আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সকালে নাস্তার গুরুত্ব অপরিসীম। দিনের শুরুতেই একটা পুষ্টিকর নাস্তা শরীর ও মনের জন্য তাজা করে, শক্তি জোগায়। আর বিকেলে চায়ের কাপ হাতে বসে এক ধরনের আরাম আর আলাপ-আলোচনার আনন্দ পাওয়া যায়। কিন্তু ভাবুন তো, সকালে পৃথিবীতে নাস্তা খেয়ে বিকেলে যদি চাঁদে গিয়ে চা খাওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়!
শুনতে যেমন অবাস্তব, তেমনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দ্রুত উন্নতির যুগে এ ধরনের কল্পনাও হয়তো খুব দূরের কথা নয়।
বিশ্বব্যাপী মহাকাশ গবেষণার অগ্রগতিতে চাঁদে মানুষের বসবাস বা পর্যটনের স্বপ্ন আর অতীতের কল্পকাহিনি নয়। নাসার ‘আরমান’ প্রকল্প থেকে শুরু করে চীনের ‘চন্দ্রযান’ মিশন—সবই চাঁদের গহ্বর ও পরিবেশ সম্পর্কে তথ্য এনে দিচ্ছে। এভাবে ধীরে ধীরে চাঁদে বসবাস বা পর্যটন সম্ভব হলে বিকেলে চাঁদে গিয়ে চা খাওয়ার কথা ভাবা অদ্ভুত হবে না।
চাঁদের পরিবেশ একেবারেই পৃথিবীর থেকে আলাদা। সেখানে বাতাস নেই, তাপমাত্রার পার্থক্য প্রচুর, মাধ্যাকর্ষণ পৃথিবীর চেয়ে এক ষষ্ঠাংশ। এমন পরিস্থিতিতে চা খাওয়া বা রান্নার জন্য বিশেষ প্রযুক্তি দরকার। একটি বিশেষ রকেটের মাধ্যমে যাত্রীরা চাঁদে পৌঁছবে, সেখানে জীবনযাত্রার জন্য ‘লুনার বেস ক্যাম্প’ তৈরি হবে, যেখানে বায়ুমণ্ডল নিয়ন্ত্রণ, তাপমাত্রা বজায় রাখা ও খাবার প্রস্তুতির সুবিধা থাকবে।
মহাকাশ পর্যটন সম্প্রতি বাস্তবতায় পরিণত হতে শুরু করেছে। পৃথিবীর কক্ষপথে পর্যটকদের চড়া মূল্য দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে চাঁদেও পর্যটন কেন্দ্র তৈরি হলে সেখানে চা-কফি পরিষেবা দেওয়া স্বাভাবিক হবে। সেই সঙ্গে পৃথিবীর সকালের নাস্তা খেয়ে বিকেলে চাঁদে এসে চা খাওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
চাঁদের মাটিতে চা খাওয়ার জন্য শুধু পরিবেশ নয়, খাবারের সুরক্ষাও গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্য সংরক্ষণ, পানি সরবরাহ এবং চায়ের পানি ফুটানোর প্রযুক্তি অবশ্যই উন্নত হতে হবে। বর্তমানে পানির অভাব চাঁদের বড় বাধা। তবে বিভিন্ন গবেষণায় চাঁদের বরফ ও পানির উৎস নিয়ে এরই মধ্যে আশাব্যঞ্জক তথ্য পাওয়া গেছে।
আমাদের সকালের নাস্তা আর বিকেলে চাঁদে চা খাওয়ার ধারণা বোধহয় এখন অনেকের কাছে কল্পকাহিনি মনে হবে। তবে প্রযুক্তির অগ্রগতি, মহাকাশ অনুসন্ধানের জোরালো পদক্ষেপ এবং মানব জাতির জেদ একদিন এই স্বপ্নকে সত্যি করে তুলবে। হয়তো আগামী কয়েক দশকে চাঁদের সেই বেস ক্যাম্পে বসে আমরা পৃথিবীর সকালের নাস্তার কথা স্মরণ করব আর হাতে চায়ের কাপ নিয়ে বলব—আজকের দিনটা যেন সত্যিই অসাধারণ!
আপনার মতামত লিখুন :