টয়লেট অনেকের কাছে কয়েক মিনিটের শান্তি এবং একাকীত্বের স্থান। আবার আজকাল এই টয়লেটই স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিশেষ করে, টয়লেটে বসে দীর্ঘ সময় ধরে স্মার্টফোনে স্ক্রলিং করার অভ্যাস অর্শ্বরোগ (হেমোরয়েড) বৃদ্ধি করতে পারে।
বাথরুমে দীর্ঘ সময় বসে থাকার ফলে মলদ্বারের শিরা বা অর্শ্ব ফুলে যায় এবং বড় হতে পারে। ফলে চুলকানি, অস্বস্তি, ব্যথা ও রক্তপাতের মতো সমস্যা দেখা দেয়। সম্প্রতি প্রকাশিত পিএলওএস ওয়ান-এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা টয়লেটে ফোন ব্যবহার করেন, তাদের অর্শের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
গবেষণার সিনিয়র লেখক এবং গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট ও বোস্টনের বেথ ইসরায়েল ডিকনেস মেডিকেল সেন্টারের অন্ত্র-মস্তিষ্ক গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. ত্রিশা পাসরিচা বলেন, ‘ফোনে স্ক্রলিং মানুষের স্বাস্থ্যের সঙ্গে তালগোল পাকিয়ে দিচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যালগরিদম আমাদের বিভ্রান্ত করে। ফলে টয়লেটে অনেক বেশি সময় কেটে যাচ্ছে।’
গবেষণায় ১২৫ জন প্রাপ্তবয়স্ককে কোলনোস্কোপি করতে বলা হয় এবং তাদের টয়লেট অভ্যাস, ফোন ব্যবহারের ধরন, ফাইবার গ্রহণ এবং ব্যায়ামের অভ্যাস সম্পর্কে তথ্য নেওয়া হয়। ফলাফলে দেখা যায়, ৬৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী নিয়মিত টয়লেটে ফোন ব্যবহার করেন। ফোন ব্যবহারকারীরা টয়লেটে গড়ে ৫ মিনিটের বেশি সময় কাটান, যেখানে ফোন ব্যবহার না করা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে মাত্র ৭ শতাংশ এই সময় ধরে থাকেন। টয়লেটে ফোন ব্যবহার অর্শের ঝুঁকি ৪৬ শতাংশ বৃদ্ধি করে। বাথরুমে ফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৫৪ শতাংশই সংবাদ পড়েন বা ৪৪ শতাংশ সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করেন।
টয়লেটে ফোন ব্যবহার করলে শরীরের ভঙ্গি নষ্ট হয়। নিউ জার্সির হলি নেম মেডিকেল সেন্টার-এর কোলোরেক্টাল সার্জন ডা. হিমা ঝন্তা বলেন, ‘ফোনের দিকে তাকালে মানুষ কুঁজো হয়ে যায়। ফলে মলদ্বার এবং কোলনের বাঁক খারাপভাবে স্থির হয়, যা মসৃণ মলত্যাগকে বাধাগ্রস্ত করে।’
ডা. পাসরিচা বলেন, ‘খোলা টয়লেট বাটিতে বসার সময় পেলভিক ফ্লোরের সাপোর্ট কমে যায়। দীর্ঘ সময় বসে থাকা এবং ভুল ভঙ্গি অর্শের ঝুঁকি বাড়ায়।’
গবেষণায় মূলত ৪৫ বছর বা তার বেশি বয়সি প্রাপ্তবয়স্করা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তবে পাসরিচা বলেন, ‘ফলাফল তরুণদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কারণ তরুণরা ফোনের সঙ্গে বেশি সংযুক্ত এবং বাথরুমে দীর্ঘ সময় বসে থাকে।’
নিউ জার্সির অ্যাটলান্টিক কোস্ট গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি অ্যাসোসিয়েটস-এর ডা. সন্ধ্যা শুক্লা বলেন, তিনি তরুণ রোগীদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অর্শের প্রভাব লক্ষ্য করছেন। এ ছাড়া কম ফাইবার গ্রহণ এবং স্থূলতা আরও ঝুঁকি বাড়ায়।
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, টয়লেটে ফোন না নিয়ে যাওয়া। প্রতিটি মলত্যাগে ৩-৫ মিনিটের বেশি সময় না কাটানো। স্কোয়াটিং পজিশনে বসে মলত্যাগ করা, যা মলদ্বারের চাপ কমায় এবং টাইমার ব্যবহার করে টয়লেট সময় সীমিত রাখা।
ডা. ঝন্তা উল্লেখ করেন, ‘জীবনে অনেক কিছু ধীরে করতে শিখি, কিন্তু টয়লেটে নয়। ফোন নিয়ে বাথরুমে দীর্ঘ সময় বসে থাকা শুধু অশান্তিকর নয়, স্বাস্থ্যঝুঁকিও তৈরি করে।’
টয়লেট এখন শুধু বিশ্রামের স্থান নয়। স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার এবং দীর্ঘ সময় বসে থাকা অর্শ্বরোগসহ হজম সমস্যা বাড়াচ্ছে। তাই স্বাস্থ্যের জন্য টয়লেটে ফোন এড়ানো ও সময় সীমিত রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন