এক দিনের অনুপস্থিতির শাস্তি থেকে গানের অনুরোধ, তারপর সম্মান আর আদর- এই ছিল কনার চোখে মোশাররফ করিমের শিক্ষক রূপ। তখনো কেউ জানত না, এই ‘শামীম ভাইয়া’ এক দিন হয়ে উঠবেন দেশের তুমুল জনপ্রিয় অভিনেতা, আর সেই ছাত্রী কনা হয়ে উঠবেন সংগীতাঙ্গনের বড় তারকা।

স্মৃতির খাতা উল্টে কনা জানান, দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় রাজধানীর নাখালপাড়ার ই-হক কোচিংয়ে ভর্তি হন তিনি। তখনই তার শিক্ষক ছিলেন মোশাররফ করিম। নামটা যদিও তখন ‘শামীম ভাইয়া’ হিসেবেই চেনা। বাংলা আর ইংরেজি পড়াতেন তিনি। কিন্তু ‘রাখি স্যার’ হিসেবে ছিলেন ছাত্রছাত্রীদের প্রিয়।

‘আমি কিন্তু তেমন ভালো ছাত্রী ছিলাম না। প্রায়ই বকা খেতাম,’- গণমাধ্যমে প্রচারিত একটি সাক্ষাৎকারে হেসে বলেন কনা। একবার ক্লাস মিস করায় ডেকে আড় চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেন- ‘তুমি কাল আসো নাই কেন?’ কনা জানান, বাংলা একাডেমিতে গান গাইতে গিয়েছিলেন, প্রতিযোগিতা ছিল।
শুনেই মোশাররফ করিম বললেন, ‘তাহলে একটা গান শোনাও।’ ভয়ে ভয়ে গেয়ে ছিলেন ‘খোল খোল খোল বধূয়া’। শুনে প্রশংসা করে বলেন, ‘খুব ভালো গাইছ, যাও’। সেখান থেকেই বদলে যায় কনার অবস্থান- সময়মতো না এলেও সামনের বেঞ্চে বসার সুযোগ, ক্লাস শুরু হতো ‘ভক্তিমূলক গান’ দিয়ে।
আজকের দিনে কনা আর মোশাররফ করিম দুই আলাদা জগতের দুই তারকা হলেও, পুরোনো সেই শিক্ষক-ছাত্রীর সম্পর্ক রয়ে গেছে আগের মতোই। কনার ভাষায়, ‘এখন দেখা হলে শামীম ভাই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলেন, ‘কনা না? কত বড় হয়ে গেছ তুমি, এত বড় স্টার!’ এমনভাবে বলেন, যেন আমি উনার চেয়েও বড় স্টার!’

মজার ব্যাপার হলো, কনার গাওয়া প্রথম চলচ্চিত্রের হিট গান ‘লাজুক পাতার মতো লজ্জাবতী’ও ছিল মোশাররফ করিম অভিনীত ‘প্রজাপতি’ ছবির গান। যদিও সেই গানে অভিনয় করেছিলেন মৌসুমী ও জাহিদ হাসান, তবু স্মৃতির অদ্ভুত এক সংযোগ হয়ে গেছে।
সেই ‘রাখি স্যার’ এখন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেতাদের একজন। আর সেই ছাত্রী কনা- আজকের গানের তারকা। সময় বদলায়, কিন্তু কিছু সম্পর্ক মুছে না। কনার চোখে মোশাররফ করিম আজও সেই মানুষ, যিনি গান শুনে বলেছিলেন- ‘খুব ভালো গাইছ, যাও’।
আপনার মতামত লিখুন :