বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স) স্পিনার্স ক্লাবের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘হাফিজউদ্দিন আহমেদ ও ফাতেমা আহমেদ ট্রাস্ট লেকচার-২০২৫’ শীর্ষক সেমিনার। আগামীতে সবুজ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ও টেকসই উন্নয়নে পাটের ভূমিকা নিয়ে এ সেমিনারে আলোকপাত করা হয়।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে সকাল ১০টায় সেমিনারটি শুরু হয়।
অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্বে ছিলেন বুটেক্সের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইঞ্জি. মো. জুলহাস উদ্দিন।
প্রধান অতিথি হিসেবে বস্ত্র ও পাট, বাণিজ্য এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. নারগিস আখতার, আইইবি-এর সহসভাপতি ইঞ্জি. খান মঞ্জুর মোরশেদ, আইটিইটি-এর আহ্বায়ক ইঞ্জি. আহসানুল করিম কায়সার, আইইবি-এর টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান ইঞ্জি. মহিউদ্দীন আহমেদ।
মূল বক্তা হিসেবে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. হোসনে আরা বেগম।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক রাশিদা আখতার খানম।
আরও বক্তব্য রাখেন— অধ্যাপক ড. হোসনে আরা বেগম, ইঞ্জি. মহিউদ্দীন আহমেদ, শেখ বশির উদ্দিন, ড. নারগিস আখতার, ইঞ্জি. খান মঞ্জুর মোরশেদ, ইঞ্জি. আহসানুল করিম কায়সার এবং সবশেষে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ড. ইঞ্জি. মো. জুলহাস উদ্দিন।
উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে যেমন সুযোগ রয়েছে, তেমনি বাধা আছে। একসময়ের টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হিসেবে পাটের চাহিদা বর্তমানে আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এর জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী। আমরা যতদিন না বাস্তবতার আলোকে বিচার-বিশ্লেষণ করতে পারব, ততদিন আমরা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবো ও পিছিয়ে যাব। আমার মতে আমাদের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে দক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে, নিজেদের মধ্যে উদ্ভাবনী চিন্তা আনতে হবে ও প্রয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে, যা আমাদেরকে অন্যদের থেকে আলাদা করবে।’
ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. হোসনে আরা বেগম তার বক্তব্যে বলেন, ‘বর্তমানে পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ প্লাস্টিক পলিথিনের ব্যবহার। আমরা চেষ্টা করলে এর ব্যবহার বন্ধ করে বিকল্প আনতে পারি। এসব ক্ষেত্রে পাটের ব্যবহার অন্যান্য ফাইবারের তুলনায় অনেক বেশি পরিবেশবান্ধব। এক সময় চাহিদার শীর্ষে থাকা পাট আমাদেরই অসতর্কতার কারণে যথাযথভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে না। পাটের ব্যবহার যে-রকম পরিবেশবান্ধব তেমনি অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। পাটসহ অন্যান্য পরিবেশবান্ধব ফাইবার ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাবে।’
উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইঞ্জি. মো. জুলহাস উদ্দিন বলেন, ‘পাট যেহেতু প্রাকৃতিক এবং পরিবেশবান্ধব ফাইবার, এটি নিয়ে বিস্তর পড়াশোনা এবং গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। শুধু চটের কিংবা শপিং ব্যাগই নয়, কীভাবে অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোতেও পাটের ব্যবহার বাড়ানো যায় সেটি নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। আমি চেষ্টা করব বুটেক্সে জুট ফাইবার নিয়ে একটি নতুন বিভাগ এবং গবেষণা কেন্দ্র তৈরি করা। পাটের কাঁচামাল থেকে কীভাবে উন্নতমানের টেক্সটাইল পণ্য তৈরি করা যায় সেটির উপায় খুঁজে বের করতে হবে। তবেই পাটের যে হারানো গৌরব সেটি আমরা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হব।’
বক্তব্য শেষে উপস্থিত অতিথিদের সম্মাননা স্মারক প্রদান ও স্টল পরিদর্শনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি সমাপ্ত হয়।
শিক্ষার্থীরা আশা প্রকাশ করছেন, বুটেক্স অডিটোরিয়ামে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণে সেমিনারটি বস্ত্র ও পাট খাতের টেকসই উন্নয়ন, পরিবেশবান্ধব উৎপাদন এবং বাংলাদেশের সবুজ অর্থনীতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন