাস্তবে তদন্তে এসবের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। শুধু বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ক্রয় নয়, আসবাবপত্র ও জমি কেনাকাটায়ও ব্যাপক লুটপাট হয়েছে কলেজটিতে।

অননুমোদিত বিল ও ভাউচার

মোট ২ কোটি ১২ লাখ ১২ হাজার ৪১৯ টাকার ভাউচার পাওয়া গেলেও কোনো ভাউচারই স্বাক্ষরযুক্ত অনুমোদন করা হয়নি। এর মধ্যে নগদ দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ৩ লাখ ৭২ হাজার ৯১৪ টাকা।

ভাউচার ও সাপোর্টিং ডকুমেন্ট সংরক্ষণে অনিয়ম

২৯ কোটি ২২ লাখ ৭৭ হাজার ৯১৬ টাকার কোনো ভাউচার পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া ৪১ কোটি ১ লাখ ২৭ হাজার ৪৭২ টাকার কোনো সাপোর্টিং ডকুমেন্ট পাওয়া যায়নি। সাপোর্টিং ডকুমেন্ট যাচাই-বাছাইকালে কোনো চেকের কপি পাওয়া যায়নি। ফলে সংশ্লিষ্ট লেনদেনের যথার্থতা ও বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ।

মূলধন জাতীয় ব্যয়, রেকর্ডগত অসঙ্গতিসংক্রান্ত অনিয়ম

অনুমোদিত কাজের পরিমাণ ৪৫ লাখ ৮৮ হাজার ৬০৯ টাকা। সেখানে পরিশোধ করা হয়েছে ৫৫ লাখ ৯০ হাজার ৬২৫ টাকা। ফলে অতিরিক্ত অর্থ দেওয়া হয়েছে ১৬ লাখ ১৮ হাজার ৩৮৬ টাকা।

নির্মাণকাজে দুর্নীতি

২০১৬ থেকে ২৪ সাল পর্যন্ত জাকির এন্টারপ্রাইসকে ছয়টি দরপত্রে ৯ লাখ ৩৪ হাজার ৭৯০ টাকার কাজ দেওয়া হলেও তাকে প্রকৃত অর্থে দেওয়া হয়েছে ১৮ লাখ ৯৯ হাজার ৯৭৮ টাকা। এর মধ্যে বিল ভাউচার পাওয়া গেছে ৬ লাখ ৬৪ হাজার ২৯০ টাকার। অবশিষ্ট ১২ লাখ ৩৫ হাজার ৬৮৮ টাকার কোনো সাপোর্টিং ডকুমেন্ট পাওয়া যায়নি।

কোটি টাকা নগদে লেনদেন

গত ৮ অর্থবছরে কলেজে ৬ কোটি ৭০ লাখ টাকার বেশি আয় নগদে জমা হয়েছে এবং একই সময়ে খরচ দেখানো হয়েছে ৬ কোটি ১৪ লাখ টাকার বেশি। সবই নগদ লেনদেন, কোনো ব্যাংক হিসাব নেই, স্বচ্ছতা নেই।

অনুমোদনহীন পদোন্নতি ও চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি

অধ্যক্ষ রুপশ্রী চৌধুরীসহ কয়েকজন শিক্ষক উচ্চ আদালতের আদেশে নয়, কলেজ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে অনুমোদনহীনভাবে পদোন্নতি ও স্থায়ীকরণ পেয়েছেন। চেয়ারম্যানের স্ত্রী হবার সুবাদে আয়েশা আক্তারের শিক্ষাগত যোগ্যতা তৃতীয় শ্রেণি হওয়ার পরও প্রভাষক থেকে হয়েছেন কলেজের উপাধ্যক্ষ। এমনকি কেউ কেউ ৬০ বছরের বয়সসীমা অতিক্রম করার পরও অনুমোদন ছাড়া চাকরিতে বহাল থেকেছেন।

স্বজনপ্রীতি ও বৈষম্য

প্রতিটি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে স্বজন প্রীতি, আর্থিক লেনদেন এবং একাধিক শিক্ষককে নিয়মবহির্ভূতভাবে ছুটি প্রদান, নিয়মিত নির্ধারিত সময় কলেজে অবস্থান না করলেও কোনো প্রকার কারণ দর্শানো বা জবাবদিহিতার আওতায় না আনাসহ রয়েছে বিভিন্ন প্রকার বৈষম্য ও মানসিক নিপীড়নের অভিযোগ।

জমি ক্রয়ে কোটি টাকা লুটপাট

রাজধানীর গ্রিন রোডের একটি জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রাথমিক মূল্য নির্ধারণ হয় ৫ কোটি ৪৫ লাখ, পরবর্তীতে বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন দাম নির্ধারিত হয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ে ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকায় কেনা হয়। বিভিন্ন পর্যায়ের সংগঠিত রেগুলেশনগুলোর রেফারেন্স চূড়ান্ত জমি ক্রয়ের রেজুলেশনে উল্লেখ করা ছিল না। এ ছাড়া দুই শতাংশ কমিশনে মুজিবুর রহমান নামে একজন মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ করে ১২ লাখ টাকা দেওয়া হয়।

নিয়ম-নীতি উপেক্ষা

নিরীক্ষাকালে কলেজের সফটওয়্যার থেকে আর্থিক তথ্য লেজার ক্যাশবুক, ব্যাংক বুক, ব্যালেন্স শিট, প্রফিট অ্যান্ড লস অ্যাকাউন্ট ইত্যাদি প্রদানে গভীর অনিয়ম, অস্বচ্ছতা ও গাফিলতি পরিলক্ষিত হয়েছে। রেজুলেশন বইয়ে অনিয়ম, সদস্যদের স্বাক্ষর নেই, পৃষ্ঠা নম্বরহীন এবং সহজে পরিবর্তনযোগ্য নথি পাওয়ার তথ্যও উঠে এসেছে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে।

সার্বিকভাবে এ প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমে সুশাসন, স্বচ্ছতা, অর্থনৈতিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে জরুরিভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের হস্তক্ষেপ এবং গঠনতান্ত্রিক ও প্রশাসনিক সংস্কারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ আবশ্যক।

অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে সেই সময়কার কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি ওই প্রতিষ্ঠানের সাথে এখন জড়িত নই। বর্তমানে যিনি আছেন এসব বিষয় তিনিই ভালো বলতে পারবেন। এরপর তিনি অন্য কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেন।’

Link copied!