বর্তমান ডিজিটাল যুগে ঘরে বসে অনলাইনে আয় এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা। বিশেষ করে ছাত্রছাত্রী, গৃহবধূ ও নতুন কর্মজীবী তরুণদের জন্য ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ এখন এক জনপ্রিয় কর্মপদ্ধতি। তবে অনেকেই জানেন না, গুগলের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেই মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত বৈধভাবে আয় করা সম্ভব।
চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক গুগলের কোন কোন মাধ্যমে ঘরে বসেই আয় করা যায়-
১. গুগল অ্যাডসেন্স- ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দিয়ে আয়
গুগল অ্যাডসেন্স হলো এমন একটি বিজ্ঞাপন পরিষেবা, যেখানে আপনি নিজের ব্লগ বা ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। যদি লেখালেখি পছন্দ করেন এবং নিয়মিত কনটেন্ট তৈরি করেন, তাহলে সহজেই অ্যাডসেন্স অনুমোদন পাওয়া যায়।
ওয়েবসাইটে যত বেশি ভিজিটর আসবে, বিজ্ঞাপনে ক্লিক বাড়বে- আয়ও তত বাড়বে। সঠিক এসইও ব্যবহার ও ট্রাফিক বাড়ানোর কৌশল জানলে মাসে ৩০ হাজার টাকারও বেশি আয় করা সম্ভব।
২. ইউটিউব- ভিডিও বানিয়ে নিয়মিত আয়
ভিডিও তৈরি করতে ভালো লাগলে ইউটিউব হতে পারে আপনার সবচেয়ে বড় আয়ের মাধ্যম। কুকিং, টিচ, মটিভেশন, এডুকেশনসহ যে বিষয়েই ভিডিও বানান না কেন অ্যাডসেন্স মনিটাইজেশনের মাধ্যমে টাকা আসে সরাসরি। চ্যানেলে এক হাজার সাবস্ক্রাইবার এবং চার হাজার ঘণ্টা ওয়াচটাইম পূলণ করলেই মনিটাইজেশন চালু হবে। এরপর মাসে ৩০ হাজার টাকা বা তারও বেশি আয় করা সম্ভব।
৩. গুগল ওপিনিয়ন রিওয়ার্ডস- ছোট সার্ভে, ছোট ইনকাম
এই অ্যাপে আপনি প্রতিদিন কিছু ছোট সারর্ভে পূরণ করে গুগল প্লে ক্রেডিট বা নগদ অর্থ পেতে পারেন। প্রতিটি সার্ভেতে সময় লাগে মাত্র ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট। দিনে ২০ থেকে ৩০ মিনিট সময় দিলেও এখান থেকে ভালো পার্ট-টাইম ইনকাম সম্ভব।
৪. ফ্রিল্যান্সিং- গুগল সার্চ করেই কাজ খুঁজুন
গুগল সার্চের মাধ্যমেই আপনি আপওয়ার্ক, ফিভার, ফ্রিল্যান্সিং বা পিপলপারহর- এর মতো সাইটে গিয়ে ফ্রিল্যান্সিং কাজ পেতে পারেন। কনটেন্ট রাইটিং, লোগো ডিজাইন, এসইও, সোস্যাল মিডিয়া ম্যানেজম্যান্ট কিংবা ডাটা এন্ট্রি- এসব কাজ করে অনেকে মাসে ৩০-৪০ হাজার টাকা আয় করছেন, প্রতিদিন মাত্র ২-৩ ঘণ্টা সময় দিয়ে।
৫. গুগল ড্রাইভ ও ওয়ার্কস্পচ- আউটসোর্সিং সার্ভিস দিন
গুগল ড্রাইভ ও ডকস ব্যবহার করে আপনি ছোট কোম্পানির জন্য ডেটা এন্ট্রি, রিপোর্ট তৈরি বা ফাইল ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস দিতে পারেন। রিমোট বা আউটসোর্সিং মডেলে অনেক প্রতিষ্ঠান এখন গুগল টুল ব্যবহার করে ঘরে বসেই কর্মী নিয়োগ দিচ্ছে।
৬. গুগল নিউজ ও ডিসকভার- কনটেন্ট তৈরি করেও আয়
নিউজ সাইট বা ব্লগ পরিচালনা করে গুগল ডিসকোভার থেকে অর্গানিক ট্রাফিক পাওয়া যায়। এসইও এবং গুণগত কনটেন্ট থাকলে অ্যাডসেন্স থেকেই মাসে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় সম্ভব।
৭. গুগল ম্যাপস লোকাল গাইড- তথ্য দিয়ে পুরস্কার
গুগল ম্যাপসে ছবি, রিভিউ ও লোকেশন আপডেট করে ‘লোকাল গাইড’ হিসেবে অবদান রাখলে গুগল আপনাকে পয়েন্ট ও রিওয়ার্ড দেয়। যদিও এটি সরাসরি অর্থ নয়, তবে ভবিষ্যতে গুগল পার্টনার প্রজেক্টে অংশ নেওয়ার সুযোগ তৈরি হতে পারে।
৮. গুগল কোর্স- ফ্রি ট্রেনিং নিয়ে অনলাইন ক্যারিয়ার
গ্রো উইথ গুগল, কোরসেরা বা গুগল ক্যারিয়ার সার্টিফিকেটের মাধ্যমে কোর্স করলে আপনার স্কিল যাচাইযোগ্য হবে। এর মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং ও রিমোর্ট জবের সুযোগও বাড়বে। অনেক কোর্স একেবারেই ফ্রি বা অল্প খরচে পাওয়া যায়।
গুগল এখন শুধুমাত্র সার্চ ইঞ্জিন নয়- এটি আয়, শিক্ষা ও উদ্যোক্তা হওয়ার এক বিশাল প্ল্যাটফর্ম। নিয়মিত সময় দিলে এবং দক্ষতা বাড়ালে, ঘরে বসেই মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা বৈধভাবে আয় করা এখন আর কঠিন কিছু নয়।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন