আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তিতে এবার এলো হতাশার খবর। জেনারেটিভ এআই-তে বিশ্বব্যাপী ৩০ থেকে ৪০ বিলিয়ন ডলার কর্পোরেট বিনিয়োগ হয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই আশানুরূপ সুফল বয়ে আনতে পারেনি।
সম্প্রতি প্রকাশিত ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বিপুল অর্থ ঢালার পরও ৯৫ শতাংশ কোম্পানি জেনারেটিভ এআই থেকে কার্যত কোনো রিটার্ন পাচ্ছে না। মাত্র ৫ শতাংশ কোম্পানি এআই পাইলট প্রকল্প থেকে আর্থিক লাভ তুলতে পেরেছে।
বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো নানা সীমাবদ্ধতার কারণে লাভের ওপর কোনো পরিমাপযোগ্য প্রভাব দেখতে পাচ্ছে না। ফলে প্রশ্ন উঠছে, প্রযুক্তি খাতে এত বিনিয়োগ সত্ত্বেও কেন বাস্তব পরিবর্তন তেমন দৃশ্যমান নয়।
অনেক কোম্পানি ইতোমধ্যে ওপেনএআই-এর চ্যাটজিপিটি বা মাইক্রোসফটের কোপাইলট-এর মতো টুল ব্যবহার শুরু করেছে। প্রায় ৮০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান এই প্রযুক্তি অন্বেষণ করেছে বা পরীক্ষামূলকভাবে চালু করেছে। এর মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ জানিয়েছে, তারা স্থাপন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে।
তবে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এসব টুল মূলত কর্মীদের ব্যক্তিগত উৎপাদনশীলতা বাড়াচ্ছে। কিন্তু সেগুলো প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক আয় বাড়ানোর মতো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না।
এমআইটির গবেষকরা মনে করছেন, এআইকে প্রতিষ্ঠানিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে গেলে ভঙ্গুর কর্মপ্রবাহ, কর্মীদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাব এবং দৈনন্দিন কাজের সঙ্গে প্রযুক্তির অসঙ্গতি বড় অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেশিরভাগ জেনারেটিভ এআই সিস্টেম প্রতিক্রিয়া ধরে রাখতে পারে না, প্রেক্ষাপট বুঝে খাপ খাওয়াতে অক্ষম, আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উন্নতির প্রমাণও দেয় না। ফলে মানুষের মতো শেখা বা ভেবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর্যায়ে পৌঁছানো এআই-এর পক্ষে এখনো সম্ভব হয়নি।
এমনকি অনেকের আশঙ্কার বিপরীতে, এই প্রযুক্তি স্বল্পমেয়াদে ব্যাপক কর্মসংস্থান সংকট তৈরি করবে বলেও মনে করছে না এমআইটি। প্রতিবেদনে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, আগামী কয়েক বছরে জেনারেটিভ এআই-এর কারণে ব্যাপক হারে চাকরি হারানোর আশঙ্কা নেই। বরং প্রতিষ্ঠানগুলোতে এর প্রভাব দেখা যাবে অভ্যন্তরীণ পুনর্গঠনের বদলে বহিরাগত খরচ কমানোর কৌশল হিসেবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জেনারেটিভ এআই প্রকৃত অর্থে পরিবর্তন আনতে চাইলে প্রযুক্তির সক্ষমতার পাশাপাশি কর্মীদের অভিযোজন ক্ষমতা এবং প্রতিষ্ঠানের কাজের ধরনকে নতুনভাবে সাজানোর প্রয়োজন হবে। নইলে হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করেও ‘বিপ্লবী পরিবর্তনের’ যে স্বপ্ন আঁকা হয়েছিল, তা বাস্তব রূপ নিতে আরও সময় নেবে।
সূত্র: দ্য হিল
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন