ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫

অশ্বগন্ধার উপকারিতা-অপকারিতা

ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ২০, ২০২৫, ০২:৩৭ পিএম
অশ্বগন্ধা ছবি: সংগৃহীত

আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা ও ভেষজ চর্চায় অশ্বগন্ধা বহু শতাব্দী ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি ভারতীয় জিনসেং নামেও পরিচিত। শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে এর বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে। তবে এর উপকারিতা যেমন অনেক, তেমনি কিছু অপকারিতাও অস্বীকার করা যায় না।

অশ্বগন্ধার উপকারিতা কি কি?

অশ্বগন্ধা মূলত একটি অ্যাডাপ্টোজেন, যা শরীরকে মানসিক চাপ মোকাবিলায় সহায়তা করে। এর গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপকারিতা হলো:

# স্ট্রেস ও উদ্বেগ কমায়
# মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে
# রক্তচাপ ও ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে
# শরীরের শক্তি ও সহনশীলতা বাড়ায়
# ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে
# ঘুমের গুণমান উন্নত করে (ইন্সম্নিয়া  সমস্যা কমায়)
# বয়ঃসন্ধিকালের হরমোন ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে

অশ্বগন্ধার অপকারিতা 

যদিও এটি প্রাকৃতিক ও ভেষজ উপাদান, তবুও কিছু ক্ষেত্রে অপকারিতা দেখা দিতে পারে:

# অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে পেটের সমস্যা, ডায়রিয়া বা গ্যাস্ট্রিক হতে পারে
# নিম্ন রক্তচাপের রোগীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে
# গর্ভবতী নারীদের জন্য এটি নিরাপদ নয় – গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে
# থাইরয়েডের রোগীদের সতর্কভাবে ব্যবহার করা উচিত, কারণ এটি থাইরয়েড হরমোন বাড়াতে পারে

অশ্বগন্ধার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

কিছু সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত:

# মাথাব্যথা  
# তন্দ্রাচ্ছন্নতা  
# বমি বমি ভাব  
# হজমের সমস্যা  
# অ্যালার্জি (খুব কম ক্ষেত্রে)

সব সময় চিকিৎসকের পরামর্শে সেবন করাই নিরাপদ।

অশ্বগন্ধা তেলের উপকারিতা

অশ্বগন্ধা তেল ব্যবহৃত হয় মূলত বাহ্যিক প্রয়োগে, যেমন:

# ব্যথা ও প্রদাহ কমাতে (বিশেষত জয়েন্ট ও পেশিতে)  
# মাসল রিল্যাক্সেশনে সহায়ক
# চুল পড়া কমাতে ও স্ক্যাল্পকে পুষ্টি দিতে
# ত্বকের শুষ্কতা ও চুলকানি কমাতে কার্যকর

এটি ম্যাসাজ অয়েল হিসেবে ব্যবহার করা যায়, বিশেষ করে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায়।

ছেলেদের জন্য অশ্বগন্ধার উপকারিতা

ছেলেদের ক্ষেত্রে অশ্বগন্ধার অনেক গোপন উপকারিতা রয়েছে:

# টেস্টোস্টেরন হরমোনের উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে
# পুরুষত্ব বৃদ্ধিতে সহায়ক (লিবিডো ও যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি)
# বীর্যের মান ও সংখ্যা উন্নত করে  
# ফিটনেস ও পেশির গঠনে সহায়ক
# কর্মক্ষমতা ও স্ট্যামিনা বৃদ্ধি করে

মেয়েদের জন্য অশ্বগন্ধার উপকারিতা

নারীদের জন্যও অশ্বগন্ধা অত্যন্ত উপকারী:

# হরমোন ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে
# পিরিয়ড সংক্রান্ত সমস্যা (অনিয়ম, ব্যথা) কমায় 
# মেনোপজের উপসর্গ যেমন গরম অনুভব, মুড সুইং, ঘুমের সমস্যা ইত্যাদিতে সহায়তা করে
# স্ট্রেস ও ক্লান্তি দূর করে
# ত্বকের উজ্জ্বলতা ও চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করে

অশ্বগন্ধা কিভাবে খাবেন?

# পাউডার আকারে: ১/২ চা চামচ গরম দুধ বা মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।  
# ক্যাপসুল/ট্যাবলেট: বাজারে ভেষজ দোকানে পাওয়া যায় – ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ডোজ নিতে হবে।  
# চা বানিয়ে: অশ্বগন্ধা গুঁড়ো দিয়ে হালকা গরম পানিতে ফুটিয়ে চা বানিয়ে খাওয়া যায়।

উপযুক্ত সময়: রাতে ঘুমানোর আগে খেলে ঘুম ভালো হয় এবং শরীর আরাম পায়। সকালে খালি পেটে খেলেও উপকার পাওয়া যায়।

খালি পেটে অশ্বগন্ধা খেলে:

# শরীর ডিটক্স হয়  
# মেটাবলিজম বাড়ে  
# স্ট্রেস লেভেল কমে  
# হরমোনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়

তবে যাদের পেটে গ্যাস বা অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে, তারা দুধ বা খাবারের পরে খেতে পারেন।

অশ্বগন্ধা প্রকৃতির একটি দুর্দান্ত ভেষজ উপহার, যা সঠিকভাবে ব্যবহারে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে সহায়তা করে। তবে যেকোনো ভেষজ উপাদানের মতোই এটি অতিরিক্ত গ্রহণ করলে হতে পারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। তাই যেকোনো ধরনের নিয়মিত সেবনের আগে একজন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।