ঢালিউডের জনপ্রিয় নায়কদের মধ্যে আজও যিনি আলাদা হয়ে আছেন, যার অভিনয় ও স্টাইলে মুগ্ধ বর্তমান প্রজন্মের দর্শকরাও—তিনি চিত্রনায়ক সালমান শাহ। মাত্র চার বছরের অভিনয়জীবনেই তিনি অর্জন করেছিলেন এমন খ্যাতি, যা এখনো অমলিন।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সবাইকে স্তব্ধ করে না ফেরার দেশে চলে যান এই ক্ষণজন্মা নায়ক। প্রায় তিন দশক পরও দর্শক হৃদয়ে তিনি রয়ে গেছেন ঢালিউডের চিরচেনা হৃদয়জয়ী নায়ক হিসেবে।
সালমান শাহের মৃত্যুর প্রায় ২৯ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও অনেকে ভুলতে পারেন না সেই দিনের দৃশ্য। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিস্তব্ধ মর্গে শুয়ে থাকা সালমান শাহর নিথর দেহ আজও ভাসে রমেশের চোখে—যিনি তখন হাসপাতালের তরুণ ডোম।
তখনকার সেই রমেশই এখন মুসলমান, নাম রেখেছেন সেকেন্দার। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) এক গণমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘চিত্রনায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর বিষয়ে আবারও লেখালেখি হচ্ছে শুনেছি। আমরা তেমন বুঝি না, তবে শুনেছি এবার পরিবার হত্যা মামলার অনুমতি পেয়েছে। আমি তখন ঢামেক মর্গে চাকরি করতাম। হাজারো মানুষের ভিড়—সবাই কাঁদছে প্রিয় নায়কের জন্য। কেউ বিশ্বাসই করতে পারছিল না সালমান শাহ আর নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘তখন মর্গটা ছিল পুরনো। চিকিৎসকের নির্দেশে আমি ময়নাতদন্ত করি। আমার প্রিয় নায়কের বুকে আমি নিজেই ছুরি চালাই। ফরেনসিক চিকিৎসকের নির্দেশেই সবকিছু করতে হয়। হাজার হাজার লাশ কেটেছি জীবনে, কিন্তু সালমানের লাশের স্মৃতি আমি কোনোদিন ভুলতে পারব না।’
৩৫ বছর চাকরি শেষে বর্তমানে অবসর জীবন কাটাচ্ছেন এই প্রাক্তন ডোম সেকেন্দার।
গত সোমবার (২০ অক্টোবর) আদালত চিত্রনায়ক সালমান শাহের মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা করার নির্দেশ দেন। মামলাটি তদন্তের জন্য রমনা থানাকে নির্দেশ দেন ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সকালে রাজধানীর নিউ ইস্কাটন গার্ডেন এলাকার ভাড়া বাসায় পাওয়া যায় সালমান শাহের মরদেহ। তার বাবা প্রয়াত কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী প্রথমে অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেন। পরের বছর, ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই, তিনি মামলাটিকে হত্যা মামলা হিসেবে রূপান্তরের আবেদন করেন।
তদন্তের দায়িত্ব পরে থানা পুলিশের কাছ থেকে সিআইডি-র হাতে যায়। বিভিন্ন দফা তদন্তে সালমান শাহর মৃত্যু আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হলেও তার মা নীলা চৌধুরী সবসময়ই তা প্রত্যাখ্যান করেন।
২০১৬ সালে তদন্তভার যায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এর হাতে। ২০২০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তারা সংবাদ সম্মেলনে জানায়, সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন। পরে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আদালতে ৬০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
কিন্তু নীলা চৌধুরী সেই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন করেন, যা আদালত খারিজ করে দেয়। এরপর তিনি রিভিশন মামলা করেন এবং গত ২০ অক্টোবর আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করে হত্যামামলা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
সেই রাতেই নীলা চৌধুরীর পক্ষে তার ভাই মোহাম্মদ আলমগীর কুমকুম রমনা মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় সালমান শাহর সাবেক স্ত্রী সামিরা হকসহ ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে।
অন্য আসামিরা হলেন—সামিরা হকের মা লতিফা হক লুসি, ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই, খলনায়ক ডন, ডেভিড, জাভেদ, ফারুক, রুবী, আব্দুস ছাত্তার, সাজু ও রিজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ।




সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন