জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের ভোট গণনা আজ শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) তৃতীয় দিনের মতো চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে এই গণনা প্রক্রিয়া চলমান। তবে এখনো ফল ঘোষণার নির্দিষ্ট সময় জানাতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। একাধিকবার জানালেও প্রতিবারই তা পিছিয়ে যাচ্ছে।
এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাতে ভোট গণনা শেষ করে ফল ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছিলেন। একই বক্তব্য দিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব এ কে এম রাশিদুল আলম। তবে সেটিও বাস্তবায়ন হয়নি।
গত বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলে। এরপর রাত সোয়া ১০টা থেকে শুরু হয় গণনা। কিন্তু তিন দিন পার হলেও শেষ হয়নি এই প্রক্রিয়া।
গণনায় ধীরগতি ও অব্যবস্থাপনা
নওয়াব ফয়জুন্নেসা হল কেন্দ্রের রিটার্নিং কর্মকর্তা সুলতানা আখতার গতকাল শুক্রবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে ভোট গণনা থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘এনালগ পদ্ধতিতে গণনা করলে তিন দিনেও শেষ হবে না। আমরা শিক্ষক, তিন দিন ধরে অমানবিক পরিশ্রম করছি। আমাদের পরিবার নেই? শারীরিক ও মানসিকভাবে আমরা বিধ্বস্ত।’
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘চারুকলা বিভাগের শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসের মৃত্যুতে সহকর্মীরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। অনেকে রিটার্নিং ও পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্বে থাকায় গণনা প্রক্রিয়াও ব্যাহত হচ্ছে।’
রাজনৈতিক দোলাচল ও অভিযোগ
নির্বাচনের ফল প্রকাশে দেরি এবং ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার প্রতিবাদে রাজধানীতে বিক্ষোভ করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। তারা দ্রুত ফল প্রকাশের দাবি জানিয়েছে।
এ ছাড়া ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের অভিযোগ, বিএনপিপন্থি তিন শিক্ষক নির্বাচনি প্রক্রিয়া ব্যাহত করতে ষড়যন্ত্র করছেন। যদিও নির্বাচন কমিশন এসব অভিযোগ সম্পর্কে এখনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি।
নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনিরুজ্জামান গণনার ধীরগতির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘গণনা প্রক্রিয়ায় সময় লাগছে। নির্দিষ্ট করে ফল প্রকাশের সময় বলা যাচ্ছে না। আমরা লোকবল বাড়ানোর চেষ্টা করছি।’
ফল প্রকাশে আলটিমেটাম
তিনটি প্যানেলের প্রার্থীরা আজ শনিবার রাতের মধ্যে কেন্দ্রীয় ও হল সংসদের ফল ঘোষণার জন্য নির্বাচন কমিশনকে আলটিমেটাম দিয়েছে। দাবি না মানলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তারা।
কমিশনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বাগছাস-সমর্থিত শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম, স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন এবং ইসলামী ছাত্রশিবির-সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীরা।
ভোট ও প্রার্থীর পরিসংখ্যান
এবারের জাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ১১,৭৪৩ জন। এর মধ্যে ভোট পড়েছে ৬৭.৬৮ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ৭,৯৪৭টি ভোট। কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১৭৭ জন প্রার্থী।