ঢাকা রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফ্লোরিডায় ৭ হাজার বছরের পুরোনো নৌকা আবিষ্কার

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৫, ০৭:১১ পিএম
২০২২ সালে হারিকেন ইয়ান যখন স্থলভাগে আঘাত হানার পর এই ক্যানোটি আবিষ্কার হয়। ছবি- গার্ডিয়ান

ফ্লোরিডা যেন এক অদ্ভুত সব উপাধির ভান্ডার। গলফ, হাঙরের কামড় আর বজ্রপাতের বিশ্ব রাজধানী হিসেবে পরিচিত এ অঙ্গরাজ্য এবার যুক্ত হলো আরেকটি পরিচয়ে অর্থাৎ প্রাচীন ক্যানোর (কাঠের নৌকা) ভান্ডা। এর মধ্যে কিছু আবার প্রাগৈতিহাসিকও।

২০২২ সালে হারিকেন ইয়ানের পর ফোর্ট মায়ার্সের এক বাসিন্দার উঠোনে মাটি খুঁড়ে বেরিয়ে আসে একটি কাঠের ক্যানো। ঝড়ো হাওয়ার ধাক্কায় এটি নদীর তলদেশ থেকে ভেসে এসেছিল বলে ধারণা করা হয়। রাজ্য প্রত্নতাত্ত্বিকরা দীর্ঘদিনের কঠোর সংরক্ষণ শেষে এ আবিষ্কারকে তাদের সংগ্রহে যুক্ত করেছেন।

রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ফ্লোরিডার ঐতিহাসিক সম্পদ বিভাগে ইতোমধ্যে ৪৫০টিরও বেশি লগবোট বা ক্যানো সংরক্ষিত আছে। তবে নতুন পাওয়া ক্যানোটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটিই প্রথম মেহগনি কাঠে তৈরি নৌকা, যা ফ্লোরিডা নয়, বরং ক্যারিবিয়ান অঞ্চল থেকে আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নৌকার ভেতরে উদ্ধার হয়েছে ঊনবিংশ শতাব্দীর জাহাজের নিচের কিছু অংশ, কেরোসিন ল্যাম্পের ভাঙা টুকরো এবং দুটি নারকেলের খোসা। এগুলো সম্ভবত পানীয় রাখার পাত্র হিসেবে ব্যবহার করা হতো।

প্রায় ৯ ফুট (২.৭ মিটার) দীর্ঘ ভঙ্গুর ক্যানোটির বয়স নির্ধারণে চলছে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা। গবেষকরা মনে করছেন, এটি হয়তো ষোড়শ শতাব্দীতে এই অঞ্চলে আসা স্প্যানিশ অভিযাত্রীরা বানিয়েছিল। কার্বন ডেটিং এখনো নিশ্চিত তথ্য দেয়নি। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ক্যানো তৈরির অনেক আগেই ব্যবহৃত কাঠটি মারা গিয়েছিল।

ফ্লোরিডার ডেপুটি স্টেট প্রত্নতাত্ত্বিক স্যাম উইলফোর্ড বলেন, ‘এটি সাধারণ ক্যানোর মতো নয়। এর আকৃতি ও কাঠের ধরন স্পষ্ট করে দেয় যে এটি স্থানীয় নয়। কাঠে লোহার হাতিয়ার ব্যবহারের চিহ্ন আছে, যা ইউরোপীয়দের আগমনের পরই আমেরিকায় দেখা যায়।’

হারিকেন ইয়ান ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ঘণ্টায় ১৫০ মাইল বেগে আঘাত হানে। সঙ্গে ছিল ১৮ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস। দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্লোরিডায় এ ঝড় ‘বিপর্যয়কর’ ক্ষতি সাধন করে। সেখান থেকেই এই ক্যানোর খোঁজ মেলে।

প্রত্নতাত্ত্বিকরা জানান, ফ্লোরিডায় এর আগে ২০০টিরও বেশি প্রাচীন ক্যানো বিভিন্ন স্থানে পাওয়া গেছে। এগুলো প্রধানত আদিবাসী আমেরিকান উপজাতি যেমন মাইকোসুকি ও সেমিনোলরা ব্যবহার করত। রাজ্যের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ জলাভূমি হওয়ায় ক্যানো তাদের জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল।

ফ্লোরিডায় পাওয়া সবচেয়ে পুরোনো ক্যানো অরল্যান্ডোর কাছে আবিষ্কৃত, যা ৭ হাজার বছরের পুরোনো বলে ধারণা করা হয়। এ কারণে রাজ্যটিকে পশ্চিম গোলার্ধের প্রাচীন ক্যানোর ভান্ডার বললেও ভুল হবে না।

সংরক্ষিত এসব ক্যানো জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয়। এগুলো রাখা আছে রাজ্যের প্রত্নতাত্ত্বিক সংগ্রহশালায়। তবে একটি ঋণ কর্মসূচির মাধ্যমে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জাদুঘরে ২৬টি ক্যানো প্রদর্শিত হচ্ছে।

উইলফোর্ড বলেন, ‘প্রতিটি ক্যানো একেকটি গল্প বহন করে। প্রতিটি অনন্য। নতুন ক্যানোটিও তার ব্যতিক্রম নয়। এ আবিষ্কার আমাদের ইতিহাসের ভান্ডারকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।’