শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিনোদন ডেস্ক

প্রকাশিত: মে ১৬, ২০২৫, ০৮:০৭ পিএম

পালাগানের আসর থেকে বিলাসী জীবনে মমতাজ

বিনোদন ডেস্ক

প্রকাশিত: মে ১৬, ২০২৫, ০৮:০৭ পিএম

পালাগানের আসর থেকে বিলাসী জীবনে মমতাজ

বাউলশিল্পী ও সাবেক সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম। ছবি-সংগৃহীত

মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরের শান্ত-স্নিগ্ধ গ্রাম জয়মন্টপ থেকে শুরু। আর যতি রাজধানীর রিমান্ড কক্ষে। মমতাজ বেগমের জীবন যেন এক পালাগানের চমকপ্রদ পালাবদল।

বাবার হাত ধরে বাউলগানের যাত্রা শুরু। পরে নিজেই হলেন ‘ফোকসম্রাজ্ঞী’। এরপর রাজনীতিতে প্রবেশ করে হলেন এমপি, তারপর সেই গানের শিল্পীই আজ আলোচিত মামলার আসামি।

বাবা মধু বয়াতি ছিলেন বাউলশিল্পী, মা উজালা বেগম গৃহিণী। সংসার চলত গানের টাকায়। সেই সংসারে ছোট্ট মেয়ে মমতাজও শুরু করেন লোকগান শেখা।

প্রথমে বাবার কাছে, পরে মাতাল রাজ্জাক দেওয়ান ও রশীদ সরকারের সান্নিধ্যে। কিশোরী বয়সেই পথে পথে পালাগান, বিচ্ছেদ ও উঠান বৈঠক করে তৈরি করেন নিজের শ্রোতাবলয়। 

২০০৪ সালে গান পৌঁছায় ‘ইত্যাদি’ মঞ্চে, হানিফ সংকেত সঞ্চালিত জনপ্রিয় এই ম্যগাজিন অনুষ্ঠান থেকেই তার উত্থান জাতীয় তারকা হিসেবে।

সাত শতাধিক অ্যালবাম প্রকাশ পেয়েছে তার। পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে রাজনীতির মাঠে নামেন মমতাজ। প্রথমে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি, পরে সরাসরি নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-২ থেকে জয়। এরপর রাজনীতিতে তার প্রভাব বাড়তে থাকে। 

তবে জনপ্রিয়তার পাশাপাশি শুরু হয় বিতর্ক। পরিবারের সদস্য ও অনুসারীরা জড়িয়ে পড়েন চাঁদাবাজি, নিয়োগবাণিজ্য, টেন্ডারবাজিসহ নানা অভিযোগে।

তার সৎ-ছেলে পৌর মেয়র, ভাগনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, আত্মীয়-স্বজনেরা ইউনিয়নজুড়ে দখল রেখেছেন ক্ষমতার চেয়ার।

রাজনীতির পাশাপাশি সম্পদের পরিমাণও বেড়েছে হু হু করে। ২০১৪ সালে তার হলফনামা অনুযায়ী অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৭ লাখ টাকা, যা ২০২৪ সালে গিয়ে দাঁড়ায় ৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকায়। 

স্থাবর সম্পদ ৭ কোটি থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯ কোটি টাকায়। এলাকায় গড়ে তুলেছেন বিশাল রেস্টুরেন্ট, হিমাগার, দুইতলা বাড়ি আর ‘বাউল কমপ্লেক্স’। ঢাকার মহাখালীতে ছয়তলা বাড়ি। এ ছাড়া কানাডার টরন্টোতেও বাড়ি থাকার গুঞ্জন রয়েছে।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ‘বিলাসী মমতাজ’ চলে যান আত্মগোপনে। তার ‘বিলাসের রাজ্য’ অনেকটা ছোট হয়ে আসে যেন। ভাই এবারত হোসেনের সিঙ্গাইরের চরদুর্গাপুরের বাড়িতে তিন মাস কাটাতে হয় লোকচক্ষুর আড়ালে। 

মমতাজের বিরুদ্ধে সিঙ্গাইর ও হরিরামপুর থানায় রয়েছে হত্যাসহ একাধিক মামলা। 

২০১২ সালের এক হরতালে গুলিতে চারজন নিহতের ঘটনায় চলতি বছর ২৫ অক্টোবর দায়ের হয় হত্যা মামলা। প্রধান আসামি করা হয় মমতাজকে। আরেকটি মামলা আছে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে। ঢাকার বিভিন্ন থানায়ও রয়েছে একাধিক মামলা।

মমতাজের ভাই এবারত হোসেন বলেন, ‘শিল্পী আপা (মমতাজ) ৫ আগস্টের পরের দিন থেকে টানা ৩ মাস সিংগাইরের চর দুর্গাপুরে আমার বাড়িতেই আত্মগোপনে ছিলেন। আমার স্ত্রী, সন্তান ছাড়া পাশের বাড়ির কেউও জানতে পারেনি যে সাবেক এমপি মমতাজ আমার বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওই সময় আপা দলের নেতা-কর্মীসহ সব শুভাকাঙ্ক্ষীর সঙ্গে মোবাইলফোনেও যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। কেউ প্রয়োজন হলে আমার মাধ্যমে যোগাযোগ করতেন।’

এরপর বোরকা পরে মধ্যরাতে ঢাকায় গিয়ে ওঠেন বান্ধবী নিপার নামে ভাড়া নেওয়া বাসায়। ঢাকার ধানমন্ডি থেকে ১২ মে রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। বর্তমানে তিনি রয়েছেন চার দিনের রিমান্ডে।

মমতাজ বেগমের তিনটি বিয়ের তথ্য বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে পাওয়া যায়। তার তৃতীয় স্বামী ডা. এসএম মঈন হাসান চঞ্চল গণমাধ্যমে একাধিকবার তাঁদের সম্পর্কের বিষয়ে কথা বলেছেন। 

তিনি জানান, মমতাজের সঙ্গে তার যোগাযোগ ৩ বছর আগে থেকে বিচ্ছিন্ন। এ ছাড়া মমতাজ কিছুদিন তার দ্বিতীয় স্বামীর মেয়ের বাসায় আশ্রয়ে ছিলেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তবে এ তথ্য দ্বিতীয় স্বামীর ঘনিষ্ঠ স্বজন সানোয়ার হোসেন অস্বীকার করেছেন। 

এ ছাড়া মমতাজের মহাখালীর পাঁচ তলা বাড়ি বর্তমানে তার পিএস জুয়েলের দখলে রয়েছে বলে ডা. মঈন হাসান দাবি করেন। সেই সঙ্গে জুয়েলেকে মমতাজের বর্তমান ‘বয়ফ্রেন্ড’ বলেও দাবি করেন। 

মমতাজের এই রূপান্তর অনেককে বিস্মিত করেছে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর মানিকগঞ্জ জেলা সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাস মন্তব্য করেছেন, ‘শিল্পীরা সব মতের ঊর্ধ্বে থাকেন। রাজনীতিতে গিয়ে তিনি নিজের শিল্পীসত্তা ধ্বংস করেছেন।’

একদা বাউল গানের আসর মাতানো মমতাজের আজকের পরিণতি যেন এক করুণ পালার চূড়ান্ত অধ্যায়। নির্মম এই পালা বদলের খেলায় মাটি ও মানুষের গান গাওয়া শিল্পী আজ সেই মাটি ও মানুষের ঘৃণা ও করুণার পাত্রে পরিণত হয়েছেন। 

আরবি/নক

Link copied!