ক্ষুদ্র জীবের বিশাল ভূমিকা উপকারী যেমন আছে, তেমনি রয়েছে ক্ষতির দিকও।ব্যাকটেরিয়া হলো এক প্রকার অতিক্ষুদ্র এককোষী জীব, যা আমাদের চোখে দেখা যায় না। সাধারণভাবে মানুষ ব্যাকটেরিয়াকে ক্ষতিকর জীবাণু মনে করলেও বাস্তবে এর অনেক উপকারিতাও রয়েছে। প্রকৃতিতে ভারসাম্য রক্ষা, মানবদেহের স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প সবকিছুতেই ব্যাকটেরিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তবে কিছু ব্যাকটেরিয়া বিভিন্ন রোগেরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ব্যাকটেরিয়ার উপকারিতা
হজমে সহায়ক
মানবদেহের অন্ত্রে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়া হজম প্রক্রিয়া সহজ করে এবং পুষ্টি শোষণে সাহায্য করে।
খাদ্য উৎপাদনে ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা
দই, ছানা, পনির, আচার তৈরি, ভিনেগার বা অ্যালকোহল প্রস্তুতিতে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া ব্যবহৃত হয়।
কৃষিক্ষেত্রে ভূমিকা
মাটির মধ্যে থাকা নাইট্রোজেন-স্থিরকারী ব্যাকটেরিয়া উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে এবং মাটির উর্বরতা বাড়ায়।
ওষুধ উৎপাদনে সহায়ক
এন্টিবায়োটিক (যেমন- পেনিসিলিন), ভ্যাকসিন এবং ইনসুলিন উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের ব্যাকটেরিয়া ব্যবহৃত হয়।
পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখে
ডিকম্পোজার বা পচনশীল ব্যাকটেরিয়া মৃত প্রাণী ও উদ্ভিদের দেহ পচিয়ে মাটিতে ফিরিয়ে দেয়, যা পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে।
বায়োগ্যাস উৎপাদনে সাহায্য করে
বর্জ্য পচানোর মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া বায়োগ্যাস তৈরি করে, যা বিকল্প জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
ব্যাকটেরিয়ার অপকারিতা
রোগের কারণ
কিছু ব্যাকটেরিয়া মানবদেহে প্রবেশ করে ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড, যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া, প্লেগসহ নানা রোগ সৃষ্টি করে।
খাদ্যদ্রব্য নষ্ট করে
ব্যাকটেরিয়ার কারণে খাবার দ্রুত নষ্ট হয় বা দূষিত হয়, যা খেলে পেটের অসুখ হতে পারে।
দাঁতের ক্ষতি
দাঁতের মধ্যে থাকা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দাঁতের ক্ষয়, ক্যাভিটি এবং মাড়ির রোগ সৃষ্টি করে।
ক্ষতিকর বিষ উৎপাদন
কিছু ব্যাকটেরিয়া খাবারে বিষাক্ত পদার্থ উৎপন্ন করে, যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। যেমন- খাবারে সালমোনেলা বা ক্লস্ট্রিডিয়াম ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ।
ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে সতর্কতা
ভালোভাবে হাত ধুয়ে খাবার গ্রহণ করা উচিত।
রান্না ও খাবার ভালোভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।
খাওয়ার আগে ও পরে হাত ধুয়ে নেওয়া জরুরি।
দেহে সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার এড়ানো উচিত, কারণ এতে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া তৈরি হতে পারে।
ব্যাকটেরিয়া যেমন মানবজীবনের জন্য বিপদের কারণ, তেমনি এটি প্রকৃতি ও মানবদেহের জন্য অনেক উপকারও বয়ে আনে। তাই ব্যাকটেরিয়াকে শুধু ক্ষতিকর বলে মনে না করে এর উপকারী দিকও অনুধাবন করা জরুরি। সঠিক নিয়ন্ত্রণ ও সচেতন ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়ার ক্ষতিকর প্রভাব এড়িয়ে এর উপকারিতা গ্রহণ করা সম্ভব।