যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর নতুন একটি কর্মসূচি চালু করেছে, যেখানে নির্দিষ্ট কিছু দেশের নাগরিকদের ব্যবসা ও পর্যটন ভিসার জন্য আবেদন করার সময় সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৫ লাখ টাকা) পর্যন্ত জামানত জমা দিতে হবে।
জামানত আদায়ের এই প্রক্রিয়া আগামী ২০ আগস্ট থেকে শুরু হয়ে ১২ মাস চলবে। নতুন নিয়মের প্রধান উদ্দেশ্য হলো ভিসাধারীদের মধ্যে ভিসার মেয়াদ শেষ (ওভারস্টে) হওয়ার পরও যুক্তরাষ্ট্রে থাকার প্রবণতা কমানো।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, যারা ভিসার শর্ত মেনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দেশ ছাড়বে, তাদের জামানত ফেরত দেওয়া হবে।
তবে কানাডা ও মেক্সিকোর ভ্রমণকারী এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা ওয়েভার কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ৪০টির বেশি দেশের নাগরিক এর বাইরে থাকবেন। এ কর্মসূচির অধীন নাগরিকেরা ৯০ দিন পর্যন্ত ব্যবসা বা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা ছাড়া যেতে পারেন।
জামানত (ভিসা বন্ড) কী?
জামানত বা ভিসা বন্ড হলো একটি আর্থিক নিরাপত্তা, যা দিয়ে নিশ্চিত করা হয় যে ভিসাধারীরা ভিসার শর্ত মেনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়বে। বিদেশি নাগরিকরা যদি অনুমোদিত মেয়াদ শেষে দেশের বাইরে না যান, তবে জামানতের অর্থ বাজেয়াপ্ত করা হয়।
প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্র হাজার হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী, পর্যটক ও কর্মীকে অস্থায়ী নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসা প্রদান করে। কিন্তু অনেকেই নির্ধারিত মেয়াদ শেষে দেশ ছাড়েন না, যা আইনশৃঙ্খলার জন্য উদ্বেগের কারণ। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জামানত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
কাদের জন্য প্রযোজ্য?
জাম্বিয়া ও মালাবির ভ্রমণকারীরা এ নীতির প্রথম নিশানা হবেন। ২০ আগস্ট থেকে এই দুই দেশের বি-১ ও বি-২ ভিসার আবেদনকারীদের জামানত দিতে হবে। পরবর্তী সময় অন্যান্য দেশের ভিসাধারীরাও এ নিয়মের আওতায় আসতে পারেন, বিশেষ করে যেসব দেশের ভিসাধারীদের মধ্যে ওভারস্টে হার বেশি।
কীভাবে নির্ধারণ হবে জামানতের পরিমাণ?
জামানতের তিনটি স্তর রয়েছে—৫ হাজার, ১০ হাজার ও ১৫ হাজার ডলার। আবেদনকারীর ব্যক্তিগত পরিস্থিতি, ভ্রমণের কারণ, আয়, চাকরি, দক্ষতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা বিবেচনা করে কনস্যুলার কর্মকর্তা জামানতের পরিমাণ নির্ধারণ করবেন।
তবে কিছু ক্ষেত্রে জামানত মওকুফ করার সুযোগ থাকবে—যেমন: যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কর্মচারীদের যাত্রা অথবা জরুরি মানবিক প্রয়োজন।
এর আগে কি এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?
২০২০ সালে ট্রাম্প প্রশাসনের সময় একই ধরনের ভিসা বন্ড কর্মসূচি চালু করার চেষ্টা করেছিল। তবে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে তা কার্যকর হয়নি।
বিশ্বের অন্যান্য দেশও মাঝে মাঝে এমন ব্যবস্থা নিয়েছে। নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাজ্য অতীতে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর নাগরিকদের জন্য ভিসা বন্ড চালু করেছিল, কিন্তু পরবর্তীতে তা বাতিল করা হয়।
ভিসা ওভারস্টে হার বেশি কোথায়?
২০২৩ সালের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, আফ্রিকার বেশ কিছু দেশ, হাইতি, লাওস, মিয়ানমার ও ইয়েমেনের বি-১ ও বি-২ ভিসাধারীদের মধ্যে অনুমোদিত সময়ের পরও যুক্তরাষ্ট্রে থাকার হার সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া ট্রাম্প প্রশাসনের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা দেশগুলোতেও এই হার বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে প্রায় ৪ লাখ মানুষ ভিসা মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও যুক্তরাষ্ট্র ছাড়েননি। অভিবাসনবিষয়ক গবেষণাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মতে, যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে অবস্থানের একটি বড় অংশই ভিসা ওভারস্টে।
ভিসা বন্ড কর্মসূচির প্রভাব কী হতে পারে?
এই কর্মসূচি চালুর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে আরও কড়াকড়ি আনার চেষ্টা করছে। তবে ভিসাধারীদের মধ্যে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে, বিশেষ করে যাদের আর্থিক সামর্থ্য কম।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, জনমনে ভিসা বন্ড নিয়ে ভুল ধারণা থাকা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি যে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে বা তা জনমনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
পরবর্তীতে এই কর্মসূচির আওতায় আরও দেশ ও নাগরিকদের যোগ দেওয়া হতে পারে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী নিয়মে পরিবর্তন আনা হবে।