‘লিচুর বাগানে’ গানের গীতিকার কে এই ছত্তার পাগলা

নেত্রকোনার ভাটি অঞ্চলের লোকশিল্পী ছত্তার তালুকদার, যিনি ‘ছত্তার পাগলা’ নামে পরিচিত ছিলেন, মৃত্যুর এক যুগ পর নতুন করে আলোচনায় এসেছেন তার সৃষ্টি ‘লিচুর বাগানে’ গানটির সুবাদে। নির্মাতা রায়হান রাফীর আসন্ন চলচ্চিত্র ‘তাণ্ডব’-এ গানটি ব্যবহৃত হওয়ায় তৈরি হয়েছে তুমুল সাড়া।

পবিত্র ঈদুল আজহায় মুক্তি পেতে যাওয়া সিনেমাটি নিয়ে যেমন আগ্রহ তৈরি হয়েছে, তেমনি ছত্তার পাগলার রচিত গানটি নিয়ে চলছে বিস্তর আলোচনা। কে এই ছত্তার পাগলা? কোথা থেকে এল এই গান? গানটির অন্তরালের গল্প নতুন প্রজন্মকে আবিষ্ট করছে।

নেত্রকোনার পূর্বধলার লালচাপুর গ্রামে জন্ম ছত্তার পাগলার। পরে বারহাট্টার নুরুল্লাচর গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। একেবারে মাটির কাছাকাছি থাকা এই শিল্পী ট্রেন, স্টেশন, হাটবাজারে গান গেয়ে জীবিকা চালাতেন। মুখে মুখে গান রচনা করতেন, খুব বেশি লেখাপড়া না জানলেও তার গান ছুঁয়ে যেত মানুষের হৃদয়। ভাটির জনজীবন, প্রেম, বঞ্চনা আর সমাজ-বাস্তবতা উঠে আসত তার সুরে ও কথায়।

গানগুলো মূলত মুখে মুখেই রয়ে যেত। তবে মোহনগঞ্জের চিকিৎসক আল মামুন চৌধুরী এই গানের ভাণ্ডার রক্ষা করেছেন। তার হাতেই লেখা রয়েছে ছত্তার পাগলার রচিত বহু গান, যার মধ্যে ‘লিচুর বাগানে’ অন্যতম।

গানটির প্রতীকী ভাষ্য প্রসঙ্গে ছত্তার পাগলা বলেছিলেন,যত্নের লিচুর বাগান দুষ্ট ছাগলে খেতে আসে, তাই বেড়া দিতে হয়-এ এক প্রেম-সংকেতের রূপক, যা ঘেটু গানের ধারায় বিশেষ আবেদন সৃষ্টি করে।

২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে মৃত্যুবরণ করেন ছত্তার পাগলা। মৃত্যুর ১১ বছর পর তার গান পৌঁছেছে দেশজুড়ে। ভাটির গণ্ডি পেরিয়ে এখন শহুরে সিনেমার রূপালী পর্দায়।

ছত্তার পাগলার জীবনের শেষভাগে নেত্রকোনার সাহিত্যিক রইস মনরমের সান্নিধ্যে এসেছিলেন তিনি। রইস মনরমের কাছে রয়েছে তার সংগৃহীত বহু গান, তার মধ্যে অন্যতম হলো ‘লিচুর বাগানে’। এই গান ও অন্যান্য রচনাগুলো নিয়ে শিগগিরই একটি গ্রন্থ প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে।

শাকিব লক্ষ্মী একটা ছেলে: জয়া আহসান

বিস্তারিত পড়ুন

‘তাণ্ডব’ সিনেমায় গানটি নতুন রূপে সজ্জিত করেছেন গায়ক-সুরকার প্রীতম হাসান। মূল সুর ধরে রেখে গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন প্রীতম, জেফার, আলেয়া বেগম ও মঙ্গল মিয়া। নতুন করে কিছু কথা যোগ করেছেন প্রীতম হাসান, মেহেদী আনসারি ও ইনামুল তাহসিন।

পরিচালক রায়হান রাফী জানিয়েছেন, পুরোনো দিনের একটি গানকে সমসাময়িক রূপে উপস্থাপনের চিন্তা থেকেই ‘লিচুর বাগানে’ গানটি নেওয়া হয়েছে। এতে একদিকে যেমন গ্রামীণ লোকগানের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়েছে, তেমনি নতুন প্রজন্মের কাছে ভাটির গানকে পৌঁছে দেওয়ার এক অসাধারণ প্রয়াসও বলা চলে।

ছত্তার পাগলা এখন আর শুধু ভাটির শিল্পী নন, তিনি বেঁচে আছেন তার সৃষ্টির মধ্যে। ‘লিচুর বাগানে’ তার পরিচয়পত্র হয়ে উঠেছে। এই গান শুধু এক প্রান্তিক শিল্পীর গানের প্রতিফলন নয়, এটি হয়ে উঠেছে মাটির গান, লোকঐতিহ্যের অংশ-যা নতুন যুগেও তার আবেদন হারায়নি।