ঢাকার ধানমন্ডির মিলনায়তন ৭১-এ অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘ফিল্ম ফর চেঞ্জ: একটি জাতীয় চলচ্চিত্র ইনকিউবেশন প্রোগ্রামের প্রদর্শনী’। রোববার আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দর্শক, শিল্পী, শিক্ষাবিদ ও উন্নয়ন খাতের প্রতিনিধিরা।
অক্সফাম বাংলাদেশ ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির যৌথ আয়োজনে এটি ছিল ইনকিউবেশন প্রোগ্রামের সমাপনী আয়োজন। বছরের শুরুতে প্রোগ্রামে জমা পড়া ৩০০-এর বেশি গল্পের মধ্য থেকে বাছাই করা ১০ জন নির্মাতা কয়েক মাস ধরে প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও হাতে-কলমে কাজের সুযোগ পান।
প্রদর্শনীতে সারা দিন দেখানো হয় জলবায়ু পরিবর্তন, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা, শ্রমিক অধিকার, অর্থনৈতিক ন্যায্যতা ও অসমতা নিয়ে নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। আয়োজকদের ভাষায়, এটি শুধু উৎসব নয়, বরং সমাজ পরিবর্তনের ধারণা প্রচার ও উদ্যোগ এগিয়ে নেওয়ার একটি প্ল্যাটফর্ম।
উদ্বোধনী সেশনে আলোচনায় বক্তারা বলেন, চলচ্চিত্র মানুষের হৃদয়ে পৌঁছে দেওয়ার সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম। ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. লিজা শারমিন জানান, তারা এমন প্রতিভা গড়ে তুলতে চান যারা বিনোদনের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ গল্পও বলবে।
অক্সফাম বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আশীষ দামলে মনে করেন, তরুণরা যখন চলচ্চিত্রের মাধ্যমে প্রচার চালায় তখন তারা এমন ভাষা ব্যবহার করে, যা নীতিগত প্রতিবেদনের চেয়ে অনেক বেশি প্রভাব ফেলতে পারে।
জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত নির্মাতা গিয়াসউদ্দিন সেলিম বলেন, সিনেমা তখনই সফল হয় যখন তা বাস্তবতার সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত থাকে। তার মতে, প্রদর্শিত প্রতিটি গল্পই ছিল খাঁটি, সৎ ও দেশের ভবিষ্যতের জন্য প্রাসঙ্গিক।
সকালের প্যানেল আলোচনায় গিয়াসউদ্দিন সেলিম, টনি মাইকেল গোমেজ, রাকা নওশীন নওয়ার, আশীষ দামলে, প্রতিক আকবর, প্রফেসর ড. লিজা শারমিন, ড. গোলাম রহমান ও আফতাব হোসেন অংশ নেন।
আলোচনায় উঠে আসে, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র জনমত গঠন, ভুল ধারণা ভাঙা এবং অবহেলিত কণ্ঠ তুলে ধরতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
‘গল্প বলা, ভবিষ্যৎ গড়া: চলচ্চিত্র, উন্নয়ন এবং ডিজিটাল যুগ’ শীর্ষক সেশনে বক্তারা ডিজিটাল যুগে সামাজিক ইস্যু উপস্থাপনে আবেগ ও উদ্যোগের সেতুবন্ধন তৈরির গুরুত্ব তুলে ধরেন।
সমাপনী অনুষ্ঠানে ‘দ্য রিং’ চলচ্চিত্রের নির্মাতা আতিকুর রহমান চ্যাম্পিয়ন নির্বাচিত হন। ‘বিহিতক’-এর নির্মাতা সম্পূর্ণা গাঙ্গুলী প্রথম রানার-আপ এবং ‘মিলি’র নির্মাতা সুমন মালাকার দ্বিতীয় রানার-আপ হন।
অক্সফামের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাহমুদা সুলতানা সমাপনী বক্তব্যে বলেন, ‘আজ যে গল্পগুলো বলা হয়েছে, সেগুলোই আগামী দিনের পরিবর্তনের পথ নির্দেশ করবে।’
আয়োজকরা জানান, ‘ফিল্ম ফর চেঞ্জ’ তরুণ নির্মাতাদের জন্য নিয়মিত প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে এবং শিল্প-সমাজের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।