মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পেট্রোলিয়াম ও তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) রপ্তানিতে সহায়তার অভিযোগে ৫০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি ও জাহাজের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ওএফএসি জানিয়েছে, এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কিছু চালান বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা পৌঁছেছে।
ওএফএসি বলেছে, পদক্ষেপটি ইরানের নগদ অর্থ প্রবাহ কমানো এবং ওয়াশিংটনের সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর অর্থায়ন বন্ধ করার বৃহত্তর কৌশলের অংশ। মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য হলো ইরানের জ্বালানি রপ্তানি ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা। এটি ওয়াশিংটনের চলমান ‘সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক চাপ’ নীতির অংশ।’
নতুন তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক স্লোগাল এনার্জি ডিএমসিসি এবং মারকান হোয়াইট ট্রেডিং ক্রুড অয়েল অ্যাবরোড কোম্পানি এলএলসি, যাদের বিরুদ্ধে ২০২৪ সাল থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় ইরানি এলপিজি চালান পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে।
ওএফএসি জানায়, ২০২৫ সালের শুরুর দিকে পানামা পতাকাবাহী গ্যাস ডিওর জাহাজ বাংলাদেশে ১৭ হাজার টনেরও বেশি ইরানি এলপিজি সরবরাহ করে। এছাড়া ২০২৪ সালের শেষে কোমোরোস পতাকাবাহী আদা (আইএমও ৯০০৮১০৮; পূর্বে ক্যাপ্টেন নিকোলাস) নামের জাহাজও বাংলাদেশের কিছু ক্রেতার কাছে এলপিজি পৌঁছে দিয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক সি শিপ ম্যানেজমেন্ট এলএলসি-এর মালিকানাধীন এই জাহাজটিকে ‘অবরুদ্ধ সম্পদ’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
গত বছরের ১৩ অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে বিএলপিজি সোফিয়া জাহাজে এলপিজি খালাসের সময় ক্যাপ্টেন নিকোলাস-এ আগুন ধরে যায়। প্রায় ৩৪ হাজার টন এলপিজি বহনকারী জাহাজটি আইনি জটিলতার কারণে কয়েক মাস আটকে ছিল। দীর্ঘ আলোচনার পর চলতি বছরের ৫ সেপ্টেম্বর পুনরায় গ্যাস স্থানান্তরের অনুমতি দেওয়া হয়। ভেসেল-ট্র্যাকিং তথ্য অনুযায়ী, এটি এখনও চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙরিত।
ওএফএসি জানিয়েছে, নিষিদ্ধ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ইরান বিলিয়ন ডলারের পেট্রোলিয়াম ও এলপিজি রপ্তানি করছে, যা সরকারের রাজস্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি মার্কিন আর্থিক ব্যবস্থায় প্রবেশাধিকার হারাতে পারেন এবং মার্কিন নাগরিক ও সংস্থা তাদের সঙ্গে লেনদেন করতে পারবেন না।
নতুন তালিকাভুক্তদের মধ্যে চীনের দুটি প্রতিষ্ঠান- শানডং জিনচেং পেট্রোকেমিক্যাল গ্রুপ ও রিজাও শিহুয়া ক্রুড অয়েল টার্মিনাল- ও রয়েছে। অভিযোগ আছে, তারা ২০২৩ সাল থেকে ওয়াশিংটনের নিষিদ্ধ জাহাজ ব্যবহার করে ইরানি কোটি কোটি ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে।
ওএফএসি আরও জানিয়েছে, নিষিদ্ধ নেটওয়ার্কের জাহাজ যেমন ম্যাক্স স্টার, গ্যাস ভিশন, সি অপেরা, টিউলিপ- এশিয়ার বিভিন্ন দেশে শত শত মিলিয়ন ডলারের ইরানি জ্বালানি পরিবহন করেছে। এসব চালান বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, চীন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে পৌঁছেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পদক্ষেপ দক্ষিণ এশিয়ার জ্বালানি বাজারে প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলোর জন্য, যারা স্পট মার্কেট থেকে এলপিজি কিনে থাকে। যদিও কোনো বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান সরাসরি নিষেধাজ্ঞার আওতায় নেই, তথাপি দেশটিকে ওয়াশিংটনের সম্প্রসারিত নজরদারির আওতায় ধরা হচ্ছে।
ওএফএসি জানিয়েছে, এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য শাস্তি নয়, বরং ‘আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা’। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, নিষিদ্ধ নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত সরবরাহকারী থাকলে ছোট আমদানিকারকদের জন্য জ্বালানি সরবরাহ আরও জটিল হতে পারে।
গত বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ইরানের তেল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ১৬৬টি জাহাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। চলতি বছরে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল হওয়ায় দেশটির অর্থনীতি চাপে রয়েছে- মুদ্রাস্ফীতি, খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং রিয়ালের অবমূল্যায়ন তাতে অন্তর্ভুক্ত।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন