ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

রাবিতে ৭ দিনের আলটিমেটাম, শাটডাউন স্থগিত

রাবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৫, ০৪:৩২ এএম
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি- সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ৭ দিনের আলটিমেটাম দিয়ে ‘পূর্ণাঙ্গ শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করেছেন। বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাবি অফিসার্স সমিতির সভাপতি মোক্তার হোসেন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ ঘোষণা দেন।

তবে তারা তাদের দুটি প্রধান দাবি আদায়ের জন্য এই সময়সীমা বেঁধে রেখেছেন। দাবি দুটো হলো- ২০ সেপ্টেম্বর সংঘটিত ঘটনার সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা এবং প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা হিসেবে বাতিল হওয়া পোষ্য কোটা পুনর্বহাল করা।

মোক্তার হোসেন জানান, প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার পর তারা কিছু আশ্বাস পেয়েছেন। প্রশাসন ও একাডেমিক কার্যক্রম সচল রাখার স্বার্থে আগামী ৭ কর্মদিবস সময় দেওয়া হচ্ছে। যদি এই সময়ের মধ্যে তাদের দাবি বাস্তবায়ন না হয়, তবে তারা আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।’

এ সময় তিনি প্রশাসনকে সতর্ক করে বলেন, ‘যদি এই সময়ের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তার দায়ভার এককভাবে প্রশাসনের উপর বর্তাবে।’

শিক্ষকদের কর্মবিরতি অব্যাহত

অন্যদিকে, জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল আলিম বলেছেন, ‘শিক্ষকদের পূর্ণদিবস কর্মবিরতি সন্ত্রাসীদের বিচারের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত চলবে। গত চার দিন ধরে শিক্ষার্থীদের লাঞ্ছনার প্রতিবাদে এই কর্মবিরতি চলছে এবং ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। শিক্ষকরা প্রশাসনের ওপর আস্থা হারিয়েছেন এবং সাধারণ শিক্ষকদের পক্ষ থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।’

শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ ও মানববন্ধন

শাটডাউনের প্রতিবাদে ইসলামী ছাত্রশিবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে মানববন্ধন করেছে। শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, ‘বার বার পেছানো হয়েছে রাকসু নির্বাচন এবং পোষ্য কোটাকে স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত সিন্ডিকেট মিটিংয়ে নেওয়া হয়েছে।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘বিভিন্ন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহল এই বিষয়কে ইস্যু করে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে, যা সাধারণ শিক্ষার্থীরা মেনে নেবে না।’

স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী আ. নূরও মানববন্ধনে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের শিক্ষার অধিকার হরণ করা হয়েছে, তাই অবিলম্বে ক্লাসরুম ও লাইব্রেরি খুলে শিক্ষার সুযোগ ফিরিয়ে দিতে হবে।’

পোষ্য কোটার ফেরত দাবি ও সংঘর্ষ

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ১৮ সেপ্টেম্বর ১০ শর্তে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের ঘোষণা দিয়েছিলেন, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতর্ক ও আন্দোলন সৃষ্টি করে। এরপর শনিবার জুবেরী ভবনে শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এই ঘটনায় লাঞ্ছনার অভিযোগ ওঠে, যা নিয়ে শিক্ষক ও কর্মকর্তারা এক দিনের কর্মবিরতি পালন করেন। তারপর জরুরি সিন্ডিকেট সভায় পাঁচ সদস্যের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি এবং বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সোমবার থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অনির্দিষ্টকালের শাটডাউন শুরু করেন।

ক্যাম্পাসের বর্তমান অবস্থা

সরেজমিনে ক্যাম্পাস পরিদর্শনে দেখা গেছে, শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকের সামনে কর্মবিরতিতে থাকা কর্মকর্তারা চেয়ার বসে অবস্থান করছেন। প্রশাসন ভবন, একাডেমিক ভবনসহ সব শ্রেণিকক্ষ ও অফিসে তালা ঝুলছে। ক্যাম্পাসের পরিবহন ও দোকানপাট বন্ধ রয়েছে এবং পরিবেশ সাধারণের চেয়ে শান্ত।