শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ ছাত্রসংসদ (বাকসু) নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন। নির্বাচনের দাবিতে কদিন ধরে তিন শিক্ষার্থীর অনশন এবং বুধবার সবশেষ সংবাদ সম্মেলন করে প্রশাসনিক ভবন ‘শাটডাউন’ ঘোষণার হুমকি দেওয়ার পরেই কলেজ প্রশাসনের তরফ থেকে নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়।
এদিন রাতে অনুরূপ আশ্বাস দিয়ে অনশনরত শিক্ষার্থীদের অভিমান ভাঙানো হয়েছে। কলেজ প্রশাসনের আশ্বাসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অনশন কর্মসূচি আপাতত স্থগিত করেছে।
শিক্ষার্থীরা জানায়, বর্তমানে বিএম কলেজের ২২টি বিভাগে প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ণরত রয়েছেন। তাদের হয়ে কথা বলার জন্য ছাত্রসংসদ থাকলেও তাতে কোনো নির্বাচিত প্রতিনিধি নেই। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী দু:শাসনের অবসান হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রসংসদ ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়।
জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্টের পরে বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন কলেজেও ছাত্রসংসদ নির্বাচনের দাবি তুলেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া না মেলায় গত রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে প্রতিবাদস্বরুপ প্রথম অনশন শুরু করেন ইতিহাস বিভাগ তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফেরদৌস রুমি। পরবর্তীতে তার সঙ্গে সমাজকর্ম বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম এবং ইসলামিক স্টাডিস বিভাগের প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থী কে এম মাঈনুল যোগ দেন।
কিন্তু কদিন অনশন করার পরে কলেজ প্রশাসন ছাত্রসংসদ নির্বাচন নিয়ে কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় বুধবার দুপুরে শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করে প্রশাসনিক ভবন ‘শাটডাউন’ করে দেওয়ার হুমকি দেন।
সূত্রমতে জানা গেছে, শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবন শাটডাউনের হুমকি দেওয়ার পরেই নড়েচড়ে বসে বিএম কলেজ প্রশাসন। এবং বুধবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনের পরে রাতেই কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে অধ্যক্ষ ড. শেখ মো. তাজুল ইসলাম এবং উপাধ্যাক্ষ অধ্যাপক আবু তাহের রাশেদুল ইসলাম অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার আশ্বাস দেন। এই অভয়ের প্রেক্ষিতে অনশনরত শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মসূচি স্থগিত করেন।
বিএম কলেজ অধ্যক্ষ তাজুল ইসলাম ‘রূপালী বাংলাদেশ’কে জানান, ‘অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি, নির্বাচনের রোড ম্যাপ দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। ডিসেম্বর প্রথম সপ্তাহে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’ ছাত্রসংসদ নির্বাচনে বিএম কলেজ প্রশাসনের প্রস্তুতি আন্দোলনরত বিশেষ করে অনশনরত শিক্ষার্থীদের আশান্বিত করেছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, বাকসু নির্বাচনের দাবি দীর্ঘদিনের, কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার ভোট করে কলেজে তাদের আধিপত্য হারাতে চায়নি। গত বছরের ৫ আগস্ট তাদের পতন হলে এই দাবিটি জোরালো রূপ নেয়, শিক্ষার্থীরা ছাত্রসংসদ নির্বাচন চেয়ে অনশনের মতো কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হয়।
অনশনরত শিক্ষার্থী রুমি জানান, শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে কলেজ প্রশাসন ছাত্রসংসদ নির্বাচনের গুরুত্ব অনুধাবন করেছে। বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে প্রশাসনিক ভবন অচল করে দেওয়ার ঘোষণার পরে কর্তৃপক্ষ নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এবং ডিসেম্বর প্রথম সপ্তাহের মধ্যে এই নির্বাচন করার কথা রয়েছে, যার মধ্যদিয়ে ৩০ হাজার শিক্ষার্থী তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবেন।’


সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন