দক্ষিণাঞ্চলের মানুষদের যাতায়াতের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র রাজধানীর সদরঘাট। প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী এখান থেকে লঞ্চযোগে বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ঘাট এলাকার আশেপাশে কুলিদের দৌরাত্ম্য ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন প্রবাসীরা।
যাত্রীদের অভিযোগ, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নির্ধারিত মজুরি তোয়াক্কা না করে কুলিরা জোরপূর্বক মালামাল বহন করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে। অনেক সময় যাত্রীদের কাছ থেকে জোর করে লাগেজ ছিনিয়ে নেওয়া, এমনকি টাকা না দিলে পানিতে ফেলে দেওয়ার হুমকি দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। কুলিদের দৌরাত্মে অসহায় হয়ে পড়ছেন যাত্রীরা।
শুক্রবার (১০ অক্টোবর)। বিকেল ৫টা। সদরঘাট ১ নম্বর টার্মিনালের মেইন গেইটে গিয়ে দেখা যায়, প্রবাসী যাত্রীদের লাগেজ হাতে দেখলেই কুলিরা অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করছে। এবং হাত থেকে জোর করে লাগেজ চিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে কুলি চক্র।
এসময় কুলিদের দ্বারা বিড়ম্বনা শিকার হোন সৌদি প্রবাসী আজিজুল। ঘটনার বর্ণানা দিয়ে তিনি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমি বিদেশ থেকে আজ সকালে দেশে ফিরেছি, সাথে ২টা লাগেজ ছিল। আমি সিএনজি থেকে নামার সাথে সাথে ৫-৬ জন কুলি এসে আমাকে ঘিরে ধরে।’

‘কুলিরা ৩০০০ টাকা দাবি করে, পরে অনেক রিকোয়েস্ট করে তাদেরকে ২০০০ টাকা দিয়ে লাগেজ ছাড়িয়ে নিয়ে টার্মিনালের ভিতরে প্রবেশ করি’, অভিযোগ প্রবাসী আজিজুল।
একই সময় মাকসুদুর রহমান নামের আরেক প্রবাসীও কুলিদের দ্বারা হয়রানীর শিকার হোন।
সিঙ্গাপুর ফেরত এই প্রবাসী রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমি একটা লাগেজে জামা কাপড় ও কিছু চকলেট নিয়ে দেশে আসছি, বাড়ি যাওয়ার জন্য যখন সদরঘাট এলাকায় পৌছালাম তখনই ৪ জন কুলি এসে আমার লাগেজ হাতে নিয়ে ২০০০ টাকা দাবি করে বসে।’
‘তখন তাদেরকে বলি আমার লাগেজ আমি নিতে পারব, এটায় কোনো মালামাল নেই। এ-শুনে কুলিরা বলে, টাকা দিয়ে লাগেজ নিয়ে যাও, তাদেরকে অনেক বুঝিয়ে ১০০০ টাকা দিয়ে তাদের থেকে ছাড়া পেয়ে ১০ টাকার টিকিট কেটে লঞ্চে এসে বসি’, অভিযোগ তার।
আরও কয়েকজন প্রবাসী এবং যাত্রীদের সাথে কথা বলেও কুলিদের দ্বারা হয়রানীর শিকার হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তাদের ভাষ্য, সদরঘাটে হাতে বড় কোনো ব্যাগ বা লাগেজ দেখলেই কুলিরা জোর করে ব্যাগ কাঁধে তুলে নেয় এবং পরে বাড়তি টাকা দাবি করেন। না দিলে হুমকি বা গালাগাল দেয়। এ কারণে অনেকে ঘাট এলাকায় প্রবেশ করতেই ভয় পায়।
এ বিষয়ে ঘাট এলাকায় কর্মরত কয়েকজন কুলি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় হওয়া টাকা শুধু তাদের পকেটে যায় না। এই টাকার অংশ পায় পুলিশ, ঘাটশ্রমিক ইউনিয়নের নেতা, স্থানীয় প্রভাবশালী ও ঘাট কর্তৃপক্ষের কিছু সদস্য।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদরঘাট টার্মিনালে সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে চলছে ভ্রাম্যমাণ দোকান বসানো ও হকারী বাণিজ্য। প্রতিদিন প্রতি হকারের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। আর নদীতে ভাসমান দোকান থেকে ৫০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত চাদা উঠানো হচ্ছে।

এ ছাড়াও, নৌকার মাঝিদের কাছ থেকেও নেওয়া হচ্ছে খেয়াপ্রতি ৫০-১০০ টাকা। রিকশা ও অটোরিকশা চালকদের কাছ থেকেও যাত্রী উঠানো বা নামানোর সময় ১০-২০ টাকা করে আদায় করছে ঘাট এলাকায় দায়িত্বরত সদস্যরা।
এ বিষয়ে ঘাট ইজারাদার সুমন ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর কুলিদের দৌরাত্ম্য কিছুটা কমেছে।
‘কুলিদের আইডি কার্ড ও ইউনিফর্ম বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কোন অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’, যোগ করেন ইজারাদার।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন