আশ্চর্য হলেও সত্য—হৃদযন্ত্র থেমে গেলেও মস্তিষ্কের কর্মকাণ্ড তাৎক্ষণিকভাবে থেমে যায় না। বরং মৃত্যুর মুহূর্তে মস্তিষ্কে দেখা যায় এক ধরনের সুনির্দিষ্ট বৈদ্যুতিক ঝলক, যাকে বলা হয় ‘ডেথ ওয়েভ’।
জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউটের গবেষকরা প্রাণীর ওপর গবেষণায় দেখতে পেয়েছেন, হৃদস্পন্দন থেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কের স্মৃতি ও আবেগ সংশ্লিষ্ট অংশগুলোতে হঠাৎ করে প্রবল বৈদ্যুতিক সক্রিয়তা দেখা দেয়।
মনে হতে পারে, শেষ চেষ্টায় চেতনার আলো জ্বালিয়ে রাখছে আমাদের মস্তিষ্ক।
এই বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণের সঙ্গে মিলে যায় বহু মানুষের ব্যক্তিগত বর্ণনা, যারা মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন। তারা প্রায়ই বলেন, একটি উজ্জ্বল আলো, দীর্ঘ করিডোর, কিংবা প্রিয়জনের উপস্থিতি অনুভব করেছেন।
‘আলোর টানেল’ বিজ্ঞান না বিভ্রম?
মৃত্যুর কাছাকাছি অভিজ্ঞতা (Near Death Experience বা NDE) নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে বিতর্ক। কেউ একে আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা বলেন, কেউ বলেন বিভ্রম।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের লুইসভিল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. আজমল জেমার মতে, হৃদযন্ত্র থেমে যাওয়ার পর মস্তিষ্কের ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সে যে ঝলক দেখা যায়, সেটিই হতে পারে চোখে আলো বা টানেলের মতো দৃশ্যের উৎস।
তিনি একে বলেন, ‘মস্তিষ্কের শেষ আতশবাজি’—একবার চোখ ধাঁধানো বিদায়বেলা।
গবেষণায় মিল
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট থেকে বেঁচে ফেরা ১০-২০ শতাংশ মানুষ এমন অভিজ্ঞতার কথা জানান। তাদের স্মৃতিচারণে উঠে আসে জীবনের ঝলমলে মুহূর্ত, প্রিয়জনদের উপস্থিতি, এমনকি শান্তির এক অপার্থিব অনুভব।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, মস্তিষ্কের শেষ সক্রিয় মুহূর্তগুলোতে বিচ্ছিন্ন নিউরোন সংকেতগুলো মিলেমিশে তৈরি করে একটি জটিল, কিন্তু অর্থপূর্ণ গল্প—যেটি আমরা অনুভব করি মৃত্যু-সন্নিকটে গিয়ে।
চেতনার শেষ পরিণতি?
ডেথ ওয়েভের পরে থেটা ওয়েভসহ অন্যান্য মস্তিষ্ক তরঙ্গ ধীরে ধীরে স্তব্ধ হয়ে যায়। একসময় আসে পূর্ণ নীরবতা। এই ক্রমশ নিঃশেষ হয়ে যাওয়া তরঙ্গই হয়তো চেতনাজগতের অবসান—যার ব্যাখ্যা দিতে বিজ্ঞানকে এখনও বহু পথ পাড়ি দিতে হবে।
মৃত্যু তাই শুধুই একটি মুহূর্ত নয়—এ যেন জীবনেরই মতো এক শেষ গল্প, যার শেষ অধ্যায়ে নামে ধীরে ধীরে নীরবতা।