পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের নক্ষত্রমণ্ডল আলফা সেন্টরিতে একটি বিশাল আকারের গ্যাস গ্রহ থাকার জোরালো প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। প্রায় সাড়ে চার আলোকবর্ষ দূরের এ গ্রহটি প্রাণহীন হলেও, এর উপগ্রহগুলোতে জীবন থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না গবেষকেরা।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, শক্তিশালী জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা এই গ্রহের অস্তিত্বের ইঙ্গিত পেয়েছেন। ২০২৪ সালের আগস্টে প্রথমবার গ্রহটি শনাক্ত করা হলেও পরে এটি নজর এড়ায়। তবে পুনরায় পর্যবেক্ষণে নেমেছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাকাশ যন্ত্রবিদ্যার সহযোগী অধ্যাপক ড. কার্লি হাউইট বলেন, "চার আলোকবর্ষ দূরত্বটি মহাজাগতিক হিসেবে খুব বেশি নয়। এটি আমাদের 'কসমিক নেবারহুড'-এ পড়ে। সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক দিক হলো, এটি সূর্যের মতো একটি নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরছে।"
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, গ্রহটি আমাদের সৌরজগতের বৃহস্পতি বা শনির মতোই এক ধরনের গ্যাসে পূর্ণ দৈত্যাকার গ্রহ। সরাসরি প্রাণের উপযোগী না হলেও, এর চারপাশে থাকা উপগ্রহগুলোতে প্রাণের উপযুক্ত পরিবেশ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যেমনটা সৌরজগতের ইউরোপা বা এনসেলাডাসের মতো বরফে ঘেরা উপগ্রহে দেখা যায়। বর্তমানে নাসার ‘ইউরোপা ক্লিপার’ ও ‘জুস মিশন’ এ ধরনের উপগ্রহে প্রাণের সম্ভাবনা খুঁজছে।
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ সরাসরি ইমেজিংয়ের মাধ্যমে এ ধরনের দূরবর্তী গ্রহ চিহ্নিত করে, যা অনেকটা ‘মহাকাশের ছবি তোলা’র মতো। তবে আলফা সেন্টরির নক্ষত্রগুলো খুব উজ্জ্বল ও কাছাকাছি থাকায় এবং আকাশে দ্রুত গতিতে চলায় এগুলো পর্যবেক্ষণ করা খুবই চ্যালেঞ্জিং।
গ্রহটি প্রথমবার শনাক্ত হওয়ার পর আর ধরা না পড়ার পেছনে কারণ হতে পারে, তখন এটি নক্ষত্রের আড়ালে ছিল অথবা এতটাই কাছাকাছি ছিল যে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। ড. হাউইট বলেন, ‘এ ধরনের গবেষণায় কখনো কখনো ভাগ্যকেও পাশে চাই।’
২০২৭ সালে যাত্রা শুরু করতে যাওয়া নাসার গ্রেস রোমান স্পেস টেলিস্কোপ দিয়ে এই গ্রহের বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানা যাবে বলে বিজ্ঞানীরা আশাবাদী। একই সঙ্গে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের ভবিষ্যৎ স্পেকট্রাল বিশ্লেষণে গ্রহটির রাসায়নিক গঠন ও এর উপগ্রহগুলোর বাসযোগ্যতা সম্পর্কেও স্পষ্ট ধারণা মিলতে পারে।
যদি এই আবিষ্কার নিশ্চিত হয়, তবে এটি হবে পৃথিবীর সবচেয়ে নিকটবর্তী দৈত্যাকার গ্যাস গ্রহ। এটি শুধু জ্যোতির্বিজ্ঞান নয়, মহাকাশে প্রাণের অনুসন্ধানে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :