মঙ্গলবার, ০৩ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিনোদন ডেস্ক

প্রকাশিত: জুন ২, ২০২৫, ০৫:১৫ এএম

দ্যা গ্রেট গৌতম চট্টোপাধ্যায়

বিনোদন ডেস্ক

প্রকাশিত: জুন ২, ২০২৫, ০৫:১৫ এএম

গৌতম চট্টোপাধ্যায়।     ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

গৌতম চট্টোপাধ্যায়। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

বাংলা গানে যখন ‘আধুনিক’ শব্দটির মানে ছিল পল্লীগীতি, রবীন্দ্রসংগীত বা ছায়াছবির সুর, তখন হঠাৎ’ই শহরের অলিগলিতে শোনা গেল এক নতুন সুর। তার গলায় ছিল বাউলের গলা, কথা ছিল কবির, বিদ্রোহ ছিল বিপ্লবীর আর ব্যথা ছিল ছিন্নমূল মানুষের। তিনি গৌতম চট্টোপাধ্যায়। বাংলা ব্যান্ডসংগীতের প্রথম গোষ্ঠী ‘মোহিনের ঘোড়াগুলি’-র প্রণেতা।

গৌতম চট্টোপাধ্যায় ছিলেন সংগীতজ্ঞের চেয়েও বেশি কিছু। তিনি ছিলেন একজন শহরবিশ্লেষক, মানবিক সমাজদার্শনিক এবং ভাষার নিভৃতচারী সৈনিক। তার গানগুলো ছিল গদ্যের মতো, অথচ সুরে বাঁধা। যে শহর ভালোবাসে অথচ প্রতিদিন হারায়, গৌতম গেয়েছিলেন তারই বেদনার পদ্য।

১৯৪৯ সালের ১ জুন জন্ম নেওয়া গৌতম চট্টোপাধ্যায় ছোটবেলা থেকেই সাহিত্য, দর্শন ও সংগীতের জগতের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। তিনি পেশাগতভাবে ছিলেন রসায়নের অধ্যাপক, কিন্তু তার স্বভাব ছিল সংগীতের অন্বেষণ। তার মননে ছিল লালন, গলায় ছিল ডিলান, আর কথায় ছিল নগরজীবনের যন্ত্রণা।

১৯৭৫ সালে কয়েকজন বন্ধু মিলে গড়ে তুললেন বাংলা ভাষার প্রথম ব্যান্ড ‘মোহিনের ঘোড়াগুলি’। নামটা যেমন রহস্যময়, গানগুলোও তেমনই চমকপ্রদ।

‘একটা নীলপদ্ম আজও জলে ভাসে
কেউ জানে না সে কার জন্য...’

এই গান শুধুমাত্র সুর নয়, একান্তভাবে জীবন, রাজনীতি, প্রেম, শ্রেণি, পুঁজিবাদ, একাকীত্ব আর হারিয়ে যাওয়া শহরের দলিল।

‘তুমি থামো, আর আমি গাই’ –গানের ভিতর দিয়ে এক জীবনদর্শন।

গৌতম গানের মাধ্যমে একটি আদর্শ জীবনবোধ দাঁড় করিয়েছিলেন। তিনি সরাসরি কিছু বলেননি- তার গান ছিল বোধের ভেতর ঢুকে যাওয়া এক-একটি দার্শনিক বাক্য। যেমন:...

‘পৃথিবীটা নাকি ছোট হতে হতে
আরেকটা শহর হয়ে গেছে…’

এই বাক্যগুলো তখন বলা হচ্ছিল, যখন বাংলা গানে নগরজীবনের ছাপ প্রায় অনুপস্থিত। গৌতম সেখানে প্রথম নিয়ে আসেন শহরের প্রান্তিক মানুষ, রেললাইন ধরে হাঁটা তরুণ, প্রেমে অসফল মধ্যবিত্ত, বেকার কবি।

তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা কোনোদিন হিট হব না, কিন্তু কথা বলব।’

সত্যি, গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের গান কখনো চার্ট টপার হয়নি, কিন্তু চায়ের স্টলে, কলেজের দেয়ালে, মেসঘরের সিগারেটের ধোঁয়ায় তার সুর আজও বেঁচে আছে।

গৌতম তার গানে বাউলীয় দর্শনের গভীর প্রভাব রেখেছিলেন। তার কাছে সংগীত মানে ছিল আত্মানুসন্ধান, কিন্তু তা কেবল আধ্যাত্মিক নয়-সামাজিক-রাজনৈতিকও। যেমন, তার গানে পাওয়া যায় রাজনৈতিক হতাশা, কিন্তু উপস্থাপনাটি সরাসরি স্লোগান নয়- একটি ক্ষতবিক্ষত বোধ।

তিনি বলতেন, ‘বিপ্লব শব্দটা বড় ক্লান্ত, আমি বদলের কথা বলি।’

১৯৭৭-এ ‘মোহিনের ঘোড়াগুলি’ দলটি ভেঙে যায়। কিন্তু গৌতম থেমে যাননি। নীরবে কাজ করে গেছেন- ভিজ্যুয়াল আর্ট, টেলিভিশনের স্ক্রিপ্ট, আর্কাইভিং, প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করে গেছেন। আবার ১৯৯৫ সালে ফিরে আসেন- ‘আবার ফিরে এলো মোহিনের ঘোড়াগুলি’ অ্যালবামের মাধ্যমে। নতুন প্রজন্মকে পাশে নিয়ে গড়েন ‘মাই মিউজিক’, যেখানে অসংখ্য ব্যান্ডকে প্ল্যাটফর্ম দেন।

সেই সময় গৌতম হয়ে উঠেছিলেন তরুণদের সংগীত-দার্শনিক- যার ব্যান্ড হয়তো নেই, কিন্তু উপস্থিতি ছিল সব ব্যান্ডের উৎসস্থলে।

১৯৯৯ সালের ডিসেম্বর মাসে গৌতম চট্টোপাধ্যায় না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। কিন্তু তিনি রেখে গেছেন এক অন্তর্জাগতিক সংগীতবোধ, একটা সময়ের প্রতিবাদ, প্রেম ও প্রশ্নের সম্মিলিত সুর।

আজও যখন কেউ গলায় হারিয়ে যাওয়া প্রেমের ব্যথা বাঁধে, কিংবা শহরের নিষ্ফলা দুঃখ নিয়ে গান গায়, তখন দূর থেকে শোনা যায় সেই কণ্ঠ—

‘আমায় না হয় ভুলে যেও,
তবু তোমার কফিনে রাখো এই গানটা...’

Link copied!