রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ফিচার ডেস্ক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৬, ২০২৫, ১১:০৪ পিএম

বাজি ধরে পায়ে হেঁটে বিশ্বভ্রমণ, ২৭ বছর পর শেষ হচ্ছে যাত্রা

ফিচার ডেস্ক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৬, ২০২৫, ১১:০৪ পিএম

কার্ল বুশবি। ছবি- সংগৃহীত

কার্ল বুশবি। ছবি- সংগৃহীত

বন্ধুদের সঙ্গে এক নির্ভার আড্ডায় হঠাৎই এক অদ্ভুত বাজি ধরেছিলেন কার্ল বুশবি- দক্ষিণ আমেরিকার শেষ প্রান্ত থেকে হেঁটে হেঁটে ফিরে যাবেন নিজের দেশ ইংল্যান্ডে। তখন তার বয়স মাত্র ২০ বছর। অদ্ভুত শোনালেও বাজির কথাটি মুহূর্তেই তার মনে জন্ম দিল এক অদম্য চ্যালেঞ্জ-স্পৃহা। তিনি বুঝতে পারলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্বপ্নও এক পা সামনে বাড়িয়ে দিলে বাস্তবে পরিণত হতে পারে।

কয়েক বছর প্রস্তুতির পর ১৯৯৮ সালে চিলির পান্তা অ্যারেনাসে দাঁড়ালেন তিনি- ইংল্যান্ডের হাল শহর থেকে প্রায় ৩১ হাজার মাইল দূরে। এখান থেকেই শুরু হলো বুশবির দীর্ঘতম পদযাত্রা, যার নাম তিনি দেন ‘গলিয়াৎ এক্সপিডিশন’। তার ধারণা ছিল, ১২ বছরেই বাড়িতে পৌঁছে যাবেন। কিন্তু পরিকল্পনার ১২ বছর পর কেটে গেছে ২৭ বছর, আর তিনি এখনো হাঁটছেন- এক অসম্ভব লক্ষ্যকে সম্ভব করে তোলার দৃঢ়তা নিয়ে।

অভিযানের শুরুতেই বুশবি নিজের জন্য দু’টি কঠোর নিয়ম তৈরি করেছিলেন- যাত্রাপথে কোনো যানবাহনে চড়বেন না এবং শেষ গন্তব্যে পৌঁছানো পর্যন্ত ঘরে ফিরবেন না। ২৭ বছরে একদিনও তিনি এই নিয়ম ভাঙেননি। পাহাড়, মরুভূমি, জঙ্গল, যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চল- সবই তিনি অতিক্রম করেছেন পায়ে হেঁটে।

এ সময় তিনি হাঁটতে হাঁটতে পার হয়েছেন পাতাগোনিয়া, আন্দিজ পর্বতমালা, মধ্য আমেরিকা, মেক্সিকো, পুরো যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, মঙ্গোলিয়া এবং এশিয়ার রাজনৈতিকভাবে উত্তপ্ত অঞ্চলগুলো। কখনো অসহ্য গরমের মরুভূমি, কখনো বরফে ঢাকা পর্বত, আবার কখনো ঘন জঙ্গলের ভেতর দিয়ে পথ খুঁজে নিতে হয়েছে তাকে। দীর্ঘ পথের শুরুতে তার ছিল কেবল একটি কাগজের মানচিত্র, একটি পেনসিল, একটি ক্যালকুলেটর এবং পকেটে মাত্র ৫০০ ডলার।

যাত্রার সবচেয়ে ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলোর একটি ছিল পানামা–কলম্বিয়ার মাঝের ‘ডারিয়েন গ্যাপ’। বিশ্বের অন্যতম দুর্গম জঙ্গল এটি। দুষ্কৃতি, জঙ্গলে হারিয়ে যাওয়া, ভয়ংকর প্রাণী- সবকিছুর ঝুঁকি মাথায় নিয়ে বুশবি একাই পার হয়েছেন সেই মৃত্যুঞ্জয়ী পথ। তার আরেক দুঃসাহসিক সাফল্য হলো ২০০৬ সালে বেরিং প্রণালি পার হওয়া। ভাঙা বরফের ওপর পা রেখে, তীব্র ঠান্ডায় জমে থাকা সমুদ্রের মাঝে পথ খুঁজে তিনি এবং তার এক সঙ্গী পাড়ি দেন এই বিপজ্জনক অঞ্চল। অনেকে বলেছিল এটি অসম্ভব; কিন্তু বুশবি তা সম্ভব করেছেন।

রাশিয়ায় ঢোকামাত্র ভুল সীমান্ত অতিক্রমের দায়ে তাকে ৫৭ দিন আটক রাখা হয়। পরে তাকে মুক্তি দেওয়া হলেও ২০১৩ সালে পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞাও দিতে হয় রাশিয়াকে। কিন্তু বুশবি দমে যাওয়ার মানুষ নন। লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে ওয়াশিংটন পর্যন্ত হেঁটে গিয়ে তিনি রুশ দূতাবাসে আবেদন করেন এবং শেষ পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।

২০২৪ সালে আরেকটি ভয়ংকর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন তিনি। রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ইরান বা রাশিয়ার ভেতর দিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তাই সিদ্ধান্ত নেন কাজাখস্তান থেকে আজারবাইজান পর্যন্ত কাস্পিয়ান সাগর সাঁতরে যাবেন। তিনি টানা ৩১ দিন সাঁতার কেটেছেন; রাতগুলো কাটিয়েছেন সঙ্গে থাকা নৌকায়। পৃথিবীতে এমন দুঃসাহসিক কাজ খুব কম মানুষই করেছেন।

বর্তমানে বুশবি ইউরোপের অভ্যন্তরে- হাঙ্গেরিতে অবস্থান করছেন। ইংল্যান্ডের হাল শহর থেকে তিনি এখন মাত্র প্রায় ১হাজার ৫০০ কিলোমিটার দূরে। সব কিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বরে বাড়িতে পৌঁছে যাবেন তিনি। তবে বয়স বাড়ার কারণে তার হাঁটার গতি কিছুটা কমেছে- আগে দিনে ১৯ মাইল হাঁটলেও এখন হাঁটেন ১৫ মাইল।

এতো দীর্ঘ যাত্রায় অসুস্থতার অভিজ্ঞতা তার খুব কম। একবার পড়ে গিয়ে কবজি কেটে গেলে নিজেই সুঁই-সুতা দিয়ে সেলাই করেছিলেন। আরেকবার পেরুতে মারাত্মক পেটের অসুখে ভুগেছিলেন। কিন্তু তিনি জানান, শারীরিক কষ্টের চেয়ে মানসিক লড়াইটাই ছিল বেশি কঠিন। দীর্ঘ একাকীত্ব, সম্পর্কের ভাঙন, অজানা পথের ভয়- সবই তাকে নানাভাবে পরীক্ষা নিয়েছে।

তবে বুশবির বড় শিক্ষা হলো- পৃথিবীর মানুষ আসলে দয়ালু। পথের ৯৯.৯৯ শতাংশ মানুষই তাকে কোনো না কোনোভাবে সাহায্য করেছে- কখনো খাবার দিয়ে, কখনো আশ্রয় দিয়ে, কখনো শুধু একটা মমতাময় কথাতেই তাকে এগিয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি একা হেঁটে যাচ্ছি ঠিকই, কিন্তু পিছনে বিশাল এক মানবিক সমর্থন আমাকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে।’

যাত্রার শেষের দিকে এসে তার মনে জন্ম নিয়েছে মিশ্র অনুভূতি। ২৭ বছর ধরে প্রতিদিন তার লক্ষ্য ছিল মাত্র একটি- আরও একটু হাঁটা। এখন যাত্রা শেষ হলে নতুন জীবনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সময় লাগবে। বাড়ি ফিরে বিজ্ঞান শিক্ষা নিয়ে কাজ করতে চান তিনি। আর পৃথিবীর কাছ থেকে পাওয়া ভালোবাসা ফিরিয়ে দিতে চান মানুষের মাঝে।

তরুণদের উদ্দেশে তার শেষ বার্তা, ‘পৃথিবী আপনাকে আগলে রাখবে। স্বপ্ন দেখুন, সামনে এগিয়ে যান। পথ আপনাকে পথ দেখাবে।’

Link copied!