জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী ও প্রথম শহীদ আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি আজ রোববার (২৯ জুন) হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ শুনানির দিন ধার্য থাকলেও তা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ত থাকায় শুনানি স্থগিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ধারণা করা হচ্ছে, আগামী জুলাই মাসের যেকোনো দিন মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি হতে পারে।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার এই হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পায় প্রসিকিউশন। প্রতিবেদনে হত্যার পেছনে অন্তত ৩০ জনের সম্পৃক্ততা শনাক্ত করেছে তদন্ত সংস্থা।
এদিকে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গত বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টরের মুক্তির দাবিতে আন্দোলনে নামে।
জানা গেছে, ওই আন্দোলনে আওয়ামী ঘরানার শিক্ষক এবং নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের উপস্থিতি ঘিরে ক্যাম্পাসে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় শহীদ আবু সাঈদের পরিবার জানিয়েছেন, তারা চলমান আন্দোলন নিয়ে গভীর হতাশা অনুভব করছেন।
আবু সাঈদের বড় ভাই আবু হোসেন বলেন, ‘সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলামের নাম তদন্তে প্রস্তাব করা হয়েছিল। তদন্ত সংস্থা হয়তো তার বিরুদ্ধে কিছু প্রাথমিক তথ্য পেয়েছে। আমাদের জানা মতে, ওই সময়কার কল রেকর্ডসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু ডকুমেন্টও রয়েছে তাদের কাছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই মামলায় আমরা কোনো রাজনৈতিক প্রতিহিংসা দেখাইনি। অন্যান্য মামলার মতো ১০০–২০০ জনকে আসামি করিনি। আমরা কেবল যাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দায়ী মনে করেছি, তাদের নামই দিয়েছি। শুনানির সময় যদি কেউ নির্দোষ প্রমাণিত হন, আদালত স্বাভাবিকভাবে তাকে জামিন দেবেন।’
আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে আবু হোসেন বলেন, ‘আপনারা যা দেখেছেন, কেবল সেটুকুই জানেন। কিন্তু গোপনে যে ষড়যন্ত্র চলেছে, সেটা কি জানেন? অনেকেই আছেন, বাইরে থেকে সান্ত্বনা দেন, অথচ ভেতরে ভেতরে ভিন্ন খেলা খেলেন।’
তিনি পারিবারিক শঙ্কার কথাও তুলে ধরে বলেন, ‘এভাবে চলতে থাকলে এক দিন হয়তো আমাদের একমাত্র ভরসা হয়ে থাকবে আল্লাহর দরবারেই ন্যায়বিচার প্রার্থনা করা।’
অন্যদিকে আন্দোলনকারীরা সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলামের মুক্তি দাবি করে বলেন, ‘যদি তিনি কোনো অপরাধ করে থাকেন, তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে শাস্তি দেবে। আবু সাঈদকে হত্যা করেছে পুলিশ। অথচ পুলিশি হত্যাকাণ্ডের দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওপর চাপিয়ে দেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ। এরপর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর, ১৮ আগস্ট তার পরিবার ১৭ জনকে আসামি করে মামলা করেন। পরবর্তীতে অধিকতর তদন্তে আরও ৭ জনের নাম সংযুক্ত করতে আদালতে আবেদন করা হয়।
মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরিত হয়, যেখানে একাধিকবার তদন্তে রংপুরে আসে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিম। গত বৃহস্পতিবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও তা পেছানো হয়। আজ রোববার (২৯ জুন) ছিল প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নতুন দিন।