তিব্বতের মালভূমিতে একটি বিশাল বাঁধ (সুপার ড্যাম) তৈরি করছে চীন। বাঁধটি নির্মিত হচ্ছে ইয়ারলুং সাংপো নদীর ওপর। এই ড্যাম শুধু চীনের বিদ্যুৎ উৎপাদনেই বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে না, এর পরিবেশগত, কূটনৈতিক এবং নিরাপত্তাগত প্রভাব পড়বে নিম্ন অববাহিকার দেশগুলোতেও, বিশেষ করে ভারত ও বাংলাদেশে।
চীনের ‘সুপার ড্যাম’ প্রযুক্তিগত বিস্ময় হতে পারে, কিন্তু এটি এক ভয়ংকর জল-ভূরাজনৈতিক অস্ত্রও বটে। বাংলাদেশকে এখনই প্রস্তুত হতে হবে—কূটনৈতিক, পরিবেশগত ও নিরাপত্তাগতসহ সব দিক থেকে।
চীনের এই সুপার ড্যাম প্রকল্পের উদ্দেশ্য কী?
বিদ্যুৎ উৎপাদন: দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে এবং কার্বন নির্গমন কমিয়ে জলবিদ্যুৎভিত্তিক শিল্পায়ন।
জল নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা: ব্রহ্মপুত্রের উৎস নিয়ন্ত্রণ করে চীন কৌশলগত সুবিধা পেতে চায়।
আন্তর্জাতিক চাপ মোকাবিলা: নিজস্ব জলসম্পদ ব্যবস্থাপনায় আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি অবজ্ঞা দেখিয়ে চীন তার কর্তৃত্ববাদী মডেল প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।
বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকি কোথায়?
নদীর পানিপ্রবাহ কমে যেতে পারে
ব্রহ্মপুত্র বাংলাদেশে প্রবেশের আগে ভারতের মাধ্যমে আসে। উজান ড্যাম থেকে যদি পানির ধারা কৃত্রিমভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়, তাহলে বাংলাদেশে শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ মারাত্মকভাবে কমে যেতে পারে। কৃষি, নদীকেন্দ্রিক জীবনধারা এবং পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
প্লাবন ও হঠাৎ বন্যার ঝুঁকি
বৃষ্টি বেশি হলে চীন অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দিলে ভাটি অঞ্চলে—বিশেষ করে আসাম, মেঘালয় ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে হঠাৎ করে বন্যা সৃষ্টি হতে পারে। ২০১৭ সালে চীনের হঠাৎ পানি ছাড়ার ঘটনায় ভারতের অরুণাচলে হড়কা বান হয়েছিল। একই ঘটনা বাংলাদেশেও ঘটতে পারে।
পলিমাটির গতিপথে পরিবর্তন
ড্যামের ফলে নদীর স্বাভাবিক স্রোত বাধাগ্রস্ত হবে, যা পলিমাটির গতি ও চর গঠনের ওপর প্রভাব ফেলবে। বাংলাদেশের চরাঞ্চল ও উপকূলীয় এলাকায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
কূটনৈতিক চাপ বাড়বে ভারতের মাধ্যমে
ভারতও এই প্রকল্প নিয়ে উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশ যদি স্বাধীনভাবে এই ইস্যুতে চীনের সঙ্গে আলাপ করতে না পারে, তবে ভারতের কূটনৈতিক অবস্থানের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে পারে। যা বাংলাদেশের স্বার্থের সঙ্গে সবসময় সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।