খেজুরের গুড় আমাদের গ্রামীণ জীবনের এক অনন্য উপহার। শীতকালে বিভিন্ন পিঠাপুলি, পায়েস বা রান্নার উপকরণ হিসেবে এর চাহিদা তুঙ্গে ওঠে। শুধু স্বাদে নয়, পুষ্টিগুণেও ভরপুর এই প্রাকৃতিক মিষ্টিজাত দ্রব্য। খেজুরের রস থেকে প্রস্তুত এই গুড় প্রাকৃতিক চিনি বা রিফাইন্ড সুগারের চেয়ে অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। নিয়মিত পরিমিত পরিমাণে খেলে এটি শরীরের জন্য নানারকম উপকার বয়ে আনে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক খেজুরের গুড়ের উপকারিতা-
১. রক্তশক্তি বাড়ায়
খেজুরের গুড় আয়রনের ভালো উৎস। এটি হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে, ফলে রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
২. হজমে সহায়ক
গুড়ে থাকা এনজাইম ও আঁশ পাচনতন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়ায়। খাওয়ার পর এক টুকরো গুড় খেলে হজম ভালো হয় এবং গ্যাস-অম্বলের সমস্যা কমে।
৩. দেহের শক্তি জোগায়
খেজুরের গুড় প্রাকৃতিক কার্বোহাইড্রেটের উৎস, যা দ্রুত শক্তি দেয়। সকালে বা বিকেলে অল্প পরিমাণ গুড় খেলে ক্লান্তি দূর হয় এবং শরীর চাঙ্গা থাকে।
৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
গুড়ে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও খনিজ পদার্থ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। নিয়মিত খেলে সর্দি-কাশি প্রতিরোধেও উপকারী।
৫. ত্বক সুন্দর রাখে
গুড়ে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং খনিজ ত্বকের কোষগুলো পুনর্জীবিত করতে সাহায্য করে। ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল রাখতে এটি ভূমিকা রাখে।
৬. হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নত করে
খেজুরের গুড়ে থাকে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং ফসফরাস, যা হাড় ও দাঁত মজবুত রাখতে সহায়তা করে।
৭. ঋতুচক্র নিয়মিত রাখতে সাহায্য করে
মহিলাদের ক্ষেত্রে নিয়মিত অল্প পরিমাণ খেজুরের গুড় খেলে ঋতুচক্র নিয়মিত থাকে এবং পিরিয়ডজনিত ব্যথা কমে যেতে পারে।
কিভাবে খেজুরের গুড় খাবেন
১. সকালে খেতে পারেন
সকালে নাশতার সময় অল্প পরিমাণ গুড় খেলে শরীরে দিনভর শক্তি পাওয়া যায়।
২. গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যায়
১ গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ১ চা-চামচ খেজুরের গুড় মিশিয়ে খেলে হজমের জন্য ভালো এবং ডিটক্সিফিকেশনেও সহায়তা করে।
৩. খাবারের পর
ভাত বা অন্য ভারী খাবারের পরে ছোট এক টুকরো গুড় মুখে দিয়ে খেলে হজম ভালো হয় এবং মিষ্টি স্বাদের ইচ্ছাও মিটে যায়।
৪. বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহার
খেজুরের গুড় দিয়ে পায়েস, পিঠা-পুলি, চিঁড়ার সাথে বা খেজুরের গুড়ের চা বানিয়ে খাওয়া যায়।
৫. সরাসরি খাওয়া
খেজুরের কাঁচা বা দানা গুড় অল্প করে সরাসরি মুখে দিয়েও খেতে পারেন।
৬. পরিমাণের দিকে খেয়াল রাখুন
প্রতিদিন ১০-২০ গ্রাম (১-২ চা-চামচ বা এক ছোট টুকরো) খাওয়া নিরাপদ ও উপকারী। অতিরিক্ত খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :