ঈদের ছুটি কেবল উৎসবের সময় নয়, বরং এটি আমাদের ব্যস্ত জীবনের একটুখানি স্বস্তির নিঃশ্বাস। এই ছুটিই হতে পারে আত্মার খোরাক, পারিবারিক বন্ধনের উষ্ণতা, কিংবা সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ প্রকাশের এক চমৎকার উপলক্ষ।
চলুন দেখে নিই এই ছুটিকে কীভাবে আরও অর্থবহ, প্রাণবন্ত ও হৃদয়গ্রাহী করে তোলা যায়।
পরিবারকে সময় দিন: বছরের ব্যস্ততা থাকা কারণে অনেকেরই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ হয় না। ঈদের ছুটিতে পরিবারের সঙ্গে একত্রে কিছু আনন্দঘন মুহূর্ত কাটানোর পরিকল্পনা করতে পারেন।
ঈদের নামাজে যাওয়া, একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করা, ছোটদের নিয়ে খেলাধুলা কিংবা গল্প করে ঘরোয়া আয়োজনের মাধ্যমে কিংবা কাছের কোনো স্থানে পিকনিক বা ডে-ট্যুর করতে পারেন। এতে পারিবারিক সম্পর্কের বন্ধন দৃঢ় করে তুলবে।
আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করুন: ঈদের ছুটি সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিকট আত্মীয়দের দেখা করুন। পরিবারের ছোট সদস্যদের সঙ্গে আত্মীয় স্বজনের পরিচয় করিয়ে দিন । এতে তারা আত্মীয়দের সম্মান করতেশিখবে।
এছাড়া সবার সাথে শুভেচ্ছা এবং উপহার বিনিময় করুন। সবাইকে দাওয়াত করে বাড়ির ছাদে বা বারান্দায় বারবিকিউ-র ব্যবস্থা করতে পারেন।
সহমর্মিতায় আনন্দ ভাগাভাগি করুন: ঈদের প্রকৃত সৌন্দর্য তখনই প্রকাশ পায়, যখন নিজের আনন্দটুকু অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া যায়। আশপাশের গরীব-অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ান। একটি পোশাক, একটি খাবার, অথবা একটি হাসিমাখা মুখও কাউকে ঈদের পূর্ণতা এনে দিতে পারে।
নিজেকে সময় দিন: ঈদের ছুটিতে নিজেকে সময় দিতে পারেন। বই পড়ুন, গান শুনুন, সৃজনশীল কিছু করুন। হয়তো লিখতে ভালোবাসেন, আঁকতে চান বা নতুন কোনো রেসিপি ট্রাই করতে চান সেটা করুন। মেডিটেশন বা ইবাদতের মাধ্যমেও আত্মশুদ্ধির চেষ্টা করুন।
প্রকৃতির সঙ্গে থাকুন: মোবাইল, ল্যাপটপ থেকে দূরে থাকুন কিছু সময়। প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটান, বাগান করুন, পাখির ডাক শুনুন। বাড়ির ছাদে বা বারান্দায় বসে সন্ধ্যার চা উপভোগ করুন। প্রিয়জনের সঙ্গে আড্ডা দিন গল্পে গল্পে, ফোনে নয় চোখের সামনে।
নতুন ভাষা শিখুন: এই সময়ে চাইলে নতুন ভাষা শেখা শুরু করতে পারেন। প্লে-স্টোরে নতুন ভাষা শেখার বেশ কিছু ভালো অ্যাপস পাওয়া যায়।
পছন্দানুযায়ী ভাষা শেখার অ্যাপ ইন্সটল করে ভাষা শেখা শুরু করতে পারেন এই অবসরে। দুই কিংবা তিনদিনে ভিনদেশী ভাষা শিখে ফেলা সম্ভব নয়। তবে নতুন ভাষা শেখা শুরু করাটাই অনেক বড় একটি ধাপ। পরবর্তীতে আগ্রহের ফলে নিজ থেকেই আগ্রহ জন্মাবে।
ফিটনেস চর্চা করুন: ফিটনেস চর্চা শুরু করতে পারেন। ব্যস্ত জীবনে সময় না পেলেও এই সময়টাতে ইয়োগা, ব্যায়াম বা স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন শুরু করতে পারেন, যা পরবর্তী সময়ে অভ্যাসে পরিণত হবে।
দেখা হোক ভালো কিছু: রুটিনমাফিক জীবনাচরণের কারণে হয়তো আপনার বিখ্যাত ও শিক্ষণীয় কিছু মুভি দেখা হয়নি, দেখা হয়নি প্রয়োজনীয় ও শিক্ষণীয় ডকুমেন্টারি।
এ ছাড়া জীবনে অনুপ্রেরণার জন্য অনুপ্রেরণাদায়ী ভিডিও দেখার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এই ছুটির দিনগুলোয় এগুলো আপনি দেখে নিতে পারেন। একদিকে বিনোদনও পাবেন, অন্যদিকে সমৃদ্ধও হবেন।
সামাজিক কাজে অংশ নিন: ছুটির সময় নিজ এলাকার গরীব-অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে পারেন। খাবার, কাপড় বা ঈদের পোশাক পৌঁছে দিতে পারেন দরিদ্র পরিবারে। এই ছোট্ট কাজটিও হয়ে উঠতে পারে ঈদের প্রকৃত আনন্দ।
নিজ ঘরকে সাজিয়ে তুলুন: ঈদের ছুটিতে ঘর সাজানোর কাজটি সেরে ফেলতে পারেন। ঘরের পরিপাটি পরিবেশ ঈদের আনন্দকে দ্বিগুণ করে তোলে।
টেকনোলজি থেকে একটু ছুটি নিন: এবার একটু সোশ্যাল মিডিয়া, মেইল আর পর্দার ঝলকানি থেকে দূরে থাকুন। ফোনটা কিছু সময় পাশে রেখে বাস্তব মানুষদের মুখোমুখি হোন। ছুটির আনন্দ তখনই সত্যিকারের হয়, যখন তার পাশে থাকে চোখে চোখ রেখে হাসার সময়।
ঈদের ছুটি শুধু আনন্দ বা বিশ্রামের সময় নয়, এটি আত্মার পরিশুদ্ধি, পরিবারে ভালোবাসা বিনিময় এবং সমাজে সহমর্মিতার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার মোক্ষম সময়। সুতরাং এই ছুটিকে মূল্যবান করে তুলুন আত্মিক, পারিবারিক ও সামাজিকভাবে।
আপনার মতামত লিখুন :