ক্যামেরা এবং স্ক্যানার ও প্রিন্টারের মতো কম্পিউটার ডিভাইসের জন্য বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় নাম ‘ক্যানন’। তবে বর্তমানে মিরর লেস ক্যামেরা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মতো ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজির কারণে বাজারে ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে এই জাপানি ব্র্যান্ডটিকে।এজন্য প্রতিপক্ষ কোম্পানিগুলোকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা দিতে এবার নিজেদের প্রডাক্ট এবং বিজনেস অপারেশন ঢেলে সাজাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। তারই অংশ হিসেবে বাংলাদেশের বাজার নিয়ে নতুন করে ভাবছে ক্যানন। সম্প্রতি ক্যানন সিঙ্গাপুর এবং ক্যানন এশিয়ার শীর্ষ পর্যায়ের তিন কর্মকর্তার সাথে বাংলাদেশ ঘুরে গেলেন ক্যাননের মূল পরিচালনা পর্ষদের নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ক্যানন মার্কেটিং এশিয়া ও ক্যানন সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট তোশিউকি ইশিই। গত বৃহস্পতিবার ইনফোটেক এর সাথে এক সাক্ষাৎকারে অংশ নেন তিনি। আর সাক্ষাৎকারটি নেন ইনফোটেক ইনচার্জ শাওন সোলায়মান।
বাংলাদেশের বাজারকে কীভাবে মূল্যায়ন করে ক্যানন?
বাংলাদেশ ক্যাননের জন্য সবসময় দারুণ এক বাজার। এখানকার ক্যামেরা এবং কম্পিউটার সংশ্লিষ্ট ডিভাইসের বাজারে ক্যাননের জনপ্রিয়তা রয়েছে। তবে ১৯৩৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানির এখন একটি ‘রিফ্রেশ’ দরকার। আর সেটি বাংলাদেশের বাজারেও করতে চাই। এই বাজার নিয়ে নতুন করে ভাবছে ক্যানন। দীর্ঘদিন বাংলাদেশে ক্যাননের অনুমোদিত পার্টনার ‘জেএএন অ্যাসোসিয়েটস’। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশে ক্যাননের কার্যক্রম নতুন করে সাজাচ্ছি। ইতোমধ্যে ক্যাননের ডিলারসহ অন্যান্য অংশীজনদের সঙ্গে বসেছি। গতানুগতিক ক্যানন হয়ে আর থাকতে চাইছি না।
‘রিফ্রেশ’ করার পরিকল্পনা কী আপনার?
তিনটি ধাপে এই কাজ করতে চাই। প্রথমত, ক্যাননের ‘ব্র্যান্ড ইমেজ’ আবার তৈরি করতে হবে। দ্বিতীয়ত, গ্রাহকের কাছে যেতে হবে। তাদের কথা শুনতে হবে। আমাদের কাছে তাদের প্রত্যাশা কী, সেটা জানতে হবে। বাজার পরিদর্শনে যেতে হবে। তারই অংশ হিসেবে আমরা চারজন এবার বাংলাদেশে এসেছি।
বাংলাদেশের বাজারে ভালো করতে হলে, জেএনএন অ্যাসোসিয়েটসকে সাহায্য করার জন্য কী কী করতে হবে, সেগুলো শিখতেই এসেছি। আর তৃতীয়ত, ব্যবসার নতুন ক্ষেত্র উন্মোচন করতে হবে। ক্যাননের পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্টরা এই কাজটা করতেন না। তারা নির্দিষ্ট প্রোডাক্ট লাইন আপ নিয়েই থাকতেন, ব্যবসার খুব বেশি পরিধি নিয়ে ভাবতেন না। কিন্তু আমি এগুলো পরোয়া করি না। ক্যাননের দীর্ঘ ইতিহাস আছে ক্যামেরা, প্রিন্টার্স নিয়ে। কিন্তু আমাদের আরও অনেক ধরনের
পণ্য রয়েছে যেমন সেমিকন্ডাক্টর ইকুইপমেন্ট, বিজনেস সলিউশন সফটওয়্যার; যেগুলোর বিষয়ে অনেকেই জানে না। তাই আমাদের একটি পরিবর্তন দরকার। ক্যানন শুধু ক্যামেরা বা প্রিন্টার কোম্পানি না, এটাই সবাইকে দেখাতে হবে।
ক্যামেরার প্রসঙ্গে আসি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কনটেন্ট ক্রিয়েশনের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মিরর লেস ক্যামেরার ব্যবহার বেড়েছে। এ বিষয়ে ক্যানন অনেক পিছিয়ে রয়েছে, যেখানে সনির মতো ব্র্যান্ড বাজারে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এ বিষয়ে ক্যাননের কৌশল কী হবে?
ক্যামেরা বিশ্ববাজারে ক্যানন ৫০ শতাংশের বেশি বাজার দখলে রেখে নেতৃত্ব দিচ্ছে। লেন্স, সেন্সর এবং প্রসেসরের জন্যও ক্যানন ক্যামেরা বিশ্বে সেরা। ইমেজিং এর মূল ভিত্তি হচ্ছে এই তিনটি বিষয়।ডিএসএলআর (ডিজিটাল সিঙ্গেল লেন্স রিফ্লেক্ট) ক্যামেরার বাইরে স্মার্টফোন এবং ইলেকট্রিক গাড়ির ক্যামেরার জন্য লেন্স, সেন্সর এবং প্রসেসর দিচ্ছে ক্যানন। তবে এটা ঠিক যে, মিরর লেস ক্যামেরার বাজারে পিছিয়ে আছি। মিরর লেস ক্যামেরার বাজারে দীর্ঘদিন যাবত সনি এগিয়ে আছে। তাদের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্যও, নতুন করে মিরর লেস ক্যামেরার বাজার নিয়ে কাজ করছে ক্যানন।
বাংলাদেশে ক্যাননের কোন মার্কেট প্রমোশন, পৃষ্ঠপোষকতা দেখা যায় না। এটা কেন?
এজন্যই আমরা এখানে এসেছি। বলতে খারাপ লাগছে কিন্তু বিগত কয়েক বছর বাংলাদেশে ক্যাননের বিক্রি নিম্নমুখী; বিশেষ করে ক্যামেরা। কিন্তু এটা কেন, কীভাবে হলো, কী কারণে হলো? এগুলো জানতেই এখানে এসেছি। জেএএন অ্যাসসিয়েটস এবং কাফির (জেএএন এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল্লাহ এইচ কাফি) সঙ্গে আলোচনা করছি এ বিষয়ে। শুরুতেই ব্র্যান্ডিং এর কথা বলেছি, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের মানুষের কাছে ক্যাননের ব্র্যান্ড ইমেজ সরবরাহ করাই আমার অন্যতম উদ্দেশ্য এখন। শুধু পণ্য নয় বরং সেবা, প্রযুক্তিগত সমাধান এবং সিএসআর (করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা) এর মতো বিষয়ে কাজ করতে হবে।
জেএএন অ্যাসোসিয়েটসের তুলনায় অন্যরা কম দামে ক্যাননের পণ্য বিক্রি করছে। অনেকক্ষেত্রেই রি-ফারবিশড পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। প্রযুক্তি সম্পর্কে খুব বেশি ধারণা না থাকায় অনেকে সেগুলো কিনছেন। এ বিষয়ে আপনাদের কী পদক্ষেপ থাকবে?
এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। উচ্চ আমদানি করের কারণে অফিসিয়াল মাধ্যমে আসা পণ্যের দাম অনেক বেশি কিন্তু অন্যান্য মাধ্যমে বা গ্রে-চ্যানেলে আনা পণ্যের দাম কম। এটা আমাদের জন্যও অনেক বড় মাথাব্যথা। এজন্য আমরা বাংলাদেশ সরকারেরও সহায়তা চাই। ক্যানন ক্রেতাবান্ধব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শুধু টাকা ছাপানোই আমাদের উদ্দেশ্য না।
এআই নিয়ে ক্যাননের পরিকল্পনা কী? বিশেষ করে ক্যামেরা থেকে শুরু করে এখন প্রায় সকল ডিভাইস এআই এর কারণে স্মার্ট ডিভাইসে পরিণত হচ্ছে। এআই এর এই আবির্ভাবকে ক্যানন কীভাবে দেখে?
এআই এর আবির্ভাব নিয়ে ক্যানন সচেতন রয়েছে। বুঝতে পারছি যে, ক্যাননের ব্যবহারকারীরা একটি ছবি তুলেই সেটিকে সামাজিক মাধমে প্রকাশের জন্য ‘রেডি’ অবস্থায় চান। ছবি তোলার সময় যদি এপারচারে সমস্যা হয়, আন্ডার-এক্সপোজার; ব্যবহারকারীরা সেটিকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঠিক অবস্থায় চান। এজন্য ক্যানন এআই জগতে প্রবেশ করছে। ক্যাননের কিছু ডিভাইসে এআই সংযুক্ত করা হয়েছে, তবে সেটা খুবই সামান্য। তবে ক্যাননকে এআই জগতে আরও বেশি করে অবশ্যই প্রবেশ করতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :