যদি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে কাজে যাওয়ার কথা মনে হলে বিরক্তি অনুভব হয়, তাহলে এটি শুধু আলসেমি নয়- এটি সম্ভবত আরও গভীর কিছু। বছরের পর বছর চাকরি করার পরও অনেকে কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এটি সাধারণত কম আগ্রহ বা নিষ্ঠার অভাব হিসেবে দেখা হলেও, বাস্তবে এর পেছনে থাকে অনেক জটিল কারণ।
চলুন জানি, কেন আপনি কাজে আগ্রহ হারাচ্ছেন।
অজান্তেই আপনি ক্লান্ত
বার্নআউট এতটাই স্বাভাবিক হয়ে গেছে যে, আমরা আর এটা বুঝতেও পারি না। সপ্তাহান্তে কাজ করা? রাতের খাবারের সময় অফিসের ফোন আসা? রাত ১১টায় ই-মেইলের উত্তর দেওয়া? এসবই চুপচাপ আপনার শক্তি নষ্ট করে দিচ্ছে। বার্নআউট সবসময় নাটকীয় লক্ষণ প্রকাশ করে না। হয়তো ভালো ঘুমের পরেও আপনি ক্লান্ত হয়েই জেগে ওঠেন। অথবা নিজেকে কাজ চালিয়ে যেতে বাধ্য করেন কিন্তু মানসিকভাবে থাকেন বিচ্ছিন্ন। যখন আমাদের মস্তিষ্ক ক্রমাগত গো মোডে থাকে, তখন প্রেরণা কমে যায়। কারণ আমাদের সৃজনশীলতা বা উৎসাহের জন্য মানসিক স্থান অবশিষ্ট থাকে না।
একই কাজে আটকে থাকা
সবচেয়ে বড় প্রেরণা-নষ্টকারী বিষয় হলো স্থবিরতা। যদি বছরের পর বছর ধরে আপনার ভূমিকার কোনো পরিবর্তন না হয়, বেতন খুব বেশি না বাড়ে অথবা দায়িত্বের পুনরাবৃত্তি মনে হয়, তাহলে মস্তিষ্ক স্বাভাবিকভাবেই অটোপাইলটে চলে যায়। আপনি কঠোর পরিশ্রম করেন কিন্তু চাকরির পদবি একই থেকে যাচ্ছে। অথবা পরবর্তী স্তরটি কেমন হবে সে সম্পর্কে কোনো স্পষ্টতা নেই। আপনি অনুপ্রেরণা হারাচ্ছেন কারণ আপনার মস্তিষ্কের লক্ষ্য প্রয়োজন। প্রয়োজন অর্জন, গতিবিধি। যখন আপনি অগ্রগতি দেখতে পান না, তখন অবচেতন মন সিদ্ধান্ত নেয় যে, মানসিক শক্তি বিনিয়োগ করার কোনো অর্থ নেই।
মনের মতো কাজ না পাওয়া
অধিকাংশ মানুষই তার ক্যারিয়ারের পথ বেছে নেওয়ার সুযোগ পায় না। পারিবারিক চাপ, চাকরির নিরাপত্তা, বেতনের উদ্বেগ- এগুলো মানুষকে এমন ভূমিকায় ঠেলে দেয় যা তাদের শক্তি বা আবেগের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। একটা সময়ের পর, এমনকি সেরা সুযোগ-সুবিধাও এমন কাজের ক্ষতিপূরণ দিতে পারে না যাতে আপনার আগ্রহ নেই। প্রতিটি কাজ মনের মতো হবে বলে আশা করা ঠিক নয়। কিন্তু যদি আপনার চাকরি অর্থহীন মনে হয়, দক্ষতার সঙ্গে না মেলে, অথবা ক্রমাগত আপনাকে ক্লান্ত করে, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই আপনার প্রেরণা শূন্যে নেমে আসবে।
কাজের পরিবেশ সহায়ক নয়
সবচেয়ে প্রতিভাবান ব্যক্তিও টক্সিক পরিবেশে প্রেরণা হারিয়ে ফেলে। যদি আপনার ম্যানেজার বিনয়ী না হয়, আপনার টিম সহযোগিতার পরিবর্তে প্রতিযোগিতামূলক হয় অথবা অফিসের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ক্রমাগত নাটকীয়তা থাকে, তাহলে এটি সরাসরি আপনার উৎসাহকে প্রভাবিত করবে। সেখানে নিজেকে গুরুত্বহীন মনে হতে শুরু করবে। অনেক অফিস রয়েছে যেখানে জুনিয়রদের প্রশংসা করা হয় না, মতামত শোনা হয় না এবং নিরাপত্তাহীনতা ওপর থেকে নিচে নেমে আসে। ফল হিসেবে আপনি শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকলেও মানসিকভাবে দিন দিন তলানিতে চলে যেতে থাকেন।


সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন