জরুরি মুহূর্তে বা সাধারণ সময়েও রক্তদান একটি মহৎ ও জীবন রক্ষাকারী কজ। কিন্তু রক্তদানের আগে-পরে কিছু বিষয় মাথায় না রাখলে বিপরীতে শরীরের ক্ষতিও হতে পারে।
নিজে রক্তদানে উপযুক্ত কি না, সেটাও আগে যাচাই করে নেওয়া উচিত বলে জানিয়েছেন হেল্থ এইড হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আফিফ বাসার।
কখন রক্তের প্রয়োজন হয়?
রক্তের প্রয়োজন জীবনের যেকোনো মুহূর্তে দেখা দিতে পারে।
দুর্ঘটনা ও আঘাত: সড়ক দুর্ঘটনা, আগুনে পোড়া বা গুরুতর আঘাতজনিত অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ।
বড় অস্ত্রোপচার: হার্ট সার্জারি, ক্যানসারের অস্ত্রোপচারসহ নানা জটিল অপারেশনে রক্তের প্রয়োজন হয়।
রক্তস্বল্পতা ও রক্তরোগ: থ্যালাসেমিয়া, অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া কিংবা কেমোথেরাপির মতো চিকিৎসায় রক্ত কণিকা কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
প্রসূতি মায়েদের জটিলতা: সন্তান প্রসবের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে তাৎক্ষণিক রক্ত দরকার হয়।
সাধারণত একজন সুস্থ পুরুষ চার মাস পরপর এবং নারীরা ছয় মাস পরপর রক্ত দিতে পারেন।
রক্তদানের আগে যা করণীয়
পর্যাপ্ত ঘুম: আগের রাতে অন্তত ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। ঘুমের ঘাটতি থাকলে শরীর দুর্বল হতে পারে।
পুষ্টিকর খাবার: রক্তদানের ১-৪ ঘণ্টা আগে আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। খালি পেটে রক্তদান করলে মাথা ঘোরা ও দুর্বলতার ঝুঁকি থাকে।
পানি পান: রক্তদানের আগে অন্তত ৫০০ মিলিলিটার পানি (প্রায় ২ গ্লাস) পান করতে হবে।
শারীরিক অবস্থা যাচাই: জ্বর, সর্দি-কাশি বা অন্য কোনো অসুস্থতা থাকলে রক্তদান করা উচিত নয়।
ওষুধ সেবনের সতর্কতা: ইনসুলিন, অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যাসপিরিন ইত্যাদি সেবন করছেন কি না—তা চিকিৎসককে জানিয়ে পরামর্শ নিতে হবে। এসব ওষুধ রক্তদানে বাধা হতে পারে।
ধূমপান ও মদ্যপান এড়িয়ে চলা: রক্তদানের অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে মদ্যপান এবং ২-৪ ঘণ্টা আগে ধূমপান করা যাবে না।
বয়স ও ওজন: রক্তদাতার বয়স ১৮-৬০ বছরের মধ্যে এবং ওজন কমপক্ষে ৪৫ কেজি বা ১০০ পাউন্ড হতে হবে।
রক্তদানের পর যা মেনে চলবেন
বিশ্রাম: রক্তদানের পর অন্তত ১০-১৫ মিনিট বসে বা শুয়ে বিশ্রাম নিতে হবে। হঠাৎ উঠে দাঁড়ানো যাবে না।
প্রচুর তরল পান: পরবর্তী ২৪-৪৮ ঘণ্টা বেশি পরিমাণে পানি, ফলের রস, ডাবের পানি ও স্যুপ পান করুন—এটি প্লাজমা পুনরুদ্ধারে সহায়ক।
ভারী কাজ পরিহার: রক্তদানের দিন ব্যায়াম, ভারী জিনিস তোলা বা কঠোর কাজ করা উচিত নয়।
সুষম ও আয়রনসমৃদ্ধ খাবার: রক্তদানের পরদিন পুষ্টিকর ও আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে যাতে দুর্বলতা না আসে।
চা-কফি এড়িয়ে চলুন: রক্তদানের অন্তত ২-৩ ঘণ্টা চা বা কফি না খাওয়াই ভালো, কারণ এতে থাকা ক্যাফেইন আয়রন শোষণে বাধা দেয়।
ব্যান্ডেজ ব্যবস্থাপনা: রক্ত নেওয়ার স্থানটি ব্যান্ডেজ দিয়ে ঢাকা থাকবে, সেটি কয়েক ঘণ্টা পর সাবধানে খুলে পরিষ্কার পানি ও সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
অস্বস্তি হলে কী করবেন: মাথা ঘোরা বা অন্য শারীরিক অস্বস্তি অনুভব করলে তৎক্ষণাৎ বসে বা শুয়ে পড়ুন এবং প্রয়োজনে রক্তদান কেন্দ্রে যোগাযোগ করুন।