মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


আবদুল লতিফ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৫, ০১:১৮ এএম

শারদীয় ভূত

আবদুল লতিফ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৫, ০১:১৮ এএম

শারদীয় ভূত

দুর্গাপূজার ছুটিতে প্রতি বছরই আবির গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যায়। গ্রামে আবিরের ছোট চাচার পরিবারের সঙ্গে থাকে দাদা-দাদি। চাচাতো ভাই জাবির ও চাচাতো বোন তুবা যেন সবসময়ই আবিরের অপেক্ষায় থাকে। ক্যালেন্ডার ধরে ধরে আবিরকে ফোন করে মনে করিয়ে দেয় জাবির ও তুবা। মনে করিয়ে দেয় শরতে গ্রামের রূপমাধুরীর কথা। মাঝে মাঝে বিলে-ঝিলে তারার মতো ফুটে থাকা শাপলা ফুলের ছবি পাঠায় আবিরকে।

এবার পূজার ছুটির শুরুতেই আবিরের বাবা-মা আবিরকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে আসে। আবির এবং আবিরের মাকে বাড়িতে রেখে শহরে ফিরে যান বাবা। আবির এবার পূজার পুরো ছুটি গ্রামেই কাটাবে। ছুটি শেষে তার বাবা এসে নিয়ে যাবেন। আবির ও জাবির দুজনেই অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। এবার গ্রামে আসার প্রথম কয়েকদিনে আবির এবং তুবাকে সাঁতার শিখিয়ে দেয় জাবির। কারণ তার পরিকল্পনা হলো সবাই মিলে বিলে নৌকায় ঘোরাফেরা করবে।

একদিন বিকেলে আবির, তুবা, জাবির একটা ডিঙি নৌকা নিয়ে বের হয় বিলে শাপলা তোলার জন্য। জাবির নৌকা চালায আর আবির ও তুবা টেনে টেনে শাপলা তুলতে থাকে। শরতের নীল আকাশে ভেসে বেড়ায় সাদা মেঘের ভেলা। বিলের ধারে ফুটে থাকা সাদা সাদা কাশফুল যেন আকাশ থেকে নেমে আসা পেঁজা তুলো মেঘ।

জাবির ধান খেতের পাশ দিয়ে সবুজ কচি পাতার গা ঘেঁষে ধীরে ধীরে চালায় নাও। কখনো সোনা ব্যাঙ লাফিয়ে ওঠে নায়ে, কখনো চিংড়ি লাফায় শাপলা শালুকের পাতায়। কিছু ফড়িং সামনে উড়ে উড়ে যেন পথ দেখিয়ে নিয়ে চলেছে আর কিছু ফড়িং পেছন থেকে অনুস্মরণ করছে। নাও বাইতে বাইতে জাবির বলে, জানিস আবির ভাদ্র-আশ্বিন এ দুমাস শরৎকাল। আর শরৎকাল জুড়ে আমাদের বাড়িতে রাতে চলে শারদীয় ভূতের তা-ব। আবির উৎসাহ ভরে শোনে আর জিজ্ঞেস করে তা কি সত্যিই? জাবির বলে আজ রাতেই দেখিস তাহলে।

আবির বাড়িতে এলে সাধারণত পুকুর পাড়ের ঘরটাতেই থাকে। দক্ষিণের জানালা খুলে দিলে পুকুরের টলমল জলে শরতের স্নিগ্ধ কোমল জ্যোৎস্নার আলো মন কাড়ে। হাওয়ায় ভেসে আসে শিউলি, বকুল, দোলনচাঁপা ফুলের ঘ্রাণ।

রাতে দুজন পুকুর পাড়ের ঘরে ঘুমাতে যায়। জাবির ভুলে গেলেও আবির কিন্তু ভূতের কথা ভুলেনি। দুজনেই গল্প গুজবে মেতে উঠে। কিন্তু আবিরের খুব ইচ্ছে ভূত দেখার। যদিও জাবিরের কথায় পাত্তা না দেওয়ার ভান করেছিল। মনে মনে ঠিকই ভূতের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। গল্প করতে করতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ে দুজন।  ঠিক মাঝ রাত। চারদিকে সুনশান নীরবতা। হঠাৎ আবিরের ঘুম ভেঙে যায় পুকুরে কারো ঝাঁপিয়ে পড়ার শব্দে। প্রথম মনে করে ঘুমের ঘোরে এমন হচ্ছে। কিন্তু আবারও কেউ লাফিয়ে পড়ে পুকুরে। মাছের লাফালাফি আবির চেনে। তাহলে কিসের শব্দ! সত্যি সত্যিই কি ভূতপ্রেত! কিছুটা ভয় কাজ করে মনে। ঠিক তখনই ধুম করে চালের ওপর এসে লাফিয়ে পড়ে একটা। গড়িয়ে গড়িয়ে গিয়ে পড়ে পুকুরের জলে। এবার সত্যি সত্যিই আবির ভয়ে কাঁপতে শুরু করে। জাবিরকে জড়িয়ে ধরে শুকনো গলায় সে ডাকে। ফিসফিস করে জাবির বলে চুপচাপ ঘুমিয়ে থাক, কোনো আওয়াজ করিস না। এনারা রাগ করবে। এনারা রেগে গেলে বিপদ আছে। আবির বালিশে মুখ গুঁজে নিজেকে সামলানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে। কখন যে আবার ঘুমিয়ে পড়ে দুজন।

খুব ভোরে দাদাভাই দরজায় কড়া নাড়ে আর ডাকে আবির, জাবির তারাতাড়ি ওঠে আয় তাল কুড়াতে যাব। জাবিরের পেছন পেছন আবিরও ঘুম ঘুম চোখে গিয়ে দরজা খুলে ছোটে দাদাভাইয়ের সঙ্গে।

গিয়ে দেখে কিছু তাল পড়ে আছে ঘরের পাশের তাল গাছের গোড়ায় এবং পুকুরের পানিতেও ভাসছে বেশকিছু তাল। দাদাভাই বলতে থাকে- আবিরের ভাগ্য ভালো আজ মাঝ রাত থেকেই তাল পড়তে শুরু করে। নিশ্চয়ই অনেক তাল পড়েছে।

আবিরের আর বুঝতে বাকি নাই যে মধ্য রাতে শারদীয় ভূতের লাফালাফি শরৎকালের তাল পড়ারই শব্দ।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!