শরীরের সঠিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে প্রতিদিন কতটা পানি প্রয়োজন তা নির্ভর করে ব্যক্তির বয়স, শারীরিক অবস্থা ও দৈনিক কার্যকলাপের ওপর। সাধারণভাবে একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের দিনে ৩ লিটার বা ১০–১২ গ্লাস পানি পান করা উচিত। ব্যায়াম করার সময় শরীর দ্রুত পানি হারায়। তাই প্রতি ১৫–২০ মিনিট অন্তর ১ গ্লাস পানি পান করা জরুরি। গর্ভাবস্থায় ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বেশি থাকে তাই সেই সময় নারীদের অন্তত ২.৫ লিটার বা ১০ গ্লাস পানি পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়। শরীরের পানির চাহিদার প্রায় ২০ শতাংশ পূরণ হয় খাবার থেকে বাকিটা সরাসরি পানি পান করেই মেটাতে হয়।
অথচ প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান না করলে শরীরের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াগুলো ব্যাহত হয়। দেখা দেয় নানা রোগব্যাধি। পানি শুধু পিপাসা মেটায় না, এটি আমাদের দেহ ও মনের সুস্থতার এক নিরব কিন্তু শক্তিশালী সহচর।
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পানের অসংখ্য উপকারিতা রয়েছে:
দেহের বিষাক্ত পদার্থ বের করে: পানি কিডনির কার্যক্রমকে সচল রাখে। বেশি পানি পান করলে প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীরের টক্সিন সহজে বের হয়ে যায়। ফলে কিডনি স্টোন হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
ত্বক রাখে উজ্জ্বল ও তরুণ: যথেষ্ট পানি পান করলে ত্বক থাকে আর্দ্র ও প্রাণবন্ত। ডিহাইড্রেশনের ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়, বলিরেখা ও বয়সের ছাপ দ্রুত পড়ে। দিনে অন্তত ৮–১০ গ্লাস পানি পান করলে ত্বক দীর্ঘসময় সতেজ থাকে।
মানসিক স্বচ্ছতা ও মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ায়: মস্তিষ্কের ৭৫ শতাংশই পানি। পানি স্বল্পতায় মনোযোগের ঘাটতি, স্মৃতিভ্রষ্টতা, মাথাব্যথা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। নিয়মিত পানি পান করলে মানসিক চাপ কমে এবং ব্রেইন ফাংশন উন্নত হয়।
হজমে সহায়তা করে: খাবারের পর পানি পান হজমে সহায়তা করে। তা ছাড়া পর্যাপ্ত পানি পাকস্থলীর অ্যাসিডিক সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য ও গ্যাসের সমস্যাও দূর করে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে: পানি শরীরের রক্তপ্রবাহ ঠিক রাখতে সহায়ক। পর্যাপ্ত পানি রক্তচাপ স্থিতিশীল রাখতে ভূমিকা রাখে এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে: খাবারের আগে এক গ্লাস পানি পান করলে ক্ষুধা কমে যায়, অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে। এতে করে ওজন কমানো সহজ হয়। এছাড়া পানি শরীরের মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে, যা ফ্যাট বার্নে কার্যকর।
ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে: পানি লিম্ফ্যাটিক সিস্টেমকে সচল রাখে, যা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। নিয়মিত পানি পান করলে সর্দি-জ্বর, সংক্রমণ বা অন্যান্য ভাইরাস-ঘটিত রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সহজ হয়।
কখন পানি পান করা সবচেয়ে উপকারী?
ঘুম থেকে ওঠার পর খালি পেটে এক গ্লাস পানি, খাবারের ৩০ মিনিট আগে ও পরে, ব্যায়াম করার আগে ও পরে, দীর্ঘক্ষণ রোদে থাকার পর।
অতিরিক্ত পানি পান করলে শরীরে সোডিয়ামের ঘাটতি হতে পারে যাকে বলে হাইপোনাট্রেমিয়া। তাই দৈনিক ২.৫ থেকে ৩ লিটার বা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পানি পান করাই উত্তম।
আপনার মতামত লিখুন :