রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


আরফান হোসাইন রাফি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৫, ০১:২১ এএম

আমি নিজেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি না, গান নিয়ে দেখি

আরফান হোসাইন রাফি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৫, ০১:২১ এএম

সংগীতশিল্পী নাহিদ হাসান। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

সংগীতশিল্পী নাহিদ হাসান। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

আধুনিক বাংলা গানের জগতে যখন অনেকেই ছুটেছেন ভিউ এবং টাকার পেছনে, তখন শিল্প ও সাহিত্যকে বাঁচাতে অভাবকে আঁকড়ে ধরেই কেউ কেউ স্বপ্ন দেখছেন ভিন্ন আঙ্গিকে। তেমনই একজন স্বপ্নবাজ সংগীতশিল্পী নাহিদ হাসান। ‘তোমার পিছু ছাড়বো না’খ্যাত এ শিল্পীর ভাবনা, স্বপ্ন ও সৃষ্টির গল্প ভাগ করেছেন দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে। তুলে ধরেছেন আরফান হোসাইন রাফি-

শুরুতে আপনাকে বলার সুযোগ দিতে চাই, এমন কিছু বলুন, যা আপনি বলতে চান, কিন্তু কখনো জানতে চাওয়া হয়নি। 

বিশ্বসাহিত্যে আমার পছন্দের যত কবি আছেন, তাদের প্রত্যেকের লেখা আমার প্রিয় কবিতাগুলো গান হয়ে উঠুক।

গানের কথা ও সুরে ভিন্নধর্মী ধারা তৈরি করলেন কীভাবে?

হা হা, করলাম নাকি! আমি জানি না, কতটা ভিন্ন ধারায় গান করি বা করতে পারি। গানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকেই গানকে একেকভাবে দেখে, আমিও আমার মতো করে দেখি। সেই জায়গা থেকে অন্যদের তুলনায় কতটুকু আলাদা ছাপ ফেলতে পারলাম বা পারছি, সেটা আসলে আমার ভাবনার বিষয় নয়। হ্যাঁ তবে, আমার প্রতিটি গানে আমি একটি গল্প বলার চেষ্টা করি, যে গল্পটা মানুষ গান শোনার পর দৃশ্যায়ন করতে পারে; যে গল্পটা আমার, তাদের এবং সবার। আরেকটা বিষয় হলো, আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত যেসব দৃশ্য ঘুরে বেড়ায় লুপের মতো, সেগুলোকে সুরে ধরার চেষ্টা করি। প্রথমবার কেউ শুনলে যেন বলে ওঠে, ‘হ্যাঁ, এটা তো আমারই গল্প।’ এখন এটা সাধারণ না অসাধারণ, কোন পর্যায়ে পড়ে তা আমি জানি না; সেটা শ্রোতারাই ঠিক করবেন।

কবিতা থেকে গান তৈরির সময় অন্ত্যমিলের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু? 

গানের অন্ত্যমিল ব্যাপারটি গান লেখার বেসিক শিক্ষার মধ্যে পড়ে। যেকোনো ফরম্যাটের যেকোনো লেখাই গান হয়ে উঠলে অন্ত্যমিল থাকাটা জরুরি। অন্ত্যমিল ঠিক না রেখে গান লেখা এক ধরনের দুর্বলতা বলে আমি মনে করি। এখন পর্যন্ত যত কবিতা থেকে গান করেছি, প্রত্যেকটিতেই অন্ত্যমিল ঠিকঠাক রাখার চেষ্টা করেছি। সুরের খাতিরে হয়তো একটু এদিক-ওদিক করতে হয়েছে, তবে আমি চেষ্টা করি অন্ত্যমিল ঠিক রাখার। একটা কবিতা যখন গান হয়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি করে, তখন আমি সেই কবিতার কবির কাছ থেকে কাটাছেঁড়া করার অনুমতি নিয়ে রাখি। ওই স্বাধীনতাটুকু পেলেই গানটা বানানোর কাজ শুরু করি। ‘শুকনো গোলাপ’, ‘বিনায়ক’, ‘শুনতে পাই’ সব কয়টি গানে লক্ষ্য করলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। 

কিংবদন্তি শিল্পীদের মধ্যে কার গান আপনাকে ভেতর থেকে নাড়া দেয়? 

খুবই কঠিন প্রশ্ন! এত প্রিয় শিল্পীর মধ্যে কয়েকটা নাম বলা বেশ মুশকিল! বাংলা গানের কথা যদি বলি, ছোটবেলায় বাড়িতে বড় ভাইয়া খুব গান শুনত। সেই সময় সকালে আমার যখন ঘুম ভাঙত, পাশের রুমে ক্যাসেটে যাদের গান বাজতো তারা হলেন কবীর সুমন, নচিকেতা চক্রবর্তী, মান্না দে বা অঞ্জন দত্ত। মাঝেমধ্যে সলীল চৌধুরী বাজতো, বাজতো হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। এভাবেই আমার গান শোনার কান তৈরি হয়েছিল। আজও কবির সুমনের অনেক আগে বানানো গান আমি প্রথমবার শুনলে আন্দোলিত হই।  

পারিবারিক অভাব কিংবা মধ্যবিত্তের আবেগ গানের চেতনাকে কতটা প্রভাবিত করে?

আমি বিশ্বাস করি, গান, কবিতা বা শিল্প-সাহিত্যের যেকোনো শাখাতেই আমরা কাজ করি না কেন, অভাবটা জরুরি। সে অভাবটা আর্থিক হতে হবে এমনটা নয়; হতে পারে ভালোবাসার অভাব, ভালো সময়ের অভাব, বাবার অভাব, একজন বন্ধুর অভাব কিংবা একটি সুষ্ঠু পরিবেশের অভাব। শিল্পের ক্ষেত্রে অভাব থাকাটা খুব জরুরি। অভাব ও আবেগ মিলেই আসলে তৈরি হয় ম্যাজিক।

গানের জগতে নাহিদ হাসান হয়ে ওঠার পথে অনুপ্রেরণা কী ছিল?

আমাদের পরিবারে আমার চেয়ে ভালো গান করতেন বাবা, বড় চাচা, আপু ও ভাইয়ারা। সেই সূত্র থেকেই গানটা গলায় পাওয়া। অনুপ্রেরণা হিসেবে আমার বোধকেই আমি এগিয়ে রাখব। আমার বলা গল্পগুলো আমি বলতে চাই, যে দিন এ সিদ্ধান্ত নিলাম, সে দিন থেকে আমি আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা বা সাহস হয়ে গেলাম। এ ছাড়া মেঝো ভাইয়া, ভাবি, রাকিবুল হায়দার ভাই, আমার কাছের ভাই ব্রাদারগণ অথবা নতুন কোনো ভালো গান শুনলেও ভেতরে অনুপ্রেরণা কাজ করে।

‘বাবার সাইকেল’, ‘বাবার ছেঁড়া জামা’ বা অ্যাকোস্টিক ভার্সনে গাওয়া ‘ইচ্ছে আম্মার’ মতো অনেক বাস্তববাদী গান আপনি করেছেন। এসব গান নির্মাণের অন্তরালটা জানতে চাই।

ওই যে বললাম অভাব। অভাব থেকেই এসব গানের জন্ম।

বাংলা নাটকে আপনার গান করা হয়েছে, সিনেমায় কণ্ঠ দেওয়ার আগ্রহ কতটুকু?

সিনেমায় গান করার সুযোগ আমার এসেছিল, কলকাতার এক সিনেমায়। কিন্তু গানটা ভালো না লাগায় আমি করিনি। আমার মনে হয়েছে, কথা, সুর সবকিছু মিলিয়ে আমার সত্তার সঙ্গে যাচ্ছিল না। প্রেক্ষাপট, গানের গল্প, এবং পূর্ণ স্বাধীনতা পেলেই সিনেমায় গান করতে চাই।

গান করতে এসে আপনি কী পেয়েছেন এবং কী হারিয়েছেন?

কী হারিয়েছি, সেই তালিকা একান্ত আমার কাছে থাক। কী পেয়েছি, সেটাই আমার কাছে মূল বিষয়। সহজভাবে বলি, এই যে আমি এখন আপনার সঙ্গে কথা বলছি, হয়তো কোনো পত্রিকায় তা ছাপা হবে—এ তো গান দিয়েই ঘটেছে। এসব প্রাপ্তি কি অস্বীকার করা যায়?

গানে নিয়মিত না থাকার কারণ কী?

আমি কমার্শিয়াল গান খুব বেশি করতে চাই না, কিংবা করছি না। আমি বেছে গান করা মানুষদের দলে। আমাদের পূর্বপুরুষেরা মিউজিককে যেভাবে ধারণ করতেন, আমি সেই জায়গা থেকে তাদের উত্তরসূরি হিসেবে গানকে সামনের দিকে একটু এগিয়ে নিতে চাই। তাই একটু চিন্তাভাবনা করি, যে গানটি করছি, সেটা আমাদের শিল্পকে একটু এগিয়ে নিচ্ছে কি না, নাকি নিচে টেনে ধরছে। যখন মনে হয় নিচে টেনে ধরছে, তখন সেই গান করি না, ফেলে দিই।

শিল্পকে রক্ষা করতে গিয়ে আপনার ক্যারিয়ারে কী প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে?

তা হয়তো কিছুটা দিয়েছে। তবে সেসব নিয়ে আমার কোনো আফসোস নেই, করি না। ক্যারিয়ারে পিছিয়ে যাওয়া, অর্থনৈতিক অভাব অথবা কে আমার চেয়ে এগিয়ে গেল, এসব নিয়ে চিন্তা করলে কি বিনায়ক বানানো হতো?
সাফল্যের সংজ্ঞা তো একেক জনের কাছে একেক রকম। একটা ছোট্ট উদাহরণ দিই, ‘তোমার পিছু ছাড়বো না’ গানের যখন ২০ মিলিয়ন ভিউ অতিক্রম করছিল, তখনো আমি এ ঢাকা শহরে সকালে ঘুম থেকে উঠে দুপুরে কী খাব, তা জানতাম না। দুপুরে খাওয়ার টাকা থাকত না। খাবারের জন্য বের হয়ে হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে ভাবতাম, কার কাছে টাকা চাইব? টাকা পেলে খেতে ঢুকতাম। যদি প্রচলিত ধারার গান করতাম, হয়তো গল্পটা ভিন্ন হতো। তখন আমি ঘুম থেকে উঠে ভাবতাম কোথায় খাব, কোন হোটেলে খাব! তাই না? এসব আসলে জার্নির অংশ। এসব বিক্রি করতে চাই না। আমি জেনে-শুনেই এই পথে হাঁটছি এবং আমি জানি আমি কী করতে চাই!

‘ঘৃণা থাকুক’ গানের কথায় ‘তোর ভাতের প্লেটে আমার দেওয়া কিছু ঘৃণা থাকুক’ এমন তীক্ষ্ম ও অসাধারণ অনুভূতিটি কীভাবে এসেছে?

এ রকম একটি অনুরূপ লেখা আমি ফেসবুকে পড়েছিলাম আমার এক পরিচিত ভাইয়ের ওয়াল থেকে। সেখান থেকেই আসলে কথাগুলো মাথায় গেঁথে যায়। এ ছাড়া লাইনটি তৈরির পেছনে একটা ইন্টারেস্টিং বিষয়ও আছে! অনেক বছর আগে হারিয়ে যাওয়া এক মানুষের সঙ্গে রেস্টুরেন্টে খেতে বসেছিলাম। রেস্টুরেন্টে ঢুকতে আমার একটু দেরি হয়েছিল বলে, সেই মানুষ অভিমান করেছিল। অভিমান চলা অবস্থায় সে চুপচাপ খাবার সার্ভ করছিল। সেই খাবার সার্ভ করার সময় তার একটা চুল আমার খাবারের প্লেটে পড়েছিল। সেই চুল আমি ফেলে না দিয়ে প্লেটের এক পাশে রেখে খাবার খাচ্ছিলাম। সে দৃশ্য দেখে বিরক্ত হয়ে বলেছিল, ‘চুল সরাচ্ছেন না কেন প্লেট থেকে?’ আমি মুচকি হেসে বলেছিলাম, ‘আমার ভাতের প্লেটে তোর চুল থাকুক।’

এই কথাটিকেই পরে উল্টোভাবে গানে লিখেছিলাম।

সাম্প্রতিক রিলিজ হওয়া ‘বাবার সাইকেল’ গানটি প্রকাশ করতে দীর্ঘ বিলম্বের কারণ কী ছিল এবং প্রকাশের পর কেমন লাগছে?

‘বাবার সাইকেল’ গানটি যখন লিখি, তখন বাবা জীবিত ছিলেন, আর গানটি যখন প্রকাশ পায়, তখন বাবা আর নেই। আমার কাছ থেকে শোনা এটাই বাবার শেষ গান। তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমি যখন মারা যাব, তখন গানটি গাইতে গাইতে আমাকে বিদায় দিস।’ সে জন্য ‘বাবার সাইকেল’ আমার খুব আপন গান।  আর প্রকাশের ক্ষেত্রে বিলম্বের কারণ ছিল করোনা এবং কিছু প্রাতিষ্ঠানিক ইস্যু। অবশেষে গানটি এসেছে, এটাই আনন্দের।

সুযোগ পেলে কাকে আপনার কথা ও সুরে গান করাতে চান? 

আমার লেখা গান কবীর সুমন এবং নচিকেতার কণ্ঠে শুনতে চাই। এ ছাড়া শিলাজিৎ, অনুপম রায়ের কণ্ঠে শুনলেও আনন্দিত হবো। তা ছাড়া বাপ্পা দা, মুন ভাই এবং ফিমেল আর্টিস্টের ক্ষেত্রে এলিটা আপু, ন্যান্সি আপু আছেন। যারা আমার ভাবনাটা তাদের কণ্ঠে তুলে নিলে উচ্ছ্বসিত বোধ করব। 

বাংলা মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে কী কী পরিবর্তন প্রয়োজন বলে মনে করেন?

আমার মনে হয়, এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য যে যোগ্যতা প্রয়োজন, সেটি আমার এখনো হয়নি। তবে সম্মিলিতভাবে সবাই যদি ভালো গান শ্রোতাদের উপহার দেন, একসময় শ্রোতাদের রুচির পরিবর্তন হবে। যদিও প্রত্যেক গায়ক তার সেরা সৃষ্টিটিই তার শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে দেন।

শেষ প্রশ্ন, শৈশবে আপনার স্বপ্ন কী ছিল, এবং একজন স্বপ্নবাজ হিসেবে এখন নিজেকে নিয়ে কী স্বপ্ন দেখেন?

শৈশবে আমি যখন কোনো সিনেমা দেখতাম, নায়ক গভীর রাতে বাসায় ঢুকলে, যেই নাইটগার্ড নায়কে সেলুট করত, আমার ইচ্ছে করত, সেই নাইটগার্ড হতে। আমি কিছু দিন আগে নামাজ পড়ে একটি কবিতা লিখেছি। সে দিন আমার মনে হচ্ছিল, যদি আমি মুচি হতে পারতাম, তবে মানুষের মুখ দেখতে হতো না। পা আর জুতা দেখেই একটা জীবন কেটে যেতে পারত। মানুষকে চেনা ও জানার যন্ত্রণা কিছুটা কমত। মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের কৃত্রিমতাটা কমত। এসব কথা বাদ দিই, আমি আসলে নিজেকে নিয়ে এখন স্বপ্ন দেখি না, গানকে নিয়ে দেখি। আমার তৈরি গানগুলোকে সুন্দরভাবে প্রকাশ করতে পারাটাই বর্তমান স্বপ্ন। আমি আমার অনেক গান রেডি করে রেখেছি; পারিপার্শ্বিক নানা সমস্যার কারণে প্রকাশ করতে পারছি না। গান বানানোর পর রিলিজ না করতে পারলে, প্রসবের পর বাচ্চাকে আলোর মুখ দেখাতে না পারার মতো কষ্ট হয়, তাই বর্তমান স্বপ্ন হলো গানগুলো মানুষকে সুন্দরভাবে শোনানো।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!