জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তীব্র বাগবিতণ্ডা দেখা দিয়েছে। ভারত পাকিস্তানকে ‘সন্ত্রাসীস্তান’ অভিযোগের পাল্টা জবাবে ভারতকে ‘আঞ্চলিক দাঙ্গাবাজ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে পাকিস্তান। রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) পাকিস্তানের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য ডন এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই দেশের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই জটিল। স্বাধীনতার পর থেকে চারটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। চলতি বছরের প্রথমার্ধে অধিকৃত কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর ভারত পাকিস্তানে বিমান হামলা চালায়। এতে দুই ডজনের বেশি মানুষ নিহত হয়। পাকিস্তান জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে। পরে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে সংকট প্রশমিত হয়। তারপর থেকে দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়ে ওঠে।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস অব পাকিস্তান (এপিপি) জানায়, গতকাল শনিবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ পরিষদের পঞ্চম দিনে এই বিতর্ক শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে প্রতিনিধি পর্যায়ে মুখোমুখি হন দুই দেশ। ভারতীয় প্রতিনিধি রেন্টালা শ্রীনিবাস পাকিস্তানকে ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘কোনও যুক্তি বা মিথ্যা কখনও টেরোরিস্টানের অপরাধকে ঢাকতে পারে না।’
জবাবে পাকিস্তান মিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি মুহাম্মদ রশিদ এই মন্তব্যকে ‘অত্যন্ত লজ্জাজনক’ বলে আখ্যা দেন। তিনি অভিযোগ করেন, ভারত এতটাই নিচে নেমেছে যে জাতিসংঘের এক সহযোগী সদস্য রাষ্ট্রের নাম বিকৃত করেছে।
রশিদ বলেন, ভারত শুধু সন্ত্রাসবাদের ধারাবাহিক অপরাধী নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়াকে আধিপত্যবাদী নকশা ও উগ্র আদর্শের কাছে জিম্মি করে রাখা এক ‘আঞ্চলিক দাঙ্গাবাজ’। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ভারতের ‘বেপরোয়া আচরণে’ মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘এই ধরনের ভাষা পরিপক্কতা বা দায়িত্বশীলতার প্রতিফলন ঘটায় না। বরং এটি ভারতের হতাশা এবং বিশ্বমঞ্চে তার তুচ্ছতাকেই প্রকাশ করে।’
জাতিসংঘ মিশনে পাকিস্তানের সেকেন্ড সেক্রেটারি দাবি করেন, ভারত নিজেই সীমান্তের বাইরে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা করে। তিনি অভিযোগ করেন, ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে নাশকতা ও লক্ষ্যবস্তু হত্যাকাণ্ডে জড়িত গোষ্ঠীগুলোকে অর্থায়ন ও নির্দেশনা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
তার ভাষ্য, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করা এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করা ভারতের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ড ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী দাবির দ্বিচারিতা প্রকাশ করে এবং দেখায় যে ভারত আসলে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা না করে বরং তাকে ইন্ধন জোগাচ্ছে। রশিদ জোর দিয়ে বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের অভিযোগ ‘তথ্য-বহির্ভূত’ এবং পাকিস্তানের নাম কলঙ্কিত করার চেষ্টা।
এর আগে জাতিসংঘে ভাষণে জয়শঙ্কর পাকিস্তানের নাম না নিয়ে বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই ভারত এমন এক প্রতিবেশীর মুখোমুখি, যে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্রস্থল।
রশিদ এর জবাবে জানান, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টার অন্যতম স্তম্ভ। তিনি ভারতের বিরুদ্ধে কাশ্মীরে অবৈধ দখল, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ আনেন। তার ভাষায়, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, আটক, মঞ্চস্থ এনকাউন্টার এবং সম্মিলিত শাস্তিই ভারতের কর্মকাণ্ডের উদাহরণ।
দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তির প্রতি পাকিস্তানের অঙ্গীকার তুলে ধরে রশিদ বলেন, ভীতি প্রদর্শন ও হুমকি দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তিনি ভারতকে সংলাপ ও কূটনীতির পথে আসার আহ্বান জানান।