আমাদের পানির নিচের জগৎ অনেক অদ্ভুত ও সুন্দর উদ্ভিদের আবাসস্থল। কিন্তু এই বৈচিত্র্যময় পরিবেশে জীবন কখনো কখনো সহজ হয় না- কখনো কখনো অস্থির লাগে। তবুও আমাদের সেইসব পরিবেশে দিনের পর দিন থাকতে হয়। তেমনই কলম্বিয়ার রেইনবো নদীর তীব্র স্রোতে বেঁচে থাকা জলজ উদ্ভিদ থেকে শুরু করে ব্রাজিলের প্লাবিত প্যান্টানালে আলোর জন্য লড়াই করা বিশাল জললিপুল পর্যন্ত- এই উদ্ভিদগুলো প্রতিকূলতার মধ্যেও সফলভাবে বেঁচে থাকে এবং বৃদ্ধি পায়।
চলুন জেনে আসি তাদের বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার সংগ্রাম...
জায়ান্ট ওয়াটারলিলি বা পানির রাজা
জায়ান্ট ওয়াটারলিলি (Victoria amazonica) ব্রাজিলের প্যান্টানাল অঞ্চলে জন্মায়। এটি একটি ছোট কুঁড়ি হিসেবে শুরু হয়, যা জলের পৃষ্ঠের দিকে গজায় এবং পরে তিন মিটার পর্যন্ত চওড়া একটি সুন্দর লিলি প্যাডে পরিণত হয়। গাছের নিচের অংশে গার্ডার ও পাঁজর থাকে, যা এর বিশাল কাঠামোকে সমর্থন করে। পানির নিচে প্রসারিত ডালপালাগুলো আট মিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা পাতাগুলোকে ভাসমান রাখে।
ম্যাকারেনিয়া ক্লাভিগেরা বা নদীর রঙধনু
যখন পানির স্তর বৃদ্ধি পায় এবং পর্যাপ্ত সূর্যের আলো থাকে, তখন ম্যাকারেনিয়া ক্লাভিগেরা বিভিন্ন রঙের সুন্দর ফুল ফুটিয়ে নদীকে যেন তরল রঙধনুর আভা দেয়। এটি কলম্বিয়ার ক্যানো ক্রিস্টালেস নদীর জলরেখায় ভাসমান বাগানের মতো মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
জল কচুরিপানা
এই ভাসমান ফুলটি দক্ষিণ আমেরিকার অ্যামাজন অববাহিকায় জন্মায়। এই ফুলটি একক কাণ্ড থেকে প্রায় ২০টি পর্যন্ত ফুল ফুটাতে পারে, এবং সেসব ফুল জলরেখার প্রায় এক মিটার উপরে উঠে আসে।
ওয়াটার ক্রাউফুট বা নমনীয়তা
ওয়াটার ক্রাউফুট (Ranunculus aquatilis) ইউরোপের অধিকাংশ অঞ্চলে জন্মায় এবং এটি বাটারকাপ পরিবারের সদস্য। এই জলজ উদ্ভিদটি জলের তলদেশে মাদুরের মতো বিছিয়ে থাকে। এর ডালপালা দেখলে বোঝা যায়, এটি নমনীয়ভাবে সব স্রোতের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। তবে পরাগায়নের জন্য এটি বিশেষভাবে ফুলের শক্ত ডালপালা বাতাসে এলিয়ে দেয়।
জল লেটুস বা ভেসে চলা লতাপাতা
প্যান্ট্রপিক্যাল ওয়াটার লেটুস (Pistia stratiotes)-এর নামকরণ করা হয়েছে লেটুসের মাথার সঙ্গে মিল থাকার জন্য। এটি অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া পৃথিবীর সব মহাদেশেই পাওয়া যায়। এর ঘন ও স্পঞ্জি পাতা উদ্ভিদটিকে ডুবতে দেয় না। শিকড় নদীর তলদেশে আটকে না থেকে স্রোতের সঙ্গে ভেসে চলতে পারে।
সামুদ্রিক ঘাস বা সবুজ কার্বন
সামুদ্রিক ঘাস উপকূলের অগভীর জলে জন্মায়। এটি ১৫৯টি দেশে পাওয়া যায়, এবং এটির বিস্তার প্রায় ৩,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার (১,১৫,০০০ বর্গমাইল)। এটি প্রতি বছর সমুদ্রের প্রায় ১০ শতাংশ কার্বন শোষণ করে। সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঘাস তার পাতা ও শিকড় গঠন করে, যা সমুদ্রকে জীবন্ত ও সুস্থ রাখে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন