মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৪, ২০২৫, ০৭:০৯ পিএম

হোম অফিসে বাড়ছে প্রোডাক্টিভিটি: গবেষণা

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৪, ২০২৫, ০৭:০৯ পিএম

ছবি- সংগৃহীত

ছবি- সংগৃহীত

অ্যালার্ম, ঘড়ির তাড়া দেওয়া কমেছে। সকালের হুড়োহুড়ি যেন একটু থেমে গেছে। ব্রেকফাস্টে একটু বেশি সময় পাওয়া যাচ্ছে, আর অফিসে পৌঁছনোর চাপ যেন মিলিয়ে গেছে। প্রথমে এটা ছিল হয়তো অল্প সময়ের স্বস্তি, কিন্তু এখন গবেষকরা বলছেন, বিষয়টা এর চেয়েও গভীর।

ইউনিভার্সিটি অব সাউথ অস্ট্রেলিয়ার এক দীর্ঘমেয়াদি গবেষণায় দেখা গেছে, বাড়ি থেকে কাজ বা ওয়ার্ক ফ্রম হোম বা হোম অফিস, রিমোট অফিস কালচার মানুষদের জীবনকে সত্যিই উন্নত করে তুলছে। শুধু সুবিধা নয়, এতে মানুষ তুলনামূলক ভালো ঘুমোচ্ছেন, মানসিকভাবে বেশি স্থির থাকতে পারছেন, এমনকী কাজের ফলও হচ্ছে বেশ চমৎকার। এক কথায় বাড়ছে প্রোডাক্টিভিটি।

‘ওয়ার্কিং ফ্রম হোম ইন অস্ট্রেলিয়া ডিউরিং দ্য কোভিড-১৯ পেন্ডামিক’ শীর্ষক ওই গবেষণাটি চার বছর ধরে চলেছে। ফলাফলে দেখা গেছে, বাড়ি থেকে কাজ করা মানুষেরা প্রতিদিন গড়ে ৩০ মিনিট বেশি ঘুমোচ্ছেন। আর সেই অতিরিক্ত বিশ্রাম কর্মীদের মনোযোগ, ধৈর্য ও শক্তি বাড়াতে সাহায্য করেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন যাতায়াত এড়িয়ে বাড়ি থেকে কাজ করেন, তারা প্রতি সপ্তাহে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা সময় বাঁচান। অফিস যাওয়া-আসার ভিড় বা যানজটের চাপ না থাকায় সকালে কাজ শুরু হয় অনেকটা স্বাচ্ছন্দে। এই ছোট পরিবর্তনগুলোই মানসিক স্বাস্থ্য ও আবেগ নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা রাখছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, যখন মানুষ নিজের ইচ্ছায় বাড়ি থেকে কাজ করার সুযোগ পান, তখনই তারা সবচেয়ে ভালো কাজ করেন। বাধ্যতামূলক ওয়ার্ক ফ্রম হোমের সময় মনোবল কিছুটা কমে গিয়েছিল, কিন্তু আবার যখন ফ্লেক্সিবিলিটি ফিরে আসে, তখন সন্তুষ্টিও বাড়ে।

একই সঙ্গে, যেসব ম্যানেজার আস্থা ও স্পষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণের মাধ্যমে দলকে গাইড করেছেন, তাদের টিমের কর্মদক্ষতাও বেশি ছিল। গবেষণায় বলা হয়েছে, এমন সহায়ক নেতৃত্ব কাজের ভারসাম্য রাখে, বাড়তি চাপ দেয় না।

শুধু প্রোডাক্টিভিটিই নয়, ওয়ার্ক ফ্রম হোম জীবনযাপনকেও স্বাস্থ্যকর করে তুলেছে। স্পেনের গবেষকরা জানিয়েছেন, প্রতিদিন অফিসে যাতায়াত বন্ধ হওয়ায় মানুষ বছরে গড়ে ১০ দিন অতিরিক্ত অবসর সময় পাচ্ছে।

এই সময় অনেকেই ব্যবহার করছেন হাঁটাহাঁটি, ব্যায়াম বা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য। ঘরে রান্না করার সুযোগ বাড়ায় খাবারের মান উন্নত হয়েছে, ফাস্ট ফুড বা মিষ্টি, স্ন্যাকসের পরিবর্তে মানুষ ফল, শাকসবজি ও দুধজাত খাবার খাচ্ছেন।

বাড়িতে কাজ করা পরিবারগুলোতে দেখা গেছে, কাজের ফাঁকে ছোটখাট ঘরের কাজ সেরে ফেলার ফলে সন্ধ্যাগুলো আরও শান্ত ও আরামদায়ক হয়ে উঠছে। অনেকে আশঙ্কা করেছিলেন, দূর থেকে কাজ করলে প্রোডাক্টিভিটি কমে যাবে। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, বিপরীতটাই সত্যি। বেশিরভাগ কর্মীর কাজের মান ও ফল দুই-ই উন্নত হয়েছে।

কারণ, বাড়িতে মনোযোগের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে, আর সময়ের চাপও কম। ম্যানেজাররা যখন কাজের ঘণ্টা নয়, বরং ফলাফলের ওপর ফোকাস করেছেন, তখনই সবচেয়ে ভালো পারফরম্যান্স এসেছে। পাশাপাশি, আরামদায়ক চেয়ার, উপযুক্ত আলো এবং স্ক্রিনের সঠিক সেটআপ- এই ছোট বিষয়গুলোও দৈনন্দিন পারফরম্যান্স বাড়িয়েছে।

চার বছরের গবেষণা বলছে, ওয়ার্ক ফ্রম হোম কোনও সাময়িক ব্যবস্থা নয়, বরং ভবিষ্যতের টেকসই পথ। হাইব্রিড মডেল, যেখানে কিছুদিন বাড়িতে আর কিছুদিন অফিসে কাজ করা হয়, সেটিই এখন ‘সুইট স্পট’ হিসেবে ধরা হচ্ছে।

গবেষকদের মতে, কাজের ধরন হওয়া উচিত মানুষের শক্তি ও রিদমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, উপস্থিতির কড়াকড়ির ভিত্তিতে নয়। আস্থা, প্রযুক্তি ও স্পষ্ট প্রত্যাশাই এখন সফল টিমের মূল ভিত্তি। অন্যদিকে শহরগুলোতেও যানজট ও দূষণ কমছে, কর্মীরা পর্যাপ্ত সময় পাচ্ছেন। বাবা-মা ও কেয়ারগিভারদের জন্য এটি যেন এক নীরব বিপ্লব, যেখানে পেশা ও ব্যক্তিগত যত্ন একসঙ্গে এগোতে পারছে।

ওয়ার্ক ফ্রম হোম কোনও পরীক্ষামূলক ব্যবস্থা নয়, বরং ভবিষ্যতের আরও বুদ্ধিদীপ্ত দিকনির্দেশ। মানুষ এখন বেশি ঘুমোচ্ছেন, ভালো খাচ্ছেন, আর নিজের সেরাটা দিতে পারছেন কারণ কাজটা জীবনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পেরেছে, জীবনটাকে হাতে নিয়ে কাজের সঙ্গে দৌড়তে হচ্ছে না।

Link copied!