ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ডাকসুর তুলনায় জাকসুতে নারীদের অংশগ্রহণ দ্বিগুণ 

রেদওয়ান সাগর, জাবি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৫, ০৮:০১ পিএম
ঢাবি এবং জাবির লোগো। ছবি- সংগৃহীত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) অংশগ্রহণের দ্বিগুণ। ডাকসু নির্বাচনে মোট প্রার্থীর ১৩ শতাংশ নারী হলেও  জাকসু নির্বাচনে তা মোট প্রার্থীর ২৫ শতাংশ। 

ডাকসু নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, ডাকসু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন ৪০২ জন পুরুষ ও ৬২ জন নারী, যা ডাকসুর মোট চূড়ান্ত প্রার্থীর প্রায় ১৩ শতাংশ।  ঢাবিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৪০ হাজার ৮৩৭ জন। এর মধ্যে ৫৭ দশমিক ৩০ শতাংশ পুরুষ  এবং  ৪২ দশমিক ৭০ শতাংশ নারী। 

অন্যদিকে জাকসু নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে, জাকসু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা মোট প্রার্থীর সংখ্যা ১৭৯ জন। এর মধ্যে বিভিন্ন পদে ১৩৩ জন পুরুষ ও ৪৬ জন নারী। সেই হিসেবে মোট প্রার্থীর ২৫ শতাংশ নারী, যা ডাকসুর তুলনায় দ্বিগুণ। জাবিতে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ হাজার ৯১৯ জন। এর মধ্যে ৬ হাজার ১০২ জন পুরুষ ও ৫ হাজার ৮১৭ জন নারী—মোট ভোটারের ৪৮ দশমিক ৮ শতাংশ নারী।

জাকসু-ডাকসুর শীর্ষ পদে নারী নেতৃত্ব

জাকসুর সহসভাপতি (ভিপি) পদে ১০ প্রার্থীর মধ্যে কোনো ছাত্রী না থাকলেও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ৯ প্রার্থীর মধ্যে দুজন ছাত্রী। এ ছাড়া সংরক্ষিত নারী যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রার্থী হয়েছেন ৬ জন। 

অন্যদিকে ডাকসুর সহসভাপতি (ভিপি) পদে প্রার্থী হয়েছেন ৪৮ জন। তাদের মধ্যে ৪৩ জন ছাত্র থাকলেও ছাত্রী সংখ্যা মাত্র ৫ জন। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৯ প্রার্থীর মধ্যে মাত্র একজন ছাত্রী। এ ছাড়া সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ২৮ প্রার্থীর মধ্যে চার জন ছাত্রী রয়েছেন।

জাকসু-ডাকসুতে অন্যান্য পদে নারীদের অংশগ্রহণ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ৯, ক্রীড়া সম্পাদক পদে পাঁচ, সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পাদক পদে ১৫ এবং পরিবহণ ও যোগাযোগ সম্পাদক পদে ৯ প্রার্থীর মধ্যে একজনও নারী প্রার্থী নেই।

নাট্য সম্পাদক পদে সাত, তথ্যপ্রযুক্তি ও গ্রন্থাগার সম্পাদক পদে ১৫ এবং স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা সম্পাদক পদে ১৪ প্রার্থীর মধ্যে ছাত্রী রয়েছেন একজন করে। 

শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক পদে ১৩ প্রার্থীর মধ্যে ছাত্রী তিন, পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ সম্পাদক পদে ১৪, সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে ৯ ও সহসাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে ১১ প্রার্থীর মধ্যে দুজন করে ছাত্রী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

জাকসু নির্বাচনে ছয়টি সংরক্ষিত পদ থাকলেও ছাত্রীদের অংশগ্রহণ তূলনামূলক কম দেখা যায়। সহসম্পাদক (এজিএস), সহক্রীড়া সম্পাদক, সহসমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পাদক এবং তিনটি কার্যকরী সদস্যসহ সংরক্ষিত ছয় পদে মনোনয়ন জমা পড়েছে মাত্র ৪৩টি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ঢাকসু) নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে দুই জন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে একজন, কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ৯ জন, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে তিন জন, ক্যারিয়ার উন্নয়ন সম্পাদক পদে দুই জন, সমাজসেবা সম্পাদক পদে একজন, ক্রীড়া সম্পাদক পদে একজন, গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে তিনজন, সাহিত্য ও সংস্কৃতিক পদে দুজন, মানবাধিকার ও আইন সম্পাদক পদে তিন জন এবং সদস্য পদে ২৫ জন নারী প্রার্থী রয়েছেন।

জাকসু প্যানেলে শীর্ষ পদে নারী নেতৃত্ব 

নির্বাচনে এখন পর্যন্ত প্যানেলগুলোর মধ্যে  ছাত্রদলের মনোনীত সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে নারী নেতৃত্ব দেখা গেছে। সংগঠনটির ছয় পদে ছাত্রী প্রার্থী রয়েছে।

এ ছাড়া শাখা ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটে’ ছয়জন ছাত্রী প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) সমর্থিত প্যানেল ‘শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরামে’ আটজন ছাত্রী প্রার্থী রয়েছে।

সাংস্কৃতিক জোটভুক্ত ৯টি সংগঠন ও ছাত্র ইউনিয়ন (অমর্ত্য-শরন) সমর্থিত ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেলে ২৫টি পদের মধ্যে ১০টি পদে নারী প্রার্থী রয়েছে। 

আবদুর রশিদ জিতু-শাকিল আলী সমর্থিত ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’ প্যানেলে রয়েছেন মাত্র তিনজন নারী প্রার্থী । থিয়েটার (টিএসসি) মেঘ-নাজমুলের ‘স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ’ এবং ছাত্র ইউনিয়ন (একাংশ) ও ছাত্রফ্রন্ট (একাংশ) সমর্থিত ‘সংশপ্তক পর্ষদ’ (ইমন-তানজিম) প্যানেলে দুজন করে চার নারী প্রার্থী রয়েছে।

দীর্ঘ ৩৩ বছরের অচলায়তন ভেঙে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাকসু নির্বাচন। নির্বাচনে নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ যথাযথ হচ্ছে কি না বিষয়টি প্রশ্ন সাপেক্ষ। 

এ বিষয়ে তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক শামীমা সুলতানা বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্বিবদ্যালয়ে নারীরা সবসময়েই অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। যৌন নিপীড়ন, দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনসহ সকল ক্ষেত্রে নারী নেতৃত্বে সারা বাংলাদেশের জন্য একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। সেই জায়গা থেকে নারীদের অংশগ্রহণ আরও বেশি হওয়ার কথা ছিল কিন্তু সেই তুলনায় কম।’

তিনি আরও বলেন, ‘নারীরাও সুন্দর ও সুষ্ঠ পরিবেশের অপেক্ষা করছে। নারীরা যদি সুন্দর, সুষ্ঠ ও নিরাপদ পরিবেশ পায় তাহলে এখানে অংশগ্রহণ আরও বেড়ে যাবে এবং রাজনীতিতে অনেক মূখ্য ভূমিকা পালন করতে পারবে বলে বিশ্বাস করি।’