বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট সবচেয়ে বড় তথ্যভাণ্ডারে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে ইউটিউব অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম, যেখানে প্রতিদিন লাখ লাখ ভিডিও প্রকাশিত হয়।
কিন্তু এই জনপ্রিয়তার সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু চক্র ইউটিউবে কারসাজি করে তৈরি করছে ভুয়া টক শো। এসব শো সাধারণত মিথ্যা, অতিরঞ্জিত বা বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে সাজানো হয়, যার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে প্রতারণা করা হচ্ছে।
ভুয়া টকশো কীভাবে তৈরি হয়?
এই ভুয়া টকশোগুলো পরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হয়। সাধারণত এরা জনপ্রিয় কোনো বিষয়, ব্যক্তি বা ঘটনার ওপর ভিত্তি করে মিথ্যা গল্প বানায়। কিছু সাধারণ কৌশল হলো:
# অজানা বা কম পরিচিত ব্যক্তি নিয়ে বিতর্কিত আলোচনার নাটক সাজানো হয়।
# বিখ্যাত ব্যক্তিদের নাম বা ছবি ব্যবহার করে মিথ্যা অভিযোগ বা গুজব ছড়ানো হয়।
# ভিডিওতে ব্যবহার করা হয় চমকপ্রদ থাম্বনেইল, যাতে দর্শকের কৌতূহল বাড়ে।
# শোতে নাটকীয় সংলাপ, কান্না, চিৎকার ও উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করা হয় যেন তা বাস্তব মনে হয়।
# কিছু ভিডিওতে “লাইভ” বলে প্রচার করা হয়, অথচ তা আগে থেকে রেকর্ড করা হয় এবং সম্পাদনার মাধ্যমে সাজিয়ে উপস্থাপন করা হয়।
উদাহরণ ও প্রমাণ
সম্প্রতি একটি ইউটিউব চ্যানেল এক অভিনেত্রীর মৃত্যুর মিথ্যা খবর ছড়ায়, যেখানে একটি ভুয়া টকশোতে অভিনেত্রীর পরিবার ও সহকর্মীদের কণ্ঠ নকল করে ‘অভিযোগ’ উপস্থাপন করা হয়। পরে দেখা যায়, অভিনেত্রী জীবিত আছেন এবং ভিডিওটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। এ ছাড়া, কিছু চ্যানেল ভুয়া ডাক্তার বা গবেষকের নাম ব্যবহার করে মিথ্যা চিকিৎসা তথ্য ছড়িয়েছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব ভিডিওতে খুবই সূক্ষ্মভাবে ‘আসল’ মনে করানোর কৌশল প্রয়োগ করা হয় যাতে সাধারণ দর্শক বুঝতে না পারে যে এটি ভুয়া।
এর ফলে কী ক্ষতি হচ্ছে?
ভুয়া টকশোর কারণে সমাজে নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। যেমন:
# মানসিক বিভ্রান্তি: দর্শকরা মিথ্যা তথ্য বিশ্বাস করে মানসিকভাবে প্রভাবিত হন।
# গুজব ছড়ানো: এসব ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গুজব ছড়াতে সাহায্য করে।
# রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা: ভুয়া তথ্য ব্যবহার করে নেতিবাচক প্রচার চালিয়ে একটি পক্ষকে ছোট বা আক্রমণ করা হয়।
# আর্থিক প্রতারণা: ভুয়া চিকিৎসা পদ্ধতি বা পণ্যের প্রচারের মাধ্যমে মানুষ ঠকছে অর্থনৈতিকভাবে।
কেন এই ভিডিওগুলো তৈরি করা হয়?
এর মূল কারণ হলো অর্থ। ইউটিউব ভিডিওর মাধ্যমে আয় হয় বিজ্ঞাপন থেকে। যত বেশি মানুষ ভিডিও দেখে, তত বেশি আয় হয়। তাই দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এসব মিথ্যা ও উত্তেজনাপূর্ণ বিষয় ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়াও কিছু রাজনৈতিক বা গোষ্ঠীগত উদ্দেশ্য পূরণের জন্যও ভুয়া শো বানানো হয়ে থাকে।
প্রতিকার ও সচেতনতা
এই সমস্যার মোকাবিলায় কিছু করণীয়:
# তথ্য যাচাই করা: যেকোনো টকশো দেখার পর সেখানকার তথ্য যাচাই করা উচিত।
# বিশ্বস্ত উৎস অনুসরণ করা: ইউটিউবে বিশ্বস্ত, পরিচিত ও নির্ভরযোগ্য চ্যানেলগুলোর ভিডিও দেখা উচিত।
# রিপোর্ট করা: ভুয়া ভিডিও শনাক্ত করলে ইউটিউব কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট করা উচিত।
# মানুষকে সচেতন করা: পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের এই বিষয়ে সতর্ক করা জরুরি।
ইউটিউব যেমন শিক্ষা, বিনোদন ও তথ্যের একটি চমৎকার মাধ্যম, তেমনি এটি ভুলভাবে ব্যবহৃত হলে ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলতে পারে। ভুয়া টকশো তার একটি বড় উদাহরণ। তাই আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব- সতর্ক থাকা, সত্য যাচাই করা এবং এই ধরনের বিভ্রান্তিকর কন্টেন্টের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া।
তথ্যযুগে বেঁচে থাকতে হলে, সত্য-মিথ্যার পার্থক্য বুঝে চলাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।