এএফওএমপির সভাপতি নির্বাচিত হলেন ড. হাসিন অনুপমা

বাংলাদেশের গর্ব, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) সেন্টার ফর বায়োমেডিকেল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পরিচালক ও অধ্যাপক ড. হাসিন অনুপমা আজহারী এশিয়া-ওশেনিয়া ফেডারেশন অব অর্গানাইজেশনস ফর মেডিক্যাল ফিজিক্স (এএফওএমপি)-এর সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। ২০২৫-২০২৮ মেয়াদে তিনি এই মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্ব পালন করবেন।

এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ড. হাসিন অনুপমা এএফওএমপি’র ইতিহাসে প্রথম বাংলাদেশি এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রফেসর ইভা বেজাকের পর দ্বিতীয় নারী হিসেবে সংগঠনটির সর্বোচ্চ পদে আসীন হলেন। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ২৫টিরও বেশি দেশের মেডিক্যাল ফিজিক্স সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত এই ফেডারেশনের নেতৃত্বে তার আসীন হওয়া বাংলাদেশের নারী বিজ্ঞানীদের আন্তর্জাতিক অগ্রযাত্রায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

প্রফেসর ড. হাসিন অনুপমা আজহারী ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বায়োমেডিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং সেন্টারের পরিচালক এবং অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। তিনি গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল ফিজিক্স অ্যান্ড বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান এবং বিজ্ঞান অনুষদের প্রাক্তন ডিন ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ মেডিক্যাল ফিজিক্স সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি- যিনি দেশে মেডিক্যাল ফিজিক্স শিক্ষা, গবেষণা ও পেশাগত উন্নয়নের ভিত্তি স্থাপন করেছেন। এছাড়া বাংলাদেশের প্রথম নারী মেডিক্যাল ফিজিসিস্ট হিসেবে ড. অনুপমা এই ক্ষেত্রে পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করেছেন।

নিজের এই অর্জন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এএফওএমপি’র সভাপতি নির্বাচিত হওয়া শুধু ব্যক্তিগত সম্মান নয়, বরং বাংলাদেশের মেডিক্যাল ফিজিক্স ক্ষেত্রকে বৈশ্বিক পরিসরে তুলে ধরার এক অনন্য সুযোগ। আমাদের দেশে ক্যান্সার চিকিৎসার উন্নয়নে আধুনিক প্রযুক্তি, দক্ষ জনশক্তি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অপরিহার্য। আমি বিশ্বাস করি, গবেষণা, শিক্ষা ও প্রাথমিক স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে আমরা প্রতিটি ক্যান্সার রোগীর জন্য নিরাপদ ও কার্যকর চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারি। আমার লক্ষ্য বাংলাদেশের প্রতিটি কোণে মেডিক্যাল ফিজিক্সের জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়া এবং তরুণ বিজ্ঞানীদের- বিশেষ করে নারীদের- এই ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে উৎসাহিত করা।’

তিনি গত সাত বছর ধরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত থেকে সরকারি পর্যায়ে ‘মেডিক্যাল ফিজিসিস্ট’ পদ সৃষ্টির প্রচেষ্টায় কাজ করে যাচ্ছেন, যা ক্যান্সার চিকিৎসা ও রেডিয়োলজিক্যাল সুরক্ষায় দেশে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রফেসর অনুপমা সাউথ এশিয়া সেন্টার ফর মেডিক্যাল ফিজিক্স অ্যান্ড ক্যান্সার রিসার্চের প্রধান নির্বাহী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ২০১৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত এএফওএমপি’র মহাসচিব এবং ২০২৩-২০২৫ মেয়াদে সহ-সভাপতি ছিলেন। তার নেতৃত্বে ২০২১ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এশিয়া-ওশেনিয়া কংগ্রেস অন মেডিক্যাল ফিজিক্স সম্মেলন আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তার অবদান স্বীকৃত। ২০১৮ সালে তিনি ‘ইন্টারন্যাশনাল ডে অব মেডিক্যাল ফিজিক্স অ্যাওয়ার্ড’ এবং ২০২০ সালে এএফওএমপি’র ‘আউটস্ট্যান্ডিং মেডিক্যাল ফিজিসিস্ট অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন। তিনি আন্তর্জাতিক মেডিক্যাল ফিজিক্স সংস্থা, নারী বিজ্ঞানী সংগঠন এবং দক্ষিণ ও পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন গবেষণা নেটওয়ার্কে সক্রিয়ভাবে যুক্ত রয়েছেন। তার ১৪টি গবেষণা প্রকাশনা আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

এএফওএমপি-র নতুন নির্বাহী কমিটিতে চীনের প্রফেসর জিন সায়ান্স সহ-সভাপতি, মালয়েশিয়ার ড. আইক হাও নগ মহাসচিব এবং থাইল্যান্ডের সহকারী অধ্যাপক তাওয়েপ সাংহাংথুম কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।