ভ্যাপসার গরমের সময় তৃষ্ণা মেটাতে ডাবের পানি বেশ জনপ্রিয় পানীয়। ডাবের পানির পুষ্টিগুণ ও কার্যকারিতা অনেক বেশি। মর্নিং সিকনেস, হজম সমস্যা ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হওয়ায় গর্ভবতী নারীদের জন্য এটি একটি ভালো বিকল্প। ভৌগোলিকভাবে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপগুলো এবং ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে ডাবের পানির চাহিদা রয়েছে।
পুষ্টিগুণ
প্রতি ২৪০ মি.লি. ডাবের পানিতে থাকে (আনুমানিক):
ক্যালরি: ৪৫–৬০ কিলোক্যালরি।
শর্করা: ৮–৯ গ্রাম।
ফাইবার: ২–৩ গ্রাম।
প্রোটিন: ১–২ গ্রাম।
ফ্যাট: প্রায় নেই (০.৫ গ্রাম এর কম)।
পটাশিয়াম: প্রায় ৬০০ মি.গ্রা (একটি কলার চেয়েও বেশি)।
ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, ফসফরাস: অল্প পরিমাণে থাকে।
ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম
পুষ্টিবিদদের মতে, সকাল বেলা শুধু পানির বদলে ডাবের পানি খেতে পারলে সেটি বেশি উপকার করে। সকাল ডাবের পানি পান করলে তা আপনার শরীরের জন্য দারুণ কার্যকরী হতে পারে। অনেকে ভেবে থাকেন যে ডাবের পানিতে অনেক বেশি কার্ব থাকে তাই এটি ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। কিন্তু এটি তারচেয়েও বেশি উপাদেয় একটি পানীয়।
ডাবের পানি কখন খাওয়া ভালো
সকাল বেলা খালি পেটে পানি পান করাই সবচেয়ে উত্তম। এটি সব সময়ই উপকারী। পুষ্টিবিদদের মতে, সকাল বেলা শুধু পানির বদলে ডাবের পানি খেতে পারলে সেটি বেশি উপকার করে। সকাল ডাবের পানি পান করলে তা আপনার শরীরের জন্য দারুণ কার্যকরী হতে পারে।
ডাবের পানি (নারকেলের পানি) শুধু মুখরোচক একটি পানীয়ই নয়, বরং এটি স্বাস্থ্যের জন্য বহুগুণে উপকারি।
ডাবের পানির উপকারিতা
শরীরকে হাইড্রেট রাখে: ডাবের পানিতে রয়েছে প্রাকৃতিক ইলেক্ট্রোলাইট যেমন: পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম। এগুলো শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় রাখে এবং ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করে। গরমে ঘাম বা ডায়রিয়ার পরে এটি খুব উপকারী।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক: ডাবের পানি উচ্চ পটাশিয়াম সমৃদ্ধ, যা রক্তনালিকে প্রসারিত করে এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত পান করলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে: কম ক্যালরি ও চর্বিমুক্ত হওয়ায় এটি ডায়েটিংয়ে থাকা ব্যক্তিদের জন্য আদর্শ পানীয়। এটি দীর্ঘক্ষণ পেট ভরাট রাখতে সাহায্য করে এবং অপ্রয়োজনীয় খাওয়ার প্রবণতা কমায়।
হজমশক্তি বাড়ায়: ডাবের পানিতে থাকা প্রাকৃতিক এনজাইম হজমে সহায়তা করে। এটি পেট ঠান্ডা রাখে, গ্যাস, অ্যাসিডিটি ও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে।
ত্বক ও চুলের জন্য উপকারি: ডাবের পানি শরীরকে ভেতর থেকে আর্দ্র রাখে, যা ত্বককে সতেজ ও উজ্জ্বল রাখে। মুখে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা আনে এবং ব্রণের সমস্যাও কমায়। চুল পড়া রোধেও পরোক্ষভাবে সহায়তা করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক: ডাবের পানিতে স্বাভাবিকভাবেই কম চিনি থাকে এবং গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। এটি ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের এটি সেবনের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
কিডনির জন্য ভালো: ডাবের পানি মূত্রনালির কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং বিষাক্ত উপাদান শরীর থেকে বের করে দেয়। এটি কিডনির পাথর গঠনের ঝুঁকি কমাতে পারে।
ব্যায়ামের পর শক্তি জোগায়: একটি প্রাকৃতিক এনার্জি ড্রিংকের মতো কাজ করে। যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন বা ঘামেন, তাদের জন্য এটি খুব উপকারি।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ: ডাবের পানিতে অল্প পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা কোষের ক্ষতি রোধ করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
গর্ভাবস্থায় ডাবের পানির উপকারিতা
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ডাবের জলে প্রচুর পরিমাণে ক্লোরাইড, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, রাইবোফ্লাভিন এবং ভিটামিন সি রয়েছে। রয়েছে উপকারী প্রোটিনও। যা গর্ভবতীদের জন্য ভীষণ উপকারি। বিশেষ করে ফার্স্ট ট্রাইমেস্টারে ডাবের জল দুর্বলতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডি-হাইড্রেশন থেকে রক্ষা করে।
যদিও ডাবের পানি স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর একটি প্রাকৃতিক পানীয়, তবে অতিরিক্ত সেবনে কিছু অপকারিতা দেখা দিতে পারে।
ডাবের পানির অপকারিতা:
অতিরিক্ত পটাশিয়াম শরীরের ক্ষতি করতে পারে: ডাবের পানিতে পটাশিয়াম থাকে প্রচুর পরিমাণে। যারা কিডনি রোগে ভুগছেন বা রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি থাকে, তাদের জন্য এটি ক্ষতিকর হতে পারে। অতিরিক্ত পটাশিয়াম হৃদস্পন্দনে সমস্যা, দুর্বলতা বা বমির অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অতিরিক্ত সেবন ঝুঁকিপূর্ণ: যদিও এতে প্রাকৃতিক চিনি থাকে, তবু অতিরিক্ত ডাবের পানি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বাড়তে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিয়মিত ও অধিকমাত্রায় খাওয়া উচিত নয়।
অতিরিক্ত ক্যালরি যোগ হতে পারে ওজন বাড়াতে: প্রাকৃতিক হলেও ডাবের পানিতে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা থাকে, যা অতিরিক্ত সেবনে ক্যালরি যোগ করে। যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছেন, তাদের হিসেব করে খাওয়া উচিত।
গর্ভাবস্থায় মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া এড়ানো উচিত: যদিও ডাবের পানি গর্ভবতী নারীদের জন্য সাধারণত নিরাপদ, তবে অতিরিক্ত খেলে শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য বিঘ্নিত হতে পারে, যা গর্ভাবস্থায় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
ঠান্ডা লাগা বা সর্দি-কাশির ঝুঁকি: ডাবের পানি ঠান্ডা প্রকৃতির। বেশি খেলে শরীর ঠান্ডা হয়ে সর্দি, কাশি বা গলা ব্যথা হতে পারে, বিশেষত শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে।
অতিরিক্ত খেলে ডায়রিয়া হতে পারে: ডাবের পানি অতিরিক্ত হজমে সহায়ক হলেও মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া হলে হালকা লুজ মোশন বা ডায়রিয়া হতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :