ঢাকা মঙ্গলবার, ০৫ আগস্ট, ২০২৫

শ্রাবণঝরা দিনে মানিক মিয়া এভিনিউতে ৩৬ জুলাই উদযাপন 

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ৫, ২০২৫, ০৯:২৩ পিএম
মানিক মিয়া এভিনিউতে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মাধ্যমে ৩৬ জুলাই উদযাপিত। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

অগণিত তরুণ প্রাণের বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদমুক্ত হয় স্বদেশ। শেখ হাসিনার কবল থেকে লাল-সবুজের পতাকার সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ৩৬ দিনের রক্তাক্ত আন্দোলনে স্বৈরাচারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে কারফিউ ভেঙে ছাত্রদের এক দফার ডাকে রাজপথে নেমে আসে সর্বস্তরের জনতা।

জনরোষের কবলে গত বছরের ৫ আগস্ট তথা ৩৬ জুলাই পদত্যাগ এবং দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। নানা বর্ণাঢ্য আয়োজনে ৩৬ জুলাই উদযাপন করেছে সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা। মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) মানিক মিয়া এভিনিউতে অনুষ্ঠিত হয় বর্ণাঢ্য এই আয়োজন।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ফ্যাসিস্টের বিদায় উদযাপন, ঐতিহাসিক জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ, স্পেশাল ড্রোন ড্রামা ‘ডু ইউ মিস মি?’-সহ নানা আয়োজনে সাজানো ছিল ৩৬ জুলাই উদযাপনের এই আসর।

শ্রাবণের বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাজারো মানুষের ঢলে ভিন্ন এক ভালো লাগার পরিবেশ সৃষ্টি হয় মানিক মিয়া এভিনিউজুড়ে। হাতে লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে ও মাথায় পতাকা বেঁধে সমগ্র মানিক মিয়া এভিনিউতে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দেশপ্রেম মূর্ত করে তোলে সর্বস্তরের জনতা৷

সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীদের সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে দুপুর ১২টায় শুরু হয় দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠান। তারা একে একে পরিবেশন করে ‘এই দেশ আমার বাংলাদেশ’, ‘আয় তারুণ্য আয়’, ‘জীবনের গল্প’, ‘ওমা আর কেঁদো না’, ‘যাদের জন্য পেলাম আবার নতুন বাংলাদেশ’, ‘জারিগান’সহ ইসলামিক সংগীত। এরপর ‘কলরব শিল্পীগোষ্ঠী’ পরিবেশন করে ‘তোমার কুদরতি পায়ে’, ‘দে দে পাল তুলে দে’, ‘ধন ধান্যে পুষ্পভরা’, ‘ইঞ্চি ইঞ্চি মাটি’ ও ‘দিল্লি না ঢাকা’।

একক সংগীত পর্বে নাহিদ পরিবেশন করেন ‘পলাশীর প্রান্তর’ ও ‘৩৬ জুলাই’সহ দুটি গান। এরপর ‘নোঙর তোল তোল’, ‘তুমি প্রিয় কবিতা’, ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’, ‘চল চল’ ও ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা’ গানগুলো পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী তাশফি। গানের ফাঁকে ফাঁকে স্লোগানে প্রকম্পিত করে তোলে ছাত্র-জনতা। 

এরপর দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে বেলুন উড়িয়ে ফ্যাসিস্টের পলায়ন উদযাপন করা হয়। এরপর সংগীত পরিবেশন করেন ‘চিটাগাং হিপহপ হুড’। তারা গেয়ে শোনায় ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘আমরা আসছি ঢাকা কাঁপাইতে’-সহ কয়েকটি গান।

র‌্যাপার সেজান গেয়ে শোনায় ‘কথা ক’, ‘হুদাই হুতাশে’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’-সহ কয়েকটি র‌্যাপ সংগীত। ব্যান্ডদল শূন্য পরিবেশন করে ‘শত আশাদ’, ‘বেহুলা’, ‘রাজাহীন রাজ্য’ ও ‘শোন মহাজন’সহ কয়েকটি গান। এরপর মঞ্চে উঠেন কণ্ঠশিল্পী ইথুন বাবু ও মৌসুমি।

দলীয়ভাবে তারা পরিবেশন করে ‘আমাদের বাংলাদেশ’, পলাশ গেয়ে শোনায় মা’ মৌসুমি গেয়ে শোনায় ‘দেশটা তোমার বাপের নাকি’, ‘এখনো আমরা জেগে আছি’ ইত্যাদি। এরপর সংগীত পরিবেশন করেন সায়ান, ব্যান্ডদল সোলস, ওয়ারফেজ, বেসিক গিটার লার্নিং স্কুল, ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ব্যান্ডদল এফ মাইনর, কণ্ঠশিল্পী পারশা মাহজাবীন পূর্ণী, কণ্ঠশিল্পী এলিটা করিম। বিকেলে পাঠ করা হয় ঐতিহাসিক জুলাই ঘোষণাপত্র।

সবশেষে ছিল ড্রোন ড্রামা শো ‘ডু ইউ মিস মি?’। ড্রামাটি লিখেছেন ‘দ্যা অ্যানোনিমাস’। বাংলাদেশ সরকার এবং চীন সরকার কর্তৃক যৌথভাবে এই ‘ড্রোন শো’-তে প্রায় ২০০০ ড্রোন উড্ডয়নের মাধ্যমে জুলাইয়ের গল্প তুলে ধরা হয়।

জুলাইয়ে ঢাকাসহ সারা দেশের ছাত্র-জনতা স্রোতের মতো বেরিয়ে এসে আন্দোলনে নতুন প্রাণের সঞ্চার ঘটায় এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। সেই জীবন্ত মুহূর্ত ও স্লোগান এবং গ্রাফিতিসমূহ প্রদর্শন করা হয় ‘ড্রোন শো’-এর মাধ্যমে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতিকে পূণর্জাগরণে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সহযোগিতায় এই আয়োজনের ব্যবস্থাপনায় ছিল শিল্পকলা একাডেমি।